দূরদর্শনের চার কন্যা

দূরদর্শনের মাধ্যমেই আমরা প্রথম পেয়েছি টেলিভিশনের স্বাদ। আজ দূরদর্শনের চার কন্যা শাশ্বতী গুহঠাকুরতা, চৈতালি দাশগুপ্ত, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, মধুমন্তী মৈত্রর সঙ্গে কথা বললেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

র সঙ্গে কথা বললেন অংশুমান চক্রবর্তী

শাশ্বতী গুহঠাকুরতা

দূরদর্শনে শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

যখন আমরা দূরদর্শনে যাই, তখন খুব ছোট ছিলাম। ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম। আমাদের দেখে পরে অনেকেই টেলিভিশনে এসেছেন। তবে আমরা তো কাউকে দেখে আসিনি। এতে আমাদের খুব সুবিধাই হয়েছিল। দূরদর্শনে আমাদের কিছু গাইডলাইন দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো কী? তুমি যে-রকম সেরকম থাকবে। ঘোষণা একেবারেই রেডিওর মতো হবে না, নাটকের মতো বা অতিনাটকীয় হবে না। কোনও কিছু আরোপিত করা যাবে না। এর বেশি আমাদের কিছু শেখানো-পড়ানো হয়নি। আমাদের ভাষা একেবারেই রেডিওর মতো ছিল না। ‘এখন সংগীত পরিবেশন করবেন’ বলার বদলে আমরা বলতাম ‘এখন গান গেয়ে শোনাচ্ছেন’।

আরও পড়ুন-লড়ে শেষ আটে গেলেন সিন্ধুরা

এখনকার টেলিভিশন উপস্থাপক-উপস্থাপিকাদের কেমন লাগে?

অনেকটাই ভাল লাগে। কিছু কিছু ভাল লাগে না। খুব আর্টিফিসিয়াল মনে হয়। একেবারেই ন্যাচারাল লাগে না। এটা ঠিক— ভাষা, কথা বলার ধরন, অভিব্যক্তি সমানে বদলাতে থাকে। এই বদলে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এটা তো একটা কমিউনিকেশন। লক্ষ লক্ষ শ্রোতা বা দর্শক শুনছেন এবং দেখছেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই আমার কোনও কোনও উপস্থাপক-উপস্থাপিকার কথাবলা শুনে মনে হয়, যেন নিজের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। একাত্মতাবোধটা খুব একটা দেখি না। দূরদর্শন একটা ইন্টিমেট মিডিয়াম।

আরও পড়ুন-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে ব্যর্থ, গোয়ায় কংগ্রেসকে চাঁচাছোলা আক্রমণ ফালেরিওর

এর মাধ্যমে ঘরের ভেতরে পৌঁছে যাওয়া যায়। ফলে কমিউনিকেশনটাও ইন্টিমেট হতে হবে। আমার বাচনভঙ্গির মধ্যে, বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে, চোখেমুখের অভিব্যক্তির মধ্যে যেন সামনে বসে কথা বলার ইন্টিমেসি থাকে। এটা আমি মঞ্চ থেকে বলছি বা একজন অধ্যাপক ওপর থেকে বলছেন, ওইরকম নয়। উপস্থাপনার মধ্যে আন্তরিক ব্যাপারটা ফুটে উঠলে ভাল লাগে। সেটা এখন দেখি না, দেখতে পাই না। কারণ, কথা বলার মধ্যে এখন একটা অন্যরকম সুর দেখি। বাক্যের শেষটা কেমন যেন উঁচুতে তুলে দিয়ে বলার প্রবণতা। আমরা কিন্তু সামনাসামনি বসে কারও সঙ্গে ওইরকম ভাবে কথা বলি না।

আরও পড়ুন-ধোনির শহরে ফিরছে ক্রিকেট , ম্যাচে মজে সূর্য রোহিত

ঠিক যেভাবে আমরা সামনে বসে কথা বলি, টেলিভিশনে ওইরকম ভাবেই বলতে হবে, ঘোষণা করতে হবে। ইদানীং ওই ইন্টিমেসিটা যেন একটু কম দেখতে পাই। তাঁদের বলার মধ্যে যেন একটা বিষয় ফুটে ওঠে, আমি আলাদা আর আপনারা আলাদা। এর পাশাপাশি হিন্দির মতো বাংলা বা ইংরেজির মতো বাংলা বলার একটা প্রবণতাও দেখা যায়। কেউ কেউ গলা চড়িয়ে কথা বলেন। এইগুলো আমার ভাল লাগে না। তবে এখনকার উপস্থাপক-উপস্থাপিকাদের অনর্গল কথা বলে যাবার ক্ষমতা দেখে ভাল লাগে। কী স্মার্ট, কী ঝকঝকে সব ছেলেমেয়ে। অনেকেই খুব ভাল।

নতুন অবস্থায় রাস্তায় বেরোলে লোকজন চিনে ফেলত। কীরকম লাগত?

