হকের টাকা দিতেই হবে, নইলে…

১০০ দিনের কাজের মজুরি আজও বকেয়া। প্রাপ্য সেই টাকা দেওয়ার কোনও সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না মোদি সরকার। তাই, ভিক্ষার বাটি নিয়ে নয়, দাবিসনদ নিয়ে বাংলার বঞ্চিত মানুষেরা আজ রাস্তায়। নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলনের আঁচ গ্রহণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা, নিজস্ব অনুভূতির আবেগ দীপ্র উচ্চারণ করছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক

Must read

ক’টা দিন একেবারে ঝড়ের মতো কেটে যাচ্ছে। বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একদিকে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছি, বন্যা-পরিস্থিতি সরোজমিনে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে, আরেক দিকে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শ্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার বঞ্চনার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে এক গণ-আন্দোলনের (TMC Agitation) শরিক হচ্ছি। গত কয়েকটা দিন ফ্ল্যাশব্যাকে যাচ্ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম বিজেপি কতটা ভয় পাচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বাংলার একশো দিনের শ্রমিকদের প্রাপ্য আটকে রেখে বাংলার গরিব মানুষের আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখে বাংলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল দিল্লি। ভেবেছিল, বাংলা মাথানত করবে ওদের কাছে, কিন্তু আন্দাজ করতে পারেনি বাংলার বুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে উঠে এসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলে, আন্দোলন (TMC Agitation) যাঁর রক্তে তাঁকে কি দমিয়ে রাখা যায়? যায় না। বাংলা থেকে কয়েক হাজার বঞ্চিত মানুষকে নিয়ে গিয়ে দিল্লির বুকে আন্দোলন সংগঠিত করা যায়, এটাও বোধহয় নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা ভাবতেও পারেননি। এই আন্দোলনকে বানচাল করতে কী কী করেনি বিজেপি! প্রথমে, ট্রেন বাতিল করা হল। তারপর বিমান বাতিল করা হল। অভাবনীয় ভাবে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিকল্প বাসের ব্যবস্থা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল একটিও সরকারি বাস নয়৷ প্রত্যেকটি বেসরকারি বাস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেদের কাছে এই প্রথম গোলটা খেলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। ২ অক্টোবর দিল্লিতে মহাত্মার জন্মদিনে রাজঘাটে এমন শান্তিপূর্ণ অবস্থান ভারতবর্ষে আগে কোনও রাজনৈতিক দল করেনি। আবারও নজির গড়লেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু হঠাৎই শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর চড়াও হল অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ। মহাত্মার জন্মদিনেই মহাত্মার আদর্শকে আবারও হত্যা করল গডসের শিষ্যরা! বহু মহিলা সহকর্মীদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করল দিল্লি পুলিশ! মোবাইল হারাল বহু সহকর্মীর। ওরা যতবার এভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করল, ততই যেন চোয়াল শক্ত করে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করলেন আমাদের নেতা৷ কয়েক হাজার বঞ্চিত শ্রমিক ততক্ষণে এসে পৌঁছেছে দিল্লির আম্বেদকর ভবনে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একঝাঁক কর্মী নিরলস পরিশ্রম করে তাঁদের খাওয়া-থাকার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছেন। ২ তারিখ সন্ধেবেলা সাংবাদিক সম্মেলনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিলেন, পরের দিন যদি কোনও শ্রমিকের গায়ে হাত ওঠে তাঁর পরিণতি ভাল হবে না৷ অমিত শাহরা প্রমাদ গুনলেন। যে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিং আগেরদিন অবধি মিডিয়ায় বসে বড় বড় হিসেব দিচ্ছিলেন, তিনি দিল্লি ছেড়ে পালালেন! বলা হল, প্রতিমন্ত্রী স্বাধ্বী নিরঞ্জন আমাদের দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন।
ওদিকে অমিত শাহরা বোধহয় বুঝতে পারছিলেন, খেলা হাতের বাইরে চলে গেছে। দিল্লিতে ডাকা হল এক মিরজাফরকে। বস্তুত যার বুদ্ধিতেই বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকেছে কেন্দ্র। সেই, মিরজাফরও পরেরদিন দিল্লিতে গিয়ে বেশ হম্বিতম্বি করলেন, মিডিয়ায় বড় বড় কথা বললেন, যেমনটা তিনি বলে থাকেন। স্বাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতিকে বোধহয় বলেও এলেন, ‘এরা এলে দেখা করবেন না। কারণ দোষটা আসলে আমাদেরই। আমরাই টাকা আটকে রেখেছি।’ বিকেল অবধি ধর্না চলার পরে এবার বাংলার ৫০ লক্ষ মানুষের চিঠি নিয়ে কৃষিভবন যাওয়া হল। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পরে প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন তিনি দেখা করবেন না। বিজেপি হয়তো ভেবেছিল, বাদবাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মতো তৃণমূলও হয়তো ‘দেখা করবে না’ শুনে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু তিনি তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর মনোবল ইস্পাতের মতো শক্ত। কৃষিভবনের মধ্যেই বসে পড়লেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বাকি নেতৃত্ব। এবং তারপরেই অমিত শাহের পুলিশ দাঁত-নখ বের করে হিংস্র শ্বাপদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ওপরে! অবাক হচ্ছিলাম এটা নাকি অমৃতকাল! সেই দিল্লিতেই মহিলা সাংসদ মহুয়া মৈত্র, আদিবাসী মহিলা বীরবাহা হাঁসদাদের টেনে-হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তুলল দিল্লি পুলিশ! আবারও ভুল চাল অমিত শাহদের! বিজেপি ভেবেছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ-বিধায়কদের আটক করে এবারের মতো হয়তো আন্দোলন রুখে দেওয়া গেল। কিন্তু রাত প্রায় এগারোটায় দিল্লি পুলিশ লাইন থেকে বেরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিলেন। খুব কাছ থেকে দেখলাম এ-এক অন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি বাংলার মানুষের অধিকারের দাবিতে লড়তে এসেছেন। জিততে এসেছেন। কোনও রাষ্ট্রশক্তির সামনে মাথা তিনি নোয়াবেন না। এবার দিল্লির দালাল রাজ্যপালের রাজভবন অভিযান! সাংবাদিক সম্মেলনের পরে দিল্লির রাস্তায় এক বাঙালি যুবককে ঘিরে কয়েক হাজার মানুষের উন্মাদনা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। নিজের স্মৃতি হাতড়ে মনে করার চেষ্টা করলাম, শেষ কবে কোনও বাঙালি যুবককে ঘিরে দিল্লির রাজপথে এমন উচ্ছ্বাস দেখেছি! গোটা দেশের গণমাধ্যমের একেকটা বাউন্সারকে হেলায় স্টেপ আউট করে মাঠের বাইরে ফেলে দিচ্ছেন। ঠিক যেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে বল করছেন অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, ম্যালকম মার্শালরা। আর ঠান্ডা মাথায় ধ্রুপদী ব্যাটিং করে একটার পর একটা সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছেন সুনীল গাভাসকর!

