এডস বা এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে?
অবশ্যই পারে। স্পর্শে কোনও সমস্যা নেই। কারণ এই অসুখ ছোঁয়াচে নয়। নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়ায় না। ভয় ব্লাড টু ব্লাড কনট্যাক্টে। এডস বা এইচআইভি-র প্রধান কারণ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক। অনেকেই মনে করেন, মাউথ টু মাউথ সংক্রমণ হয়। সেটাও প্রায় অসম্ভব। মূলত রক্ত এবং মাতৃদুগ্ধ দ্বারা এই সংক্রমণ হয়। আক্রান্ত মানুষের রক্ত কোনও ভাবে অন্য কোনও সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সুস্থ মানুষটির এইচআইভি আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় মুমূর্ষু রোগীকে রক্তদান করা হয়। এই ভাবেও এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের রক্ত অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ঘটনা ঘটে যেতে পারে ইনজেকশন সিরিঞ্জের মাধ্যমেও। তাই খুব সতর্ক থাকতে হবে। এক সিরিঞ্জ একাধিকবার ব্যবহার করা অনুচিত।
আরও পড়ুন-শচীনের অটোগ্রাফের লোভ সামলেছিলেন লি
লক্ষণ কী?
এইচআইভি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। এমনটা নয় যে, আক্রান্ত হওয়ার চার-পাঁচ দিনের বা এক মাসের মধ্যেই লক্ষণ পরিষ্কার হয়ে যায়। অনেক সময় ইনফেকশন থাকলেও লক্ষণ বোঝা যায় না। ইমিউনিটি কমে গেলে লক্ষণ স্পষ্ট হয়। কী কী লক্ষণ? ওজন কমে যায়, জ্বর হয়, লুজ মোশন, বমি ইত্যাদি। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লিম্ফ নোডগুলো বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। আর একটা ব্যাপার, যে সমস্ত ইনফেকশন সাধারণত মানুষের হয় না, শরীরে সেইসব ইনফেকশন দেখা দেয়। খুব ছোট ছোট অসুখ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবার কারণে সেগুলো মাথাচাড়া দেয়। প্রচুর ভাইরাস, প্রচুর ফাঙ্গাস আঁকড়ে ধরে। এরফলে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন-প্যারা গেমস স্থগিত
আক্রান্তকে সুস্থ রাখা যায় কীভাবে?
যখন নির্ধারিত হয় কেউ এইচআইভি আক্রান্ত, প্রোটোকল অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট করতে হয়। শুরুতেই কতগুলো জিনিস দেখা হয়। তারমধ্যে অন্যতম সিডি ফোর কাউন্ট। এটাকে ইমিউনিটি মার্কার বলা যেতে পারে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু বোঝার জন্য এটা দেখা হয়। মার্কার যাই হোক না কেন, রোগ নির্ধারিত হলে নানারকম ওষুধ দিতে হয়। যাঁদের মার্কার বেশি থাকে তাঁদের নিয়ে চিন্তা অপেক্ষাকৃত কম।
কতদিন চিকিৎসাধীন থাকতে হয়?
এডস-এর চিকিৎসা কিন্তু লাইফ লং। আক্রান্তকে আজীবন এই চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয়। অন্যথা সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটু ভাল আছি মনে করে চিকিৎসা থেকে সরে গেলেই মুশকিল। এখনও সেই জায়গায় আমরা পৌঁছতে পারিনি। অবশ্য চেষ্টা চলছে। অনেক ওষুধ বেরিয়েছে। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। এটা বলা যায়, চিকিৎসার মধ্যে থাকলে রোগী ভাল থাকবে। আগে এইচআইভি মানেই ছিল মৃত্যু। এখন সেই ব্যাপারটা আর নেই। পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল হয়েছে। তাই জোর দিয়ে বলতে পারি, এখন এইচআইভি মানেই মৃত্যু নয়। আক্রান্ত মানুষ ওষুধ খাবে এবং নরমাল লাইফ লিড করবে। ডায়াবেটিস হলে যেমন ইনসুলিন নেওয়া হয় বা চোখের সমস্যা দেখা দিলে চশমা, সেইরকম। এমনও শোনা গিয়েছে দু’জন এইচআইভি পজিটিভ পেশেন্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে তাতে একটাই সমস্যা, সন্তান এলে সেও এইচআইভি পজিটিভ হয়ে জন্মাতে পারে। বাবা অথবা মা এইচআইভি পজিটিভ হলে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। তাই বিয়ের আগে প্রত্যেকের উচিত এইচআইভি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া।
আরও পড়ুন-বিএসএফের অত্যাচারের প্রতিবাদে পথ-অবরোধ
চিকিৎসা কোথায় হয়?