তখন খুব ছোট ছিলাম। কুড়ি পেরিয়েছি। ফলে খুব ভাল লাগতো। তবে দূরে না থেকে আমরা সবার সঙ্গে মিশে যেতাম। এর মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ হত। ‘আমি একটু আলাদা’সুলভ আচরণ কোনওদিন করিনি, আজও করি না। চিরকাল সবার সঙ্গে হেসে-খেলে কথা বলেছি, কাছে ডেকে নিয়েছি এই বলে ‘আয় বাবা কী বলবি বল!’ আমি দীর্ঘদিন দূরদর্শনে নেই। তবু এখনও সবাই আমাদের দূরদর্শনের কন্যা মনে করেই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান।

আরও পড়ুন-PV Sindhu : ইন্দোনেশিয়ায় শেষ চারে সিন্ধু

খুব পুরোনো একটা ঘটনার কথা বলি। দুর্গাপুরের গোপালমাঠের ৯২ বছরের এক মহিলা মারা যাবার আগে মানিঅর্ডার করে আমার নামে তাঁর টাকাপয়সা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ভাবা যায়! সম্ভবত তিনি কোনও এক আপনজনকে হারিয়েছিলেন। পরে দূরদর্শনের পর্দায় আমাকে দেখে তাঁর বিশ্বাস হয়েছিল, আমি সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি। এইরকম অনেক ঘটনা আছে। আসলে আমাদের উপস্থাপনা এতটাই আন্তরিক ছিল, মনে হত আমরা পরিবারের একজন। রোজ সন্ধ্যায় আসি। এইভাবে আমরা দর্শকদের ঘরের মেয়ে হয়ে গিয়েছিলাম। কোনওদিন স্টার হইনি, হতেও চাইনি। দর্শকরা আমাদের ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন-AB deviliers : আর ক্রিকেট নয়, ঘোষণা এবি-র

পরবর্তী সময়ে অন্য কোনও টেলিভিশন চ্যানেলে আপনাদের দেখা গেল না কেন?

আমরা তো দূরদর্শনে চাকরি করতাম। সেখানেই কেটেছে দীর্ঘ সময়। তাই অন্য কোনও বেসরকারি চ্যানেলে যাবার কথা আমার কখনও মনে হয়নি। পরে মিশে গেছি অভিনয় জগতে। কাজ করছি সিনেমা এবং ধারাবাহিকে। তবে একটা সময় আমি গান করতাম। গেয়েছি অল ইন্ডিয়া রেডিওয়। গান গাওয়ার পাশাপাশি নাটকও করতাম। এখন আবৃত্তিও করি।

সেটা শুরু করেছি অনেক পরে। গৌরী ঘোষের আবৃত্তি খুব ভাল লাগত। ভাল লাগে আমার থেকে অনেক ছোট ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তি। ব্রততীর আবৃত্তি শুনেই আমার মনে হয়েছে, আমিও একটু চেষ্টা করে দেখি। সেই শুরু। পাশাপাশি আমি বেড়াতে খুব ভালবাসি। আমাদের একটা দল আছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াই। যাই হোক, এইসব নিয়েই আছি। সুন্দর ভাবে কাটছে প্রতিটা দিন।

আরও পড়ুন-দ্রাবিড় কোচ হওয়ায় অবাক পন্টিং

##

চৈতালি দাশগুপ্ত

দূরদর্শনে পথচলা শুরু হয়েছিল কীভাবে?

তার আগে বলি, ২১ নভেম্বর দিনটির কথা তখন আমরা জানতাম না। ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন ডে হিসেবে এটা হয়তো পরে ঘোষণা হয়েছে। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দুটো দিন। ৯ অগাস্ট কলকাতা দূরদর্শনের জন্মদিন এবং ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতীয় টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠা দিবস। এই দুটো দিন আমরা সেলিব্রেট করতাম। এবার বলি, আমি কলকাতা দূরদর্শনে আছি শুরু থেকেই। ৯ আগস্ট-এর আগে থেকেই কাজে যোগ দিয়েছিলাম। মনে পড়ছে প্রথম অনুষ্ঠান রেকর্ডিং করেছিলাম ১৪ জুলাই ১৯৭৫।

আরও পড়ুন-TMC Goa: গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আয়ুর্বেদ ডাক্তার, হয়েছেন খাদান মালিক! সিবিআই তদন্ত চাইল তৃণমূল কংগ্রেস

