প্রতিবেদন : দেশের অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত। মধ্যবিত্তের মাথায় হাত। ভবিষ্যৎ জীবনে নিশ্চিত নিরাপত্তার আশায় সাধারণ মানুষ কষ্টার্জিত টাকা বিনিয়োগ করেন যে এলআইসি-তে, সেখানেই এখন প্রবল নিরাপত্তাহীনতা। অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় অনেকেই টাকা তুলে নিচ্ছেন পলিসি ম্যাচিওরড হওয়ার আগেই। গ্রাহকদের জানা নেই আমানতের টাকা তাঁরা আর আদৌ ফেরত পাবেন কি না। এই পরিস্থিতির মধ্যেই এলআইসি-তে চলছে ব্যাপক ছাঁটাই। গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর গলাগলির পরিণতিতে রীতিমতো আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি ভারতীয় অর্থনীতি। আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করে দেশের সবচেয়ে বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সংস্থা এলআইসি-র ক্ষতি হল প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
আরও পড়ুন-এত রাগ কেন?
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আদানি গ্রুপের ৫টি বৃহৎ সংস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত এলআইসির শেয়ারের বাজারমূল্য এই প্রথম নেমে গেল ক্রয়মূল্যের নিচে। শুক্রবার দিনের শুরুতে শেয়ারের দর ছিল ৫৯১ টাকা। দিনের শেষে তা নেমে দাঁড়ায় ৫৮৪.৬০ টাকায়। দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে আদানি গ্রুপে এলআইসি-র শেয়ার নেগেটিভ হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ধস নামে জীবনবিমা নিগমের বাজারদরে। আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এলআইসি, ব্যাঙ্কের অর্থনৈতিক দুরবস্থা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বারবার। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর মাখামাখির পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার সাক্ষী হল দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতি। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার। ট্যুইটে বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ, জালিয়াতিতে ভরা আদানি গোষ্ঠীতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল এলআইসি। চেয়ারম্যানের নিজের লাভের জন্য। ফলে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এলআইসির এই বিপর্যয়ের জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করে পথে নামছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ। বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন-মন জয়ের চেষ্টা কেন্দ্রর, সড়কে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ
ভয়াবহ চিত্র : তথ্য বলছে, শেয়ার বাজারে আদানি গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত ৭টি সংস্থায় ব্যাপক ধস নেমেছে। এর পরিণতিতে জীবনবিমা নিগমের ক্ষতির অঙ্ক ৪৯ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি গ্রিন এনার্জি-সহ আদানি গোষ্ঠীর ৫টি বৃহৎ সংস্থায় জীবনবিমা নিগমের যে বিনিয়োগ ছিল তার মূল্য কমে গিয়ে ৮২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। পতনের অঙ্ক প্রায় ৮০ শতাংশ। এককথায়, আদানি গোষ্ঠীতে যে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছিল জীবনবিমা নিগম, তার পুরোটাই কার্যত জলে গিয়েছে। সম্পদ বৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টে সম্পদ হারিয়েছে এলআইসি। ২৫ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টেই মিলেছিল স্পষ্ট ইঙ্গিত। লক্ষণীয়, ২৪ জানুয়ারি আদানিদের তালিকাভুক্ত ১০টি সংস্থার মোট শেয়ারমূল্য ছিল ১৯ লক্ষ কোটি টাকা। মাত্র একমাস পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি এই অঙ্কটা নেমে দাঁড়ায় ৭.২ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ আদানিদের শেয়ারে ধসের অঙ্কটা প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সামনেই প্রাক্তনীদের ঢুকতে বাধা, উপাচার্য বিরোধী পোস্টার
ভয়ঙ্কর পরিণতি : আর্থিক ক্ষতির পরিণামে ব্যাপক ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে এলআইসি। কাজ হারাচ্ছেন এজেন্ট এবং ডেভেলপমেন্ট অফিসাররা। অনেক এজেন্ট আগ্রহ হারিয়ে সরে যাচ্ছেন। এফএম রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিয়ে এজেন্ট খুঁজতে হচ্ছে এলআইসিকে। অনেক আমানতকারী আগেই তুলে নিচ্ছেন টাকা।