আরও পড়ুন-সুপ্রিম নির্দেশের পর রাজ্যপালকে তোপ অভিষেকের: বললেন, জমিদারি প্রথা অবসানের প্রথম নিদর্শন

কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখা দরকার গার্নার, মার্শালরা গাভাসকারের কাছে মার খেলেও মাঠ ছেড়ে পালাতেন না। কিন্তু বিজেপি নেতারা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই পালিয়ে যাচ্ছেন! এমনকী রাজ্যপালও পালিয়ে গেলেন! সেচমন্ত্রী হিসেব আমার দায়িত্ব ছিল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার৷ স্থানীয় মানুষের মুখে শুনলাম, রাজ্যপাল নাকি ‘ডিজাস্টার ট্যুরিজম’ করতে এসেছিলেন! সরকারি টাকায় উনি লোকলশকর নিয়ে আমোদ-ভ্রমণ করতে গেছেন। কিন্তু কিছুতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। ৫ তারিখে মাত্র ১ দিনের ঘোষণায় কলকাতায় জনপ্লাবন ঘটে গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে। সারাদিনের কর্মসূচির পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, যতক্ষণ না রাজ্যপাল দেখা করছেন, তিনি ধর্না মঞ্চেই থাকবেন। ধর্না চলবে৷ আবারও সেই দৃঢ়চেতা মনোভাব। যাঁকে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় এজেন্সি— কেউ টলাতে পারেনি। গত কয়েকদিন ধরে একদম সামনে থেকে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখছি, তিনি একজন স্ট্রিট ফাইটার! যিনি রাস্তার আন্দোলনেই মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য জানকবুল লড়াই করে চলেছেন। যেখানে কেউ জমিদার নয়। কেউ কারও প্রজা নয়৷ গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা। তাই, গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিপীড়িত মানুষের লড়াইয়ের ডাক দিচ্ছেন জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আন্দোলনের (TMC Agitation) আরেক নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্মৃতিপটে ফিরে যাচ্ছিলাম সেই জ্বলন্ত দিনগুলোতে। কখনও ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই কলকাতার রাজপথে, কখনও ২০০৬ সালের ডিসেম্বরের ঠান্ডায় সিঙ্গুরের বিডিও অফিসের বাইরে তৎকালীন বিরোধী নেত্রীর আন্দোলনের ওপর পুলিশি অত্যাচার। তারপর টানা ১৫ দিন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ধরনামঞ্চ। নন্দীগ্রামে সিপিএমের হার্মাদদের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গণ-আন্দোলনের দিনগুলোর কথা আজ ভীষণ মনে পড়ছে। হকের আন্দোলনের সেই ট্রাডিশন আজও সমানে চলছে। নেত্রীর যোগ্য উত্তরসূরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ফের গণ-আন্দোলনের (TMC Agitation) রাস্তায়। নেত্রীর দেখানো সেই চেনা আন্দোলনের পথের পথিক। যিনি পণ করেছেন—
‘হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত/ অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে/ একদিন সে পাহাড় টলবেই টলবেই/ জনতার সংগ্রাম চলবেই!’

Latest article