তখন ব্যাঙ্কিং-এর জন্য রেকর্ড করা হত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম। সেইসময় পঙ্কজদা— পঙ্কজ সাহা আমাকে দূরদর্শনে ডেকে নিয়েছিলেন। পঙ্কজদা এবং শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত একদিন আমাকে একটা অনুষ্ঠানে অ্যাঙ্কারিং করার কথা বলেন। তাঁদের কথামতো পরের দিন সকালে স্টুডিওয় গিয়ে দেখি নীলিমা সেন, সুপ্রিয় ঠাকুর, সুভাষ চৌধুরী রয়েছেন। আমাকে বলা হল নীলিমা সেন রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান গাইবেন। সেটা নিয়ে আমাকে নিজে লিখতে হবে এবং বলতে হবে। আমি শঙ্খ ঘোষের ছাত্রী, বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করছি। ফলে আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। চটপট লিখে ফেললাম।

আরও পড়ুন-Farm Law: মোদি যুগের শেষের শুরু হল, বললেন সুখেন্দুশেখর রায়

উপস্থিত কর্মকর্তারা সেটা দেখে অবাকই হলেন। আমি নাচ করতাম। ফলে ছিলাম স্টেজ-ফ্রি। তাই ক্যামেরার সামনে আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। সাফল্যের সঙ্গেই কাজটা করতে পেরেছিলাম। যদিও সেই অনুষ্ঠানটি টেলিকাস্ট হয়েছিল অনেক পরে। সেপ্টেম্বর মাসে। সরাসরি দর্শকেরা আমাকে প্রথম দেখেন একটি লাইভ অনুষ্ঠানে। সেটা ১৫ অগাস্ট। মণিপুরি নাচের অনুষ্ঠান ছিল। আমার নাচের গুরু পূর্ণিমা ঘোষ অংশ নিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন জিতেন সিং। যেহেতু মণিপুরি আমার নাচের বিষয়, ফলে সেটাতেও আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। একটা কোনায় দাঁড়িয়ে আমাকে ওই নাচ সম্পর্কে বলতে হয়েছিল। সেই প্রথম দর্শকদের সামনে। এইভাবেই শুরু।

আরও পড়ুন-Mamata Banarjee: অন্নদাতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিতা লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী

যখন অনুষ্ঠান শুরু করি তখনও গ্র্যাজুয়েশনের রেজাল্ট বেরোয়নি। রেজাল্ট বেরনোর পরে দূরদর্শনে জয়েন করলাম। ওই বছর অক্টোবরে। এমএ পড়েছি চাকরি করতে করতেই। কিছুদিন পর পার্মানেন্ট হয়ে গেলাম। আমার আর শাশ্বতীর পরে কেউ তো আর অ্যানাউন্সার বা প্রেজেন্টার হিসেবে পার্মানেন্ট হননি। সবাই ক্যাজুয়াল। যাই হোক, এত বছর পরও দর্শকদের কাছে শুনতে পাই, দূরদর্শনের মুখ মানেই আমরা। এটা আমাদের ভাগ্য। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আসলে আমাদের কোনও প্রতিযোগী ছিল না। কারণ তখন তো একটাই টেলিভিশন চ্যানেল। এমনকী শাশ্বতীর সঙ্গেও আমার কোনও প্রতিযোগিতা ছিল না।

আরও পড়ুন-মালদহে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে ৬৬ কোটি, উপকৃত ৩২৯৬

আমরা বরাবরই একে অপরকে সাহায্য করেছি। বন্ধুত্ব কোন পর্যায়ে থাকলে এটা সম্ভব, সেটা ভেবে দেখতে হবে। আসলে দূরদর্শন আমাদের একটা বাড়ির মতো ছিল। অফিস বলে কখনও ভাবিনি। কাজ শুরু করেছিলাম অল্প বয়সে। তাই কোনও অসুবিধা হয়নি। কারণ সবাই ছিলেন আমাদের দাদা-দিদির মতো। সবার সঙ্গে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ফলে কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতার কথা কোনওদিন মনে আসেনি। তা ছাড়া আমরা কোনওদিন ভাবিনি বিরাট নাম করব। রাস্তাঘাটে অবলীলায় ঘুরে বেড়াতাম। ট্রেনে বাসে যাতায়াত করতাম। কখনও মনে হয়নি সন্ধেবেলায় আমাকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় বলে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

আরও পড়ুন-রাসচক্র ঘুরিয়ে শুরু হল রাস

সিনেমা স্টার এবং টেলিভিশন পার্সোনালিটির মধ্যে তফাত কতটা?

