সামরিক বা অসামরিক বিমান চলাচলে আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণের খবর প্রতি মুহূর্তে প্রয়োজন। যে কারণে প্রতিটি বিমানবন্দরেই (Airport- Weather) আবহাওয়া অফিস থাকাটা বাধ্যতামূলক। তাই বিমানবন্দরে এই আবহাওয়া দফতরের কাজের পরিধি যেমন বড় কর্মী সংখ্যার প্রয়োজনও বেশি।
মেটার তথ্য
কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরে বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা সত্ত্বেও সেখানে কর্মিসংখ্যা শতাধিক। কারণ এখানে চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। নানা রকম বৈদ্যুতক সংবেদশীলতা যুক্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি রানওয়ের পাশে রাখা হয়। একে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলি কারেন্ট ওয়েদার ইন্সট্রুমেন্টস সিস্টেম সংক্ষেপে CWIS। এখানে বায়ুর তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাতাসের গতি, দিক দৃশ্যমানতা ইত্যাদি মাপার নানা ধরনের যন্ত্রপাতি থাকে। এই যন্ত্রের তথ্য অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন বা (ICAO) এর মান্যতা অনুসারে মেটিরিওলজিকল অ্যাভিয়েশন রিপোর্ট সংক্ষেপে মেটার(METAR) তৈরি হয়। ICAO অনুযায়ী সাধারণত ৩০ মিনিট সময় বাদে বাদে মেটার (METAR)প্রস্তুত করা হয়। এই মেটার-এ আগামী দুই ঘণ্টায় আবহাওয়ায় কী পরিবর্তন হতে চলেছে তাও বর্ণনা করা থাকে । পাইলট যাঁরা বিমান চালাচ্ছেন তাঁরা সবাই এই মেটার-এর তথ্য ভাল করে দেখেন কারণ যদি কোনও তথ্য বিমান (Airport- Weather) চলাচলের অনুকূলে না থাকে তবে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।
কোন কোন ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা
যেমন কয়েকটি সমস্যা থাকলে এমন বিপর্যয় ঘটতে পারে। যদি কোনও সময় বাতাসের গতি ৩৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় এর বেশি হয়৷
বাতাসের দিক রানওয়ের ডান হাতের দিক অথবা বাম হাতের দিক হয়।
দমকা হাওয়া ৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় হয়, তবে বিমান রানওয়ের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পাইলট সাধারণত বাতাসের গতির বিপরীত দিক থেকে অবতরণ বা টেক অফ- এর চেষ্টা করেন, এর ফলে বাতাসের ঘর্ষণ এর জন্য অনেক কম রানওয়ের প্রয়োজন হয়।
ভিজিবিলিটি বা দৃশ্যমানতা যদি ৮০০ মিটারের কম হয় তবে পাইলট রানওয়ে ভাল করে দেখতেই পাবে না, কাজেই সমূহ সম্ভাবনা বিপদের।
তেমনই যদি তাপমাত্রা বেশি, আর্দ্রতা বেশি হয়, তাহলে বাতাসের ঘনত্ব কমে যাবে। এতে বিমানের ওজন বহন ক্ষমতা কমে যাবে আর রানওয়ের দৈর্ঘ্য অনেক বেশি লাগবে অবরত বা টেক অফ-এর জন্য। কেননা বাতাসের ঘনত্ব কমে গেলে ঘর্ষণ-বল কমে যাবে।
বায়ুমণ্ডলের চাপ কত না জানা থাকলে বিমান কত উচ্চতায় বুঝতেই পারবে না। যে কোনও পাইলট উচ্চতা ও জ্বালানির ওপর নজর সবচাইতে বেশি দেয়। তাই বায়ুমণ্ডলের চাপ সবচাইতে নির্ভুল হাওয়া উচিত।
মেঘের পরিমাণ খুব বেশি এবং উচ্চতা খুব কম হয় তাহলে পাইলট ওপর থেকে রানওয়ে দেখতে পাবেন না, কাজেই বিপদের আশঙ্কা। প্রতিটি বিমানের গঠন এবং প্রযুক্তি ওপর নির্ভর করে মেটার তথ্য এর ওপর নির্ভর করে চলাফেরা করে।
আরও পড়ুন-হারানো চাকরি ফেরানোর দাবিতে শিক্ষকদের বিধানসভা অভিযান, পাশবিক বিজেপি পুলিশ
রাতের বিমান
তাহলে রাতের বেলা বিমান অবরতণ বা টেক অফ করে কী করে? যে কোনও উন্নত বিমানবন্দরগুলোতে (Airport- Weather) রানওয়ের দুই পাশে বৈদ্যুতিক লাইট লাগানো থাকে ৬০ ফুট বাদে বাদে। এর দুরকম সুবিধা।
প্রথমত রানওয়ে দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয়ত পাইলট কতগুলো লাইট দেখতে পাচ্ছে— সেই অনুযায়ী দৃশ্যমানতা কতটা সেটা বুঝতে পারছে।
বিমানবন্দরে রানওয়ের বিভাগ রয়েছে। CAT III রানওয়ের ক্ষেত্রে রানওয়ের মাঝ-বরাবর আর-এক প্রস্থ লাইটের ব্যবস্থা থাকে।
কলকাতা বিমানবন্দর হল ক্যাট ৩ (CAT III) শ্রেণির। এই শ্রেণির বিমানবন্দর তৈরি খুব ব্যায়বহুল। দিল্লি IGI এয়ারপোর্ট ক্যাট ৩ বি (CAT III B ) শ্রেণির।
CAT III বিমানবন্দরগুলোর রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২৪০০ মিটার-এর বেশি হতে হবে। রানওয়ের দুই প্রান্তেই CWIS , দুটি মেঘের উচ্চতা মাপার যন্ত্র বা সেলোমিটার, তিনটি দৃশ্যমানতা মাপার যন্ত্র বা আরভিআর, ক্যাট III B-তে ৫টি আরভিআর। ক্যাট III রানওয়েতে ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম বা আইএলএস থাকতে হবে।
বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে পারে, বিমানে ভয়ানক অসুস্থ প্যাসেঞ্জার থাকতে পারেন এই কারণে বিমানবন্দরের উন্নতীকরণ জরুরি যাতে আবহাওয়া খারাপ হলেও বিমান নিরাপদে ল্যান্ড করানো যায়। CAT III-তে দৃশ্যমানতা ২০০ মিটার আর CAT III B-তে দৃশ্যমানতা শূন্য হলেও বিমানকে নিরাপদে অবতরণ করানো সম্ভব। তখন বিমান বন্দরে লো ভিজিবিলিটি প্রটোকল বা এলভিপি আরোপ করা হয়, যা আদতে একধরনের জরুরি অবস্থা, তখন ফায়ার বিগ্রেড, মেডিক্যাল টিম ইত্যাদি সংস্থা চরম সতর্ক থাকে।
ঘটনা নয় দুর্ঘটনা
কালিকটের ৭/৮/২০ এয়ার ইন্ডিয়া বিমান, খারাপ আবহওয়ার জন্য দুর্ঘটনা হয়, ১৮ জনের মৃত্যু এবং ২৭২ জন আহত হয়।
ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে, ২২/০৫/২০১০ খারাপ আবহাওয়ার জন্য দুর্ঘটনা, ১৫৮ জনের মৃত্যু এবং ৮ জন আহত। বিমানবন্দর দুটি CAT III শ্রেণির হলে হয়তো দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হত।