মানস ভট্টাচার্য: চ্যাম্পিয়নের মতো খেলেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে চলে গেল। ভাবতেই পারিনি, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেবে লিওনেল মেসিরা। গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে এই ক্রোয়েশিয়ার কাছে এই একই ফলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। বলা যায়, মধুর প্রতিশোধ নিল তারা। আর মেসি তার কাপ-স্বপ্ন থেকে আর মাত্র একটি জয় দূরে থাকল। যে ছন্দে মেসি এবার খেলছে তাতে মনে হচ্ছে, এবার হয়তো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নপূরণের মাধ্যমে দিয়েগো মারাদোনার হাত থেকে ব্যাটন উঠতে চলেছে রোজারিওর ছেলেটির হাতে। এদিন জোড়া গোল করে আর্জেন্টিনার জয়ে বড় অবদান রাখল জুলিয়ান আলভারেজ। একটি গোল মেসির। একইসঙ্গে সতীর্থ আলভারেজকে দিয়ে একটি গোল করানোর পাশাপাশি মাঠে জাদু ছড়িয়ে আর্জেন্টিনার জয়ের আসল নায়ক জাদুকর এলএম টেন। চলতি বিশ্বকাপে পঞ্চম গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুটের দাবিদার। আলভারেজের গোলসংখ্যা দাঁড়াল চার। নীল-সাদা জার্সিতে ১১ গোল করে মেসি টপকে গেল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে।
আরও পড়ুন-পঞ্চায়েতের রূপরেখা তৈরিতে আজ বৈঠক
দু’টি দলই তাদের সেরা তারকার জন্য এবারের বিশ্বকাপটা খেলতে নেমেছিল। আর্জেন্টিনা তাদের অধিনায়ক লিওনেল মেসির জন্য আর ক্রোয়েশিয়া তাদের ক্যাপ্টেন লুকা মদ্রিচের জন্য। নিজেদের শেষ বিশ্বকাপে এক জন কিংবদন্তিকে এদিন বিদায় নিতেই হত। এদিন মদ্রিচদের গোটা ম্যাচে দমিয়ে রেখে দুর্দান্ত খেলে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল মেসির আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি ৪-৪-২ ফর্মেশনে দল নামালেও প্রেসিং ফুটবলের সময় পাঁচ মিডফিল্ডারে চলে গেল দল। প্রথম এগারোয় দু’টি পরিবর্তন আনেন স্কালোনি। কার্ড সমস্যার কারণে না থাকা গঞ্জালো মন্তিয়েল এবং মার্কোস আকুনার জায়গায় আর্জেন্টিনা কোচ নিয়ে আসেন টাগলিয়াফিকো এবং লিসান্দ্রো পারেদেসকে। এই ম্যাচটা আমি ‘ব্যাটল অফ দ্য মিডফিল্ড’ হিসেবে দেখছিলাম। লড়াইটাও শুরু হয়েছিল সেয়ানে-সেয়ানে। মদ্রিচের মতো প্লে-মেকার যেমন নেতৃত্ব দিচ্ছিল ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠে, তেমনই আর্জেন্টিনার মাঝমাঠে রডরিগো ডি’পল, ম্যাক আলিস্টার, পারেদেসরাও ছাপ ফেলে। প্রথম ১৫ মিনিট বলের দখল অনেক বেশি ছিল ক্রোয়েশিয়ার কাছে। বার বার আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছে তারা। আর্জেন্টিনাও সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ক্রোয়েশিয়া বক্সের মধ্যে ঢুকে গোলমুখ প্রায় খুলে ফেলেছিল মেসি, এনজো ফার্নান্দেজরা।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
৩৩ মিনিটে খেলার গতির বিরুদ্ধে দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফেরে আর্জেন্টিনা। বক্সের মধ্যে আগুয়ান আলভারেজকে ফাউল করে ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার লিভাকোভিচ। পেনাল্টি দেয় রেফারি। ছন্দে থাকা ক্রোট গোলকিপারকে পরাস্ত করে গোল করতে ভুল করেনি মেসি। এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এবারের বিশ্বকাপে নিজের পঞ্চম গোল করে কিলিয়ান এমবাপেকে ছুঁয়ে ফেলে মেসি। এর পর মাঠ জুড়ে শুধুই নীল-সাদার দাপট।
৩৯ মিনিটে আরও একটি গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলে আর্জেন্টিনা। অসাধারণ গোল করে সমর্থকদের মন জয় করে নেয় আলভারেজ। প্রতি আক্রমণে নিজেদের অর্ধে বল ধরে দুর্দান্ত একটি সোলো রান করে প্রায় ৫০ গজ দৌড়ে যায় ম্যাঞ্চেস্টার সিটির তরুণ ফরোয়ার্ড। তিন ক্রোট ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে গোলটি করে আলভারেজ। কিন্তু এই গোলের জন্য ক্রোয়েশিয়ার দুই ডিফেন্ডার সোসা ও জুরানোভিচ দায় এড়াতে পারে না। আলভারেজকে তারা আটকাতে পারেনি।
আরও পড়ুন-অবহেলিত উত্তর-পূর্বের রাজ্য, শিলংয়ে দাঁড়িয়ে নেত্রীর ঘোষণা মেঘালয়েই উঠবে নতুন সূর্য
বিরতির আগেই তৃতীয় গোল করে ফেলতে পারত স্কালোনির দল। মেসির কর্নার থেকে জোরাল হেড করেছিল ম্যাক আলিস্টার। কোনও রকমে সেই বল বাঁচায় লিভাকোভিচ। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে লোক বাড়িয়ে ক্রোয়েশিয়া খেলায় ফেরার চেষ্টা করলেও আর্জেন্টিনা রক্ষণ আরও মজবুত করে ফেলেছিল লিসান্দ্রো মার্টিনেজকে নামিয়ে। আর আর্জেন্টিনার গোলে এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে সেভাবে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। উল্টে ৭০ মিনিটে তৃতীয় গোলটি করে বিশ্বকাপ ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলে স্কালোনির ছেলেরা। এই গোলটিও আলভারেজের। তবে এই গোলটির পিছনে আসল অবদান সেই মেসির। ডান প্রান্তে গার্ডিওলের মতো ডিফেন্ডারকে ঘাড়ে নিয়ে স্কিলের মায়াবী মূর্ছনায় বক্সে ঢুকে যেভাবে অরক্ষিত জায়গায় আলভারেজের জন্য বলটি রাখে মেসি, তাতে ডান পায়ের শটে বল সহজেই জালে জড়িয়ে দেয় ২২ বছরের তরুণ স্ট্রাইকার। এর পর গোলের ব্যবধান আরও বাড়তে পারত আর্জেন্টিনার। কিন্তু সেটা হয়নি।