সিনেমা স্টার এবং টেলিভিশন পার্সোনালিটির মধ্যে তফাত এই, আমরা তো মানুষের ঘরে আসি। তাই দর্শকরা আমাদের খুব আপন করে দেখেন। সিনেমার স্টারদের এইভাবে দর্শকেরা দেখতে অভ্যস্ত নন। তাঁদের আলাদা জায়গা। তাই দর্শকেরা আমাদের বন্ধু, আপনজন ভাবতেন। রাস্তাঘাটে অনেকেই কথা বলতেন আমাদের সঙ্গে। কোথাও খারাপ ব্যবহার পাইনি। শুনিনি কটূক্তি। দর্শকদের ভালোবাসা যেমন প্রথমদিন পেয়েছি, তেমন আজও পাচ্ছি। আসলে আমরাও তাঁদের আপন করে নিতে পেরেছি।

এখনকার টেলিভিশন অ্যাঙ্কারদের কাজ কেমন লাগে?

আমি যে খুব বেশি দেখি, সেটা বলতে পারব না। তবে যেটুকু দেখেছি, তার ভিত্তিতে একটা কথা বলতে পারি, ওরা টেকনিক্যালি অনেক ভাল, অনেক স্মার্ট। ওদের সঙ্গে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে দেখেছি ওরা একসঙ্গে অনেক কাজ করে। কিন্তু আমাদের কথা বলার যে নম্রতা, সেই নম্রতা এখন খুব একটা থাকছে না। অথচ বিদেশি টেলিভিশনে দেখেছি ওদের অ্যাঙ্কারদের মধ্যে নম্রতা ব্যাপারটা আছে। অথচ আমাদের এখানে কেন সেটা থাকছে না বুঝতে পারছি না। পঙ্কজদা একটা কথা বলতেন, ‘সবসময় মনে রাখবে দর্শক তোমার গুরুজন। তুমি তার একটু নিচে আছ। তাঁরা অনেক বেশি জানেন। বড়দের দিকে আমরা আঙুল তুলে কথা বলি না, এটাও মনে রাখতে হবে। আর একটা কথা, তুমি নিজেকে কখনও জাহির করবে না।’ কথাগুলো আজও আমি মনে রেখেছি এবং অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। আর একটা কথা আমার মনে হয়, এখন অনেকেই ‘আমি’ ‘আমি’ বলেন। আমরা কিন্তু ‘আমরা’ এবং ‘আমাদের’-এ বিশ্বাসী ছিলাম। মনে করতাম একটা কাজ করছি সবাই মিলে। ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন ডে-তে একটা কথা বলি, আমরা যেন সবাই মিলে একসঙ্গে ভাল কাজ করতে পারি।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে উচ্চশিক্ষার দুয়ার খুলল পাহাড়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়

##

ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়

দূরদর্শনের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?

দূরদর্শন পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হবার আগে আমার পরিবার ছিল আকাশবাণী। খুব ছোটবেলা থেকেই আমি আকাশবাণীতে যাই। শিশুমহল, গল্পদাদুর আসর, যুববাণী ইত্যাদি সিঁড়ি ভেঙে আমি আকাশবাণী নাট্য বিভাগের শিল্পী হই। তারপর ক্যাজুয়াল অ্যানাউনসার হিসেবে কাজ শুরু করি। এমএসসি পরীক্ষার ফাইনাল দেবার পর কিছুটা সময় পাই। সেইসময় আমি দূরদর্শনে অনুষ্ঠান করতাম। ইয়ুথ টাইম, তরুণদের জন্য। ১৯৮৫ সাল থেকেই আমি দূরদর্শনে অনুষ্ঠান করি। তারপর আমি পরীক্ষা দিই নিউজ রিডার ও অ্যানাউন্সমেন্ট-এর। এবং দুটোতেই পাস করি। ১৯৮৯ সাল থেকে আমি দূরদর্শনে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ শুরু করি।

আরও পড়ুন-রাসচক্র ঘুরিয়ে শুরু হল রাস

কবিতার চর্চা পাশাপাশি চলছিল?

কবিতার চর্চা আমি ছোটবেলা থেকেই করছি। স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। এইভাবে আমার পরিচিতি তৈরি হয়। ফলে আমার ধারাবাহিক চর্চা চলতেই থাকে। দূরদর্শনে জয়েন করার পর আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। লোকে দেখে চিনতে পারেন, জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। আসলে দূরদর্শন আমার কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট। কারণ ফেসভ্যালুর আলাদা একটা গুরুত্ব আছে। সব গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো আমি পড়ার সুযোগ পেতাম। মনে হয় আমি সুযোগটা ঠিকঠাক কাজে লাগিয়েছি।

এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার ডাক আসতে থাকে। আমার আবৃত্তির চর্চা ও আবৃত্তির সুযোগ অনেক বেড়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় আমন্ত্রণ পেতে থাকি। ১৯৯৬ সালে রবীন্দ্র সদনে আমার একক আবৃত্তির অনুষ্ঠান হয়। নাম ‘এক সন্ধ্যায় একা ব্রততী’। আগামী ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানটির ২৫ বছর হবে। সেই অনুষ্ঠান আমাকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল। তখন আমি চাকরি করতাম সিএমডিএতে। করতাম নগর উন্নয়ন-এর কাজ। যেহেতু আমার বিষয় ছিল অর্থনীতি। তাই সেই সংক্রান্ত কাজ আমি করতাম। আমার একক অনুষ্ঠান সাফল্য পাওয়ার পর আমি চাকরি ছেড়ে দিই। পুরোপুরি কনসেনট্রেট করি আবৃত্তিতে। পাশাপাশি চলতে থাকে দূরদর্শন-এর কাজ, এফএম, বেরতে থাকে আবৃত্তির অ্যালবাম, কাজ করতে থাকি বিভিন্ন মাধ্যমে। সব মাধ্যমের কাজই আমি খুব এনজয় করতাম। পাশাপশি করতাম প্রচুর অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন-বিতর্কিত কৃষি আইনের সালতামামি

‘এক সন্ধ্যায় একা ব্রততী’ অনুষ্ঠানের সাফল্যের পিছনে দূরদর্শনের অবদান কতটা?

দূরদর্শনের কারণে বা শুধুমাত্র ফেসভ্যালুর জন্য দর্শক উপচে পড়েছিলেন বলে আমি মনে করি না। ছোটবেলা থেকেই আমার আবৃত্তির শ্রোতা তৈরি হয়েছে। আমার জার্নি শুরু রেডিওয় ইন্দিরাদেবীর শিশুমহল থেকে। তারপর প্রচুর অনুষ্ঠান। এইভাবে ধীরে ধীরে বেড়েছে পরিচিতি। পরে দূরদর্শনের সফল সংবাদ পাঠিকা হিসেবে পালে লেগেছিল হাওয়া। আসলে আকাশবাণী এবং দূরদর্শন আমাকে তৈরি করে দিয়েছে। আমার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিয়েছে। মাইক্রোফোন ব্যবহার, উচ্চারণ— সবকিছু শিখেছি আকাশবাণীতে।

সেখানে তখন বড় বড় প্রেজেন্টার, অ্যানাউন্সার। নাটকে জগন্নাথ বসু, শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণা করছেন সিনিয়র অ্যানাউন্সার গৌরী ঘোষ। পেয়েছি পার্থ ঘোষ, ছন্দা সেনকে। সবাই বিশিষ্ট, বিখ্যাত। সবাই আমাকে গাইড করেছেন। শুধরে দিয়েছেন ভুল-ত্রুটি। সিনিয়ররা আমাকে মোটিভেট করেছেন। দূরদর্শনে পেয়েছি তরুণ চক্রবর্তী, ছন্দা সেন, শাশ্বতী গুহঠাকুরতা, চৈতালি দাশগুপ্তকে। প্রত্যেকের উৎসাহ আমার খুব কাজে লেগেছে। সবাই আমাকে স্নেহ করেছেন আমার আবৃত্তির জন্য। আমার প্রথম পরিচিতি একজন আবৃত্তিকার হিসেবেই। পাশাপাশি দূরদর্শনের সংবাদপাঠও আমি খুব এনজয় করেছি। আসলে আমি বিখ্যাত হবার জন্য বা স্টার হবার জন্য কিছু করিনি।

নতুনদের আমি সেই কথাই বলি। কেউ চাইলেই স্টার হতে পারে না। আমি যখন যে কাজ করেছি ভালোবেসে করেছি। সংবাদ পাঠ করার পাশাপাশি উপস্থাপনার কাজও আমি খুব এনজয় করেছি। বরাবর চেয়েছি আমার বৈশিষ্ট্য যেন আমার উপস্থাপনার মধ্যে প্রতিফলিত হয়। আমি অনেকের পরিবেশনা শুনেছি, তবে কাউকে অনুকরণ করিনি। যাঁর যেটুকু ভাল আমি সেটা নেবার চেষ্টা করেছি। সেটাকে বুঝে আমি নিজের একটা ধারা বা ঘরানা তৈরি করেছি। এটা আমার একটা স্বপ্ন ছিল। আমি উপভোগ করে কাজ করেছি। সেই কাজ মানুষের পছন্দ হয়েছে, এটাই বড় কথা।

আরও পড়ুন-বিতর্কিত কৃষি আইন এ ক ন জ রে

আপনার প্রিয় নিউজ রিডার কারা?

