কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নারীবিদ্বেষী। তারা মেয়েদের ভাল চায় না। বিলকিস বানোর ধর্ষকদের পক্ষে ওরা সওয়াল করে। গুজরাত দাঙ্গার সময়, নির্যাতিতার বয়স ছিল ২১। আজ ৪৩। এই খতিয়ানেই মালুম হয় এক সাধারণ নারীর জৈবিক ও শারীরিক পরিবর্তনের কোন পর্যায়ে আজ দাঁড়িয়ে গুজরাত দাঙ্গায় গণধর্ষিতা বিলকিস বানো। দেশের আধুনিকতম ডবল ইঞ্জিন রাজ্য গুজরাতের অসহায় এক সংখ্যালঘু নারী। অর্ধেক জীবনটাই কাটিয়ে দিলেন বিজেপির সৌজন্যে দাঙ্গার ট্রমায়, আইনি নির্যাতনের অব্যক্ত যন্ত্রণায়। ধর্ষণের ধাক্কার চেয়েও চেপে বসছে আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ধর্ষকদের মুক্তি। ১৫ অগাস্ট ২০২২। ‘এ-কাজে অভিযুক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে খোদ নির্বাচিত গুজরাত সরকারও।’ সুপ্রিম কোর্টের এই নির্মম পর্যবেক্ষণ ক্ষতটাকে দগদগে ঘায়ে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এই সীমাহীন অপব্যবহার শুধু এক নারীর লজ্জা নয়, গোটা দেশের কলঙ্ক।
আরও পড়ুন-নিপুণ মুন্সিয়ানায় জীবন্ত গল্পের দলিল উজানযাত্রা
গ্রাম বাংলার মহিলারা ১০০ দিনের কাজ করেছিলেন। কাজ করিয়ে নেওয়ার পরও বিজেপি সরকার পারিশ্রমিক দেয়নি। উল্টোদিকে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সবসময় মহিলাদের পাশে রয়েছেন। তাঁর প্রকল্পগুলির জন্য বাংলার মেয়েরা এগিয়ে চলেছেন। কন্যাশ্রী প্রকল্প দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের চিন্তা করতে হয় না। তারজন্য রূপশ্রী প্রকল্প রয়েছে। পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এরাজ্যে কোনও রং বিচার করা হয় না। সবাই সব প্রকল্পের সুবিধা পান। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ গৃহবধূদের হাতে টাকা পৌঁছে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মেয়েদের জন্য পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করেছেন। মেয়েরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে তাঁরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন।
তফাত ছিল, তফাত আছে, তফাত থাকবেই।
আরও পড়ুন-বইমেলায় চলবে বাড়তি মেট্রো
গত বছর নভেম্বর মাসের গোড়ায় ‘বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ক্যাম্পাসে ম্যাথমেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে৷ যে মামলায় প্রায় দু’মাস পর অবশেষে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ ৷ যে খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায় উত্তরপ্রদেশে৷ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিএইচইউয়ের ছাত্রছাত্রীরা লাগাতার বিক্ষোভও করেছিলেন৷ অবশেষে, প্রায় দু’মাস পরে ডিসেম্বরের শেষের দিকে সেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে বারাণসী পুলিশ৷ জানা গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়৷ ধৃতদের বাড়ি বারাণসীর বিভিন্ন এলাকায় বলে জানা যায়৷ নির্যাতিতা ছাত্রী পুলিশকে দেওয়া বয়ানে জানিয়েছেন, তিনি সেদিন প্রথমে গান্ধী স্মৃতি হস্টেল মোড়ে যান৷ সেখানে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়৷ তাঁরা দু’জনে করমানবীর বাবা মন্দিরের কাছে পৌঁছতেই তিন যুবক বাইকে করে এসে তাঁদের রাস্তা আটকায়৷ বাইক থামিয়ে দু’জনকে গালিগালাজ করতে শুরু করে ওই তিনজন৷ ভয়ে তাঁর বন্ধু সেখান থেকে পালিয়ে যান৷ সেই সময় তিনিও পালানোর চেষ্টা করেন এবং সাহায্য চাওয়ার জন্য চিৎকার করতে শুরু করেন৷ কিন্তু, বাইকে সওয়ার এক যুবক নেমে এসে তাঁর মুখ চেপে ধরে৷ সেখান থেকে টানতে টানতে রাস্তার এক কোণে নিয়ে যায় নির্যাতিতাকে৷ সেখানে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয় বলে