যত ভাবনা বাংলা নিয়ে !

এখানেই উঠছে প্রধান প্রশ্নটা। কেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখনও এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে?

Must read

বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক হয়ে গেল। এবং সেই বৈঠক পুরোদস্তুর পশ্চিমবঙ্গকেন্দ্রিক। বিজেপির মতো দলের জাতীয় পর্যায়ের বৈঠকে এরকমটা আগে কখনও দেখা যায়নি। কী এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এরকম পরিবর্তন? উত্তর খুঁজছেন জয়ন্ত ঘোষাল। আজ প্রথম পর্ব

আরও পড়ুন-চলে গেলেন পার্থ রুদ্র

এবারই প্রথম গেলাম তা কিন্তু নয়। প্রায় তিন দশকের অভিজ্ঞতা আমার। ১৯৮৭ সাল থেকে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক কভার করছি। কিন্তু আগে কখনও এমনটা দেখিনি।
জাতীয় কর্মসমিতি বিজেপি দলের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সংস্থা। যেমন সিপিএমের পলিটব্যুরো, একেবারে সেই রকম। সেই মর্যাদার। সমগুরুত্বের।

আরও পড়ুন-আত্মবিশ্বাসী উইলিয়ামসন, টসকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ফিঞ্চ

এই সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলটির এই ধরনের বৈঠকে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত। এমনটাই