বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট সোফিয়াকে মনে আছে। এক প্রযুক্তি সম্মেলনে যোগ দিতে ২০২০ সালে কলকাতায় এসেছিলেন সোফিয়া। ২০১৭-এ তাঁর প্রথম ভারত সফরে আসা। সবাইকে চমকে দিয়ে লাল সাদা জামদানি শাড়ি পরে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি বক্তৃতা দিতে। কথা বলেছিলেন সবার সঙ্গে। পরামর্শ দিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীদের। সেই সোফিয়া থেকে আরিয়ানের প্রেমিকা সিফ্রা। রোবট যদি সব পারে তবে প্রেম করতেই বা পারবে না কেন! আসলে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডি ছবি ‘তেরি বাতো মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া’র (Teri Baaton Mein Aisa Uljha Jiya) মূল চরিত্র হল এই সিফ্রা যে কোনও মানবী নয়, আদপে একটি রোবট। সায়েন্স ফিকশন এবং রোমান্টিক কমেডির মিশেলে ব্যতিক্রমী প্লটে তৈরি ছবিটি বড়পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ভ্যালেন্টাইন্স ডের কয়েকদিন আগেই। এতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন শাহিদ কাপুর এবং কৃতি শ্যানন।
ইদানীং বলিউডি ছবি একটু ব্যতিক্রমী হলেই একশো কোটির ঘর পার করে দুশো কোটি ছুঁয়ে ফেলছে। ভাল ছবির দর্শকসংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের লক্ষ্মীলাভের অন্ত নেই। এই ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। রিলিজের দশদিনের মধ্যেই নাম লিখিয়েছে একশো কোটির ক্লাবে। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এই ছবির আয় লক্ষণীয়। ভারতে দশদিনে ছবিটি আয় করেছে ৬২.০৫ কোটি টাকা আর গোটা বিশ্বে ১০৭.৮৬ কোটির ওপর। সদ্য দু’সপ্তাহ পেরোল আর দুশো কোটির ক্লাবে ঢুকতে এই ছবির যে সময় লাগবে না তা বলাই বাহুল্য।
এই ছবির প্রেমকাহিনি বেশ ইন্টারেস্টিং। শাহিদ কাপুর একজন রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ার, যার নাম আরিয়ান। সে বিয়ে করতে একেবারেই নারাজ কারণ কোনও মেয়েই তার পছন্দ হয় না। এহেন আরিয়ান একদিন প্রেমে পড়ে। যার প্রেমে সে পড়ল সেই নারী কোনও মানুষ নয়, আসলে একটা হাইলি ইন্টেলিজেন্ট রোবট। নাম সিফ্রা। সিফ্রার চরিত্রে রয়েছেন কৃতি। তাকে দেখেই তার কাজে মুগ্ধ আরিয়ান। ধীরে ধীরে এই রোবটের জন্য তার মনের কোণায় জেগে ওঠে প্রেম। প্রিয় মানুষটাই যদি হয় রোবট তাহলে তার আবেগ, ভালবাসা কি মানুষের মতোই একই রকম হবে? এও কি সম্ভব! শাহিদ-কৃতির ওরফে আরিয়ান-সিফ্রার সম্পর্কের সত্যতা একমাত্র জানেন শাহিদের মাসি, যে ভূমিকায় রয়েছেন ডিম্পল কাপাডিয়া। আরিয়ানকে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন এই বিয়ে অসম্ভব। কিন্তু ততদিনে বোধহয় বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। বিয়ের আগেই কি সিফ্রা-র সত্যিটা জেনে যাবে সকলে? রোবটকেই কি বিয়ে করবে আরিয়ান? এরপর কী হবে? সেই রোবট সঙ্গী পারফেক্ট হবে তো! রোবট কী বুঝবে নারী-পুরুষের সমীকরণ? আরিয়ানের প্রেমিকা সিফ্রাকে মেনে নেবে কি তার পরিবার? সেই রোবোটিক প্রেম কতদূর গড়াবে? কী হবে এরপর? সেটা দেখতে হলে যেতে হবে সিনেমা হলে। মানুষের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক এবং রোবটকে প্রতীকী রেখে পারফেক্ট সঙ্গী খোঁজার গল্পই বলবে এই ছবি। রিলিজের পর থেকেই এই ছবির চরিত্রদের যে ভালবেসে ফেলেছেন আমজনতা তা বক্স অফিস সাফল্য দেখেই বোঝা গিয়েছে। ভ্যালেন্টাইন্স ডের ঠিক আগেই দর্শকের পালস বুঝে এমন এক অন্যরকম প্রেমের গল্প নিয়ে হাজির হলেন পরিচালক অমিত জোশী এবং আরাধনা শাহ। ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তাঁরাই। প্রযোজক দীনেশ বিজান, জ্যোতি দেশপাণ্ডে, লক্ষ্মণ উতেকর। প্রযোজনা সংস্থা ম্যাডক ফিল্মস, জিও স্টুডিও। ছবির পরিবেশনায় পেন মারুধর এন্টারটেইনমেন্ট। শাহিদ আর কৃতি ছাড়াও এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে ডিম্পল কাপাডিয়া, ধর্মেন্দ্র, রাকেশ বেদী, অনুভা ফতেপুরিয়াকে। এছাড়াও রয়েছেন আরও অনেকেই।