খুব ছোটবেলায় বাড়িতে রেডিও শোনার রেওয়াজ ছিল। শুনতাম দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণ চক্রবর্তীর সংবাদপাঠ। সংবাদ বিচিত্রা, সংবাদ পরিক্রমা। বড়দের পাশাপাশি আমিও উদগ্রীব হয়ে থাকতাম শোনার জন্য। ভারত যখন বিশ্বকাপ ক্রিকেট জিতল তখন তরুণদা প্রণবেশ সেনের একটি লেখা ‘কপিল দেব-কে খোলা চিঠি’ পাঠ করেছিলেন। পড়ার মধ্য দিয়ে আবেগ কীভাবে যে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম। তরুণদার পাঠ আমাদের সকলকে ইন্সপায়ার করেছিল। সেই কথা আজও আমার মনে পড়ে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি খুবই ছোট। তখন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় পড়তেন প্রণবেশ সেনের লেখা। ওঁর উদ্দীপিত উচ্চারণ আমাকে ইন্সপায়ার করত। তখন শুনতাম মুজিবুর রহমানের কথা। এখন মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ চলছে। আমি তরুণ চক্রবর্তী, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এই কাজের জগতে এসেছি।

আরও পড়ুন-আইন বাতিল কী বলছেন ওঁরা

এখন যাঁরা বিভিন্ন চ্যানেলে ঘোষণা করছেন বা খবর পড়ছেন তাঁদের কাজ কেমন লাগে?

নতুন প্রজন্মের অনেকের কাজ আমার ভাল লাগে। অনেকেই আমার ছাত্র-ছাত্রী। আমাদের একটা নিজস্ব ঘরানা ছিল। প্রাইভেট চ্যানেলের ঘরানা একেবারেই আলাদা। কখনও মনে হয় খুব ফাস্ট পড়া হচ্ছে। অনেক সময় শ্রোতার বোঝার আগেই একটা খবর শেষ করে অন্য খবরে চলে যেতে হচ্ছে। একটু নাটকীয় মনে হয়। নিউজ পড়ার সময় অত নাটকীয়তা আমার ভাল লাগে না। আমরা বিদেশি চ্যানেলগুলো দেখি। ওইসব চ্যানেলের নিউজ রিডারদের পরিবেশনা অনেক বেশি স্মার্ট বলে মনে হয়। ওঁরা অনেক বেশি সাবলীল। আমাদের এখানে কিছু কিছু কনটেন্ট দেখে মনে হয় এগুলো ঠিক নিউজ আইটেম নয়। এখন নিউজ তৈরি করা হচ্ছে। যেমন নাটকের স্ক্রিপ্ট হয়— অনেকটা সেই রকমের। এই জায়গাগুলো আমার একটু অসুবিধা লাগে। বাংলা ভাষাটা খুব মধুর। এটা যথেষ্ট আধুনিক ভাষা এবং যথেষ্ট আধুনিক ভাবে বলা যায়। অথচ ভাষাটা এখন মিক্সড হয়ে গেছে। মিশে যাচ্ছে হিন্দি, মিশে যাচ্ছে ইংরেজি। এই ধরনটা আমার একেবারেই ভাল লাগে না। মনে হয় সহজ-সরলভাবে ভাষার মাধুর্য বজায় রেখে উপস্থাপনা করা যেত। সেটা অবশ্য উপস্থাপকের উপর নির্ভর করে। পাশাপাশি নির্ভর করে যাঁরা চ্যানেল চালাচ্ছেন তাঁদের উপর। এই বিষয়ে আমার সঙ্গে অনেকেই ভিন্ন মত হতে পারেন। সৌমিত্রদা— সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে আমার অনেক কথা হয়েছে। উনিও বলতেন বাংলা ভাষায় অন্যান্য ভাষা মিশে যাওয়ার ফলে ভাষার মাধুর্য নষ্ট হচ্ছে।

আরও পড়ুন-আইন বাতিল কী বলছেন ওঁরা

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের যুগে টেলিভিশনের অস্তিত্ব কি বিপন্ন?

টেলিভিশন বলতে দূরদর্শনের কথা বলি। আমাদের সময় এই চ্যানেলের যে পপুলারিটি ছিল, আজ আর সেটা নেই। কারণ দূরদর্শন এখন নিজেকে প্রজেক্ট করতে পারছে না। অথচ দূরদর্শনের নিউজ মানে অথেন্টিক নিউজ। কত উৎকৃষ্টমানের অনুষ্ঠান হয়েছে একটা সময়। অথচ আজ কমে গেছে দর্শকের সংখ্যা। এর কারণ কী হয়তো কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। যদিও গ্রামবাংলায় জনপ্রিয়তা বজায় আছে। কিন্তু একটা স্টিরিওটাইপ ফর্ম চলে আসছে। এটা ব্রেক করলে হয়তো আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাত। নতুন নতুন চ্যানেল আসার পরে দূরদর্শনের আধুনিকীকরণের বিশেষ প্রয়োজন ছিল। জনসংযোগের জায়গায় কোথাও একটু খামতি থেকে গেছে বলে আমার মনে হয়। ডিজিটাল মিডিয়া ডিজিটাল মিডিয়ার জায়গাতেই থাকবে। টেলিভিশনের কাজ কিন্তু আলাদা।