অভিযোগ৷ তাঁদের মধ্যে একজন পুরো ঘটনার ভিডিও করছিল বলে অভিযোগ৷ পুলিশ চাপের মুখে তদন্তে নেমে, অভিযুক্তদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই পায়নি শুরুতে৷ এমনকী ক্যাম্পাসের ভিতরে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও একাধিক গাফিলতি সামনে আসে৷ শেষমেশ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ঘটনার সময় অভিযুক্তরা যে বাইকটিতে ছিল, সেটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়। অভিযুক্ত কুণাল পাণ্ডে, আনন্দ চৌহান এবং সক্ষম প্যাটেলকে আগেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাহলে তাদের গ্রেফতার করতে এত সময় লাগল কেন? বিজেপির ছত্রছায়াতে থাকার কারণেই কি তাদের গ্রেফতারে এত বিলম্ব হল? জানা গিয়েছে, গণধর্ষণ-কাণ্ডে ধৃত কুণাল বিজেপি আইটি সেলের মেট্রোপলিটন কো-অর্ডিনেটর। সক্ষম সহ-আহ্বায়ক। আর আনন্দকে ওই দু’জনের সঙ্গে বিজেপির কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যেত। অর্থাৎ, একটা কথা পরিষ্কার, অমিত মালব্য বিজেপির আইটি সেলে ‘ধর্ষক’দের নিয়োগ করেছেন এবং তাদের পূর্ণ সমর্থন করছেন।
আরও পড়ুন-পরবের শেষে আজ টুসুর ভাসানে মাতবে রাঢ় বাংলা
এখানেই শেষ নয়। শুরু থেকেই অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে বিজেপি তথা উত্তরপ্রদেশের শাসক দল। যোগী সরকার। এমনকী গ্রেফতারি এড়াতে অভিযুক্তদের মধ্যপ্রদেশে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ধৃতদের ছবিও সামনে এসেছে। পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে গ্রেফতার হলে সারা দেশে এই বার্তা যেত যে, আইআইটি পড়ুয়ার যৌন নিগ্রহে অভিযুক্তরা বিজেপি নেতা। এই অস্বস্তি এড়াতেই অভিযুক্তদের এতদিন তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। আসলে, বিজেপি একদিকে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও বলছে। অন্যদিকে ধর্ষকদের মদত দিচ্ছে। আসল কথা হল, বিজেপি ধর্ষকদের দলে পরিণত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আইটি সেল ধর্ষকদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, গোটা দেশ তা জেনেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না! সব বিষিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেও, আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য সে বিষয়ে চুপ কেন! তৃণমূল কংগ্রেস আজ জানতে চায়।
সব মিলিয়ে একটা কথা পরিষ্কার। মহিলাদের সম্মান দিতে চায় না বিজেপি। মণিপুরের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। বিজেপি নেতৃত্ব তাতে কর্ণপাত করেনি।
আরও পড়ুন-রাজ্যের বিজেপি সাংসদদের এটাই শেষ লোকসভা নির্বাচন : কল্যাণ
অনুরাগ ঠাকুরের মতো ঘৃণাজীবীরা যতই বড়বড় কথা বলুন না কেন, বাংলায় এমনটা ভাবা যায় না। কিছুদিন আগেই প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতা হল দেশের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ শহর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে মহিলারা সুরক্ষিত, তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত। মহিলাদের উন্নতি, অগ্রগতি অব্যাহত। তাঁদের স্বনির্ভর করে তোলা হচ্ছে। বাংলায় মহিলারা স্বাবলম্বী। তাঁদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী সরকার। কলকাতা নিরাপদতম শহর বলেই এটা আরও সহজ হচ্ছে। বিপরীতে, দিল্লি শহর মহিলাদের জন্য রীতিমতো বিপজ্জনক। উত্তরপ্রদেশ-সহ ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারগুলির কোনওটিই মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়। সুতরাং, দিকে দিকে আওয়াজ তুলুন, এই ধর্ষক পোষণকারী বিজেপির সরকার, আর নেই দরজার।