এমন একটা নতুন এবং ব্যতিক্রমী বিষয়ের ওপর তৈরি ছবি প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে শাহিদ কাপুর বলেন, ‘‘একটানা বহুদিন একধরনের কাজ করতে করতে একটু বোর হয়ে যাচ্ছিলাম। একজন অভিনেতা হিসেবে নিজেকে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে দেখার একটা খিদে থাকে সবসময়। নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়তে চেয়েছি। পুরনো ইমেজ ব্রেক করতে চেয়েছিলাম। তাই নিজেকে সম্পূর্ণ একটা অন্য ইমেজে তুলে ধরছি। সিনেমা অবশ্যই বিনোদন কিন্তু সংবেদনশীল ভাবনা থাকাটাও জরুরি। এই ছবি সেই কথাই বলবে।’’
আরও পড়ুন- আদিবাসী উন্নয়নে কড়া মুখ্যমন্ত্রী, চোপড়ার মৃতদের পরিবারকে সাহায্য
২০১৪ সালে ‘হিরোপন্তি’ ছবি দিয়ে বলিউডে হাতেখড়ি কৃতির। খুব কম সময়ের মধ্যে অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘রবতা’, ‘দিলওয়ালে’, ‘বরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’, ‘পানিপথ’, ‘মিমি’, ‘ভেড়িয়া’, ‘শেহজাদা’, ‘আদিপুরুষ’। গতবছর কৃতি শ্যানন পেয়েছেন জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। ‘মিমি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর কৃতির ধার এবং ভার দুই-ই বেড়েছে। এবার একটু অন্যধরনের চরিত্র করতে চাইছিলেন কৃতি। ‘তেরি বাতো মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া’ তেমন ধরনের একটা ছবি। সদ্য ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন নায়িকা। সেখানে দেখা গিয়েছে, হলের শো ভাঙার পরই আচমকা সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছেন কৃতি। তাঁকে দেখে হল ভর্তি দর্শকরা উচ্ছ্বাসিত। তখনই অভিনেত্রী প্রশ্ন করেন, ‘‘সিনেমা কেমন লাগল?’’ দর্শকেরা সবাই বলে ওঠেন, খুব ভাল লেগেছে। কৃতি প্রশ্ন করেন, ‘‘তাহলে পার্ট টু তৈরি করা ঠিক হবে?’’ সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ের সবাই একসঙ্গে বলে ওঠেন, অবশ্যই। ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘‘দর্শকদের ভালবাসা, তাঁদের হাসি দেখে আনন্দ পাচ্ছি আর দেখছি তাঁরা হাততালি দিচ্ছেন! এই জন্যই আমরা কাজ করি!! ‘তেরি বাতো মে অ্যায়সা উলঝা জিয়াকে (Teri Baaton Mein Aisa Uljha Jiya) এত ভালবাসা দেওয়ার জন্য আমরা আপ্লুত।’’
ছবির টাইটেল সং এই মুহূর্তে সবার মুখে মুখে এবং পায়ের তালে তালে। গানটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন রিলসের ছড়াছড়ি নেট মাধ্যমে। গানটি গেয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী রাঘব, তানিষ্ক বাগচী, আশিস কৌর। গানের লিরিক তানিষ্ক বাগচীর, সুর দিয়েছেন রাঘব নিজেই। ছবির অপর গান ‘তুম সে’র প্লেব্যাক সিঙ্গার শচীন জিগর, রাঘব এবং বরুণ জৈন। গানটির লিরিসিস্ট ইন্দ্রনীল। সুর দিয়েছেন শচীন জিগর। এই রোম্যান্টিক ছবি জুড়ে রয়েছে একাধিক অন্তরঙ্গ দৃশ্য। কিছু দৃশ্যে অবশ্যই সেন্সর বোর্ডের কাঁচি চলেছে। তারপরেও রোবট প্রেমিকার সঙ্গে শাহিদ কাপুরের প্রেম, যৌনতা ঝড় তুলেছে দর্শক মনে।