প্রতিবেদন : সারদাকর্তা (Sardha Scam) সুদীপ্ত সেনের অভিযোগকে মান্যতা দিল আদালত। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তাঁর দেওয়া চিঠি নিয়ে তদন্ত করতে পারবে কাঁথি থানা। বুধবার জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে রায় জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এর ফলে এই তোলাবাজির মামলায় এবার রাজ্য পুলিশের তদন্তের মুখে পড়তে হবে শুভেন্দুকে। একই সঙ্গে তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকেও। কেননা ওই সময় সৌমেন্দুই ছিলেন কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান। হাজার ছলছাতুরি ও চেষ্টা করেও রাজ্য পুলিশের তদন্ত এড়াতে পারল না কাঁথির বীরপুঙ্গব। এদিন হাইকোর্টের রায়ের পর দুর্নীতির মামলায় ফেঁসে গিয়ে ভয়ে চুপ মেরে গিয়েছে রোজ টিভি ক্যামেরার সামনে হুপহাপ-হুঙ্কার দেওয়া শুভেন্দু। এখন আর রা কাড়ছে না।
রাজ্য পুলিশের তদন্তের মুখে যাতে পড়তে না হয় তার জন্য কায়দা করে এক আইনজীবীকে দিয়ে জনস্বার্থ মামলা করানো হয়। আদালতে বলা হয়, এই ঘটনা সিবিআই তদন্ত করুক এবং সারদার মূল মামলার সঙ্গে যোগ করা হোক। কিন্তু বুধবার সেই মামলা এবং আর্জি খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
কাঁথি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ধর্মদাসবাড় মৌজায় ১৯ তলা বিল্ডিংয়ের জন্য ২০১১-র ২৯ মে সুদীপ্ত সেনের পক্ষে সারদা রিয়েলিটি ইন্ডিয়া লিমিটেডের জন্য প্ল্যান অনুমোদন করেছিল কাঁথি পুরসভা। এই পুরসভায় সাধারণত চারতলার বেশি অনুমোদন দেওয়া হয় না। এত বড় প্ল্যান পাশের কোনও বোর্ড রেজলিউশনও নেওয়া হয়নি। তখন পুরপ্রধান ছিলেন রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতার ভাই তথা বিজেপির বর্তমান কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক সৌমেন্দু অধিকারী। ইতিমধ্যে রহস্যজনকভাবে কাঁথি পুরসভা থেকে সারদার ফাইল লোপাট করা হয়।
আরও পড়ুন-দুয়ারে রেশনে নিষেধাজ্ঞার জেরে সরব গোটা বাংলা
সুদীপ্ত সেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, কাঁথিতে সারদা (Sardha Scam) রিয়েলিটির প্ল্যান পাশ করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ড্রাফটে টাকা নেওয়া হয়। এ-ছাড়াও ক্যাশে কোটি কোটি টাকা নিয়েছে শুভেন্দু। এই অবৈধ লেনদেনে জড়িত সৌমেন্দুও। তদন্ত থেকে বাঁচতে সিবিআই তদন্ত চাওয়া হয়েছিল। কেন সিবিআই তদন্ত? এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিল অধিকারী ব্রাদার্স। সিবিআই কেন্দ্রের এজেন্সি। ফলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। যেভাবে প্রত্যেকটি মামলায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে সারদার মূল মামলার মধ্যে এই মামলাকে ঢুকিয়ে দিয়ে সিবিআইয়ের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বাদ সাধল শেষে কোর্টই।
কাঁথি আদালতের এক আইনজীবী তথ্যের অধিকার আইনে জানতে চাইলে পুরসভা জানায়, ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না। ফাইল কারা সরাল? পিছনে কারা? কোন গোলমাল ধামাচাপা দিতে ফাইল উধাও হল? বর্তমান পুরপ্রধান সুবল মান্নার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে কাঁথি থানার পুলিশ।
গত ৩০ জুন ব্যাঙ্কশাল আদালতে যাওয়ার সময় সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন সংবাদমাধ্যমের কাছে একগুচ্ছ বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ম্যানিপুলেশন করে অনেকরকম ভাবে অনেক টাকা নিয়েছেন। কন্টাইয়ে একটা হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের জন্য ডিপোজিট করিয়েছেন। এ-ছাড়াও আরও টাকা নিয়েছেন। এমনকী সারদাকর্তা বিরোধী দলনেতার ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর নামও নিয়েছিলেন। তারপরই কাঁথি পুরসভার বর্তমান পুর প্রধান সুবলকুমার মান্নার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার তদন্তে নেমে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে কাঁথি থানার পুলিশ সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মেলে বহু তথ্য। তদন্তে নেমে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর নথি পুলিশের হাতে আসে। সুদীপ্ত সেন ড্রাফটে টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই ড্রাফটের প্রতিলিপি মেলে। এই তথ্যে প্রমাণিত হয় সুদীপ্ত সেন জেল থেকে আদালতকে চিঠি লিখে যে অভিযোগ করেছিলেন তার সত্যতা রয়েছে। নিশ্চিতভাবে এই তদন্তে বেকায়দায় পড়তে চলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন আইনি বয়ান মেনে তথ্য দিয়েছেন। সুদীপ্ত সেন যে ব্যাঙ্ক ড্রাফটের কথা বলেছিলেন। সেটার খোঁজ পাওয়া গেছে। যারা চুরি করেছে, লুঠ করেছে তাদের গায়ে ফোস্কা পড়ছে। এই অভিযোগ কিন্তু গুরুতর অভিযোগ। কেন শুভেন্দু অধিকারীকে কাস্টডিতে নিয়ে তদন্ত হবে না। ঘটনার সময় তিনি প্রভাবশালী। তাদের পরিবারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। তাই তদন্ত করা উচিত।