এইচআইভি-র ওষুধ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সমস্ত জায়গায় পাওয়া যায় না। সরকার এই ওষুধ বাজারে বিক্রি করতে দেয় না। কারণ খোলাবাজারে ওষুধ পাওয়া গেলে যে কেউ খেয়ে বিপদ ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই এইরকম সিদ্ধান্ত। এই চিকিৎসা হয় মূলত কিছু সরকারি হাসপাতালে। ন্যাকোর গাইডলাইন অনুযায়ী। এলাকা ভাগ করা আছে। আমাদের মেডিক্যাল কলেজেই একটা এইচআইভি চিকিৎসা সেন্টার আছে। সেটা অবশ্য শিশুদের জন্য। এটা সেন্টার অফ এক্সেলেন্স। কলকাতার ট্রপিক্যালেও এইচআইভি-র খুব ভাল চিকিৎসা হয়। এইরকম বিভিন্ন জায়গায় আরও অনেক সেন্টার আছে। আক্রান্ত পেশেন্টরা এইসব সেন্টার থেকেই ওষুধ নেয়। যার ফলে ডোজটাও ঠিক থাকে, রেগুলার ফলোআপ হয়। ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি সেন্টার থেকে বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যাতে মানুষ সচেতন হতে পারে। আগের থেকে মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে।
আরও পড়ুন-চালসা স্টেশনে গাছ পড়ে বন্ধ ট্রেন চলাচল
কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?
যৌন মিলনের সময় প্রোটেকশন নিতে হবে। ব্লাড ট্যান্সমিশনের সময় স্বাস্থ্য কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কোনো ভাবেই এইচ আই ভি আক্রান্তের রক্ত শরীরে প্রবেশ করতে না পারে। রক্ত নেওয়ার পর ছুঁচ হাতে ফুটে গেলেই বিপদ। কার শরীরে কী আছে, কে জানে! এখন অপারেশনের আগে এইচআইভি পরীক্ষা মোটামুটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করতে পারলে খুব ভাল হয়। তাতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়। তার ফলে আক্রান্ত সুস্থ থাকতে পারে। চিহ্নিতকরণ হয়ে গেলে আর একটা সুবিধা, আক্রান্ত সমাজে আর রোগটা ছড়াতে পারবে না। বেশ কিছু দেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা কমে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-ময়নাগুড়ি নাবালিকা-কাণ্ডে মুখ পুড়ল বিজেপির, রাজ্যের তদন্তে হাইকোর্টের আস্থা
আমাদের দেশে কী অবস্থা?
আমাদের এখানে সমস্যা আছে। বিশেষত কসমোপলিটন সিটিতে। কারণ সেখানে নানা ধরনের মানুষের আসা-যাওয়া। তাদের হেলথ স্ট্যাটাস জানা যায় না। ঘটে চলে অসুরক্ষিত যৌন মিলন। স্বাভাবিক ভাবেই সমস্যা গুরুতর হয়ে ওঠে। যদিও এখন ওষুধ বেরোনো এবং রেগুলার টেস্টিং-এর ফলে নির্ধারণ এবং অসুখ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন-অবশেষে হেরিটেজ তকমা পেল পশ্চিম মেদিনীপুরের রানি শিরোমণি গড়
১৮ মে বিশ্ব এডস ভ্যাকসিন দিবস। এই দিনটি সম্পর্কে কিছু বলবেন?
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করছেন। আশা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি এডস-এর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হবে। ১৮ মে দিনটি নির্ধারিত করা হয়েছে এটা স্মরণ করানোর জন্য যে, গবেষকদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যাতে দ্রুত এইচআইভি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা যায়। তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে সারা পৃথিবী। এই যে তাঁরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন, তার জন্য বিশেষ দিনটিতে তাঁদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। পাশাপাশি এডস নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়। ১ ডিসেম্বর এডস দিবসেও এই অসুখ নিয়ে আমরা জনসাধারণকে সচেতন করে থাকি। এর ফলে এখন মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে সারা পৃথিবী উপকৃত হবে। যদিও এই আবিষ্কার সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যেতে হয় বিভিন্ন প্রিক্লিনিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল ফেজের মধ্যে দিয়ে। করতে হয় নানা গবেষণা। তারজন্য প্রয়োজন হেলদি ভলান্টিয়ার। এইসব পেরিয়ে তারপর পড়ে চূড়ান্ত সিলমোহর। তবে আমরা আশাবাদী, সফল হবে রিসার্চ, একদিন আবিষ্কৃত হবে ভ্যাকসিন।