দুটোয় দু-রকম অডিয়েন্স আছে। এখন স্মার্ট টিভি এসে গেছে। মোবাইলের অনুষ্ঠান, সে ফেসবুক হোক কী ইউটিউব বা জুমের কোনও অনুষ্ঠান, সেটা স্মার্ট টিভিতে দেখা যায়। আবার টিভির অনুষ্ঠানগুলো মোবাইলে দেখা যায়। একটা সময় মনে হয়েছিল টেলিভিশন আসার ফলে হয়তো প্রিন্ট মিডিয়া মার খাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে পড়তে ভালবাসি। হার্ডকপি না পেলে পড়ে শান্তি পাই না। আমার মতো অনেকে নিশ্চয়ই আছেন। কোভিডের সময়ও আমি খবরের কাগজ বন্ধ করিনি। এই ব্যাপারে আমি নেশাগ্রস্ত বলা যায়। বই বা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে না পড়লে আমার শান্তি হয় না। তাই মিডিয়া মিডিয়ার জায়গাতেই থাকবে। সে প্রিন্ট, ডিজিটাল, টেলিভিশন— যে মিডিয়াই হোক না কেন। এই মিডিয়াগুলো যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁদের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। জানতে হবে দর্শকদের রুচি, ভাললাগা। আমার বিশ্বাস প্রত্যেকেই যে যার নিজের জায়গায় থাকবে।

আরও পড়ুন-গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চায় তৃণমূল

##

মধুমন্তী মৈত্র

আপনার জীবনে দূরদর্শনের ভূমিকা কতটা?

দূরদর্শন আমার কাছে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা। খুব ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় দূরদর্শনের ‘চিচিংফাঁক’, ‘হরেকরকম্বা’ অনুষ্ঠানে আমি শিশুশিল্পী হিসেবে অ্যাঙ্কারিং করেছি, গান গেয়েছি, কুইজে অংশ নিয়েছি। তারপরে দূরদর্শনে ঘোষিকা হওয়া এবং পরবর্তীকালে নিউজ রিডার। মানে আশির দশক থেকে দূরদর্শনের কলকাতায় আসা, প্রচার পাওয়া এবং আমার বড় হয়ে ওঠা একসঙ্গে হয়েছে। তখন আর অন্য কোনও চ্যানেল ছিল না। সেই কারণেই দূরদর্শনে যাঁরা আসতেন, তাঁদের সবাইকে দর্শকরা খুব আপন করে নিতেন। যে মুখগুলো দেখা যেত, যাঁদের কথা শোনা যেত, আমার সৌভাগ্য আমিও তাঁদের মধ্যে একজন ছিলাম।

আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের অনেকেই ছিলেন যাঁরা আইকন। পরবর্তীকালে সেই ভালোবাসা, সেই গ্রহণযোগ্যতা আমিও পেয়েছি। এই পাওয়াটা একেবারে ভাগ্যের ব্যাপার। একটা কথা স্বীকার করে নিতে হবে, তখন তো প্রতিযোগিতা ছিল না। দূরদর্শন ছিল একমাত্র চ্যানেল। সেই কারণেই মনে হয় মানুষের এত কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছি। দূরদর্শনে কাজ করার মধ্যে ভালোবাসাটাই ছিল বেশি। হঠাৎ করে কেউ যদি কাজ করা শুরু করে, তখন একটা টেনশন কাজ করে। ক্যামেরা ফেস করার সময় ফ্লোর ম্যানেজার কাউন্টডাউন দিতেন। থ্রি টু ওয়ান স্টার্ট। এটা ছোটবেলা থেকে করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই পরে ভয়, টেনশন কখনও হয়নি। বাড়িতে আপনাদের মুখোমুখি বসে যেরকমভাবে কথা হয়, সেইরকম ভাবেই কাজটা করেছি।

আরও পড়ুন-Jago Bangla Stall:  “জাগো ভারত” ডাক তৃণমূলের*

দূরদর্শনে ঘোষণা এবং অ্যাঙ্কারিংয়ের মধ্যে তফাত কতটা?

আমি দুই ধরনের কাজই করেছি। তাই বুঝতে পেরেছি দূরদর্শনে ঘোষণা এবং অ্যাঙ্কারিংয়ের মধ্যে অজস্র তফাত। ঘোষণায় একটা স্ক্রিপ্ট থাকে। সেটা মুখস্থ করে বলতে হয়। তখন টেলি প্রম্পটার ছিল না। সেটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। অ্যাঙ্কারিংয়ে অনেকটা নিজের স্বাধীনতা থাকে। কে কত ভাল অ্যাঙ্কার হবেন সেটা তাঁর জীবনবোধ, ভাল পড়াশোনা, তাঁর ব্যাপ্তি ইত্যাদি থেকেই উঠে আসে। নিউজ রিডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে টেলি প্রম্পটার ছিল না। পরে টেলি প্রম্পটার এসেছে। ব্যাপারটা অনেক সহজতর হয়ে গেছে। দূরদর্শন আমার জীবনের অনেকটাই জুড়ে আছে। যদি মধুমন্তী মৈত্র নামটি কিছুটা পরিচিতি পেয়ে থাকে, তার পিছনে আমার দূরদর্শনে নিয়মিত আসাটা নিশ্চয়ই একটা কারণ ছিল।

এই মুহূর্তে দূরদর্শন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে?

এখন আর হয়তো আগের জায়গায় নেই। কারণ এখন মানুষজন দূরদর্শন খুব একটা দেখেন না। কেননা, অনেক চ্যানেল হয়েছে। স্পেশ্যালি নিউজ। নিউজ চ্যানেলগুলো সম্পূর্ণ অন্য ধারার। দূরদর্শনের যে ধারা ছিল, তার থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ধারায় চলে। সেখানে নিউজ এন্টারটেইনমেন্ট বিজনেসের একটা অংশ। দূরদর্শন কিন্তু কখনও তাদের নিউজের যে এথিক্সগুলো থাকে সেগুলো টপকায়নি। সবসময় প্রথম নিউজ দেব না।

কারেক্ট নিউজ দেব। অর্থাৎ বারবার একটা খবরকে যাচাই করে নেওয়া। যাতে কোনওভাবেই ভুল খবর না যায়। বা এমন কোনও খবর প্রচারে আনব না, যে খবরের প্রভাব মানুষের উপর পড়ে কোনও সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। আসলে দূরদর্শন অনেক ভেবেচিন্তে কাজ করে। আজকালকার নিউজ চ্যানেলগুলো নিশ্চয়ই তাদের গদাইলস্করি বলবেন। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে আমরা ছোটবেলা থেকে এটা দেখেই অভ্যস্ত এবং আমি দূরদর্শনের নিউজ রিডার বলে বলছি না, আমার মনে হয় কিন্তু সবসময় আমি প্রিন্সিপ্যালকে ব্যবসায়িক লাভের আগে রাখব এবং দূরদর্শন সেটাই করে। দূরদর্শন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। এটা মস্ত বড়ো সুবিধা। অন্য চ্যানেলগুলোকে বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছু করতে হয়। সেখানে একটা তফাত হয়ে যায়।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাবে মহমেডান

আজকাল যাঁরা অ্যাঙ্কারিং করেন তাঁদের কীরকম লাগে?

আমি যেটা বললাম, দূরদর্শনের ক্ষেত্রে এবং আজকালকার নিউজ চ্যানেলের ক্ষেত্রে যেহেতু খুব মৌলিক দিক থেকে একটা তফাতের জায়গা আছে, সেইজন্য যাঁরা এই চ্যানেলগুলোয় নিউজ অ্যাঙ্কারিং করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চ্যানেলের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হয়। সবাইকেই তাই করতে হয়। দূরদর্শন যেমন কিছু নিয়ম করে দেয়। যেমন মেয়েদের শাড়ি পরেই নিউজ পড়তে হবে। অন্যান্য চ্যানেলের ক্ষেত্রে একটা স্বাধীনতা আছে। বিশেষ কোনও দিনে শাড়ি পরেন, অন্য দিনে নয়। এই ব্যাপারগুলোর মধ্যে জাজমেন্টাল হবার কিছু নেই। এটা একটা পৃথক শৈলী। তাঁদের চ্যানেলের গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য করতে হচ্ছে। আমার এই বিষয়ে কিছুই বলার নেই, কোনও মতামত নেই। আমি কখনওই কাউকে জাজ করি না। ওঁদের দেখতে বেশ ভালই লাগে। ওঁরা নিজেদের মতো করে করেন। বেশ ভাল লাগে।

দূরদর্শনের বাইরে অন্যান্য চ্যানেলে কাজ করেছেন?

হ্যাঁ, দূরদর্শনের বাইরে অন্যান্য চ্যানেলে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। অ্যাঙ্কারিং করেছি। এখন যেটা হচ্ছে, সেটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। এই প্ল্যাটফর্মে অ্যাঙ্কারিং করতে গিয়ে আমার সত্যিই খুব ভাল লাগছে। আমি একটা ইউটিউব চ্যানেলে ‘মেঘের সাজি’ নামে একটা অনুষ্ঠান করছি। যেটা খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন আমরা ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন ডে সেলিব্রেট করছি। কিন্তু অতিমারির সময় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো আমরা ওয়ার্ল্ড ভার্চুয়াল ডে বা ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল ডে পালন করব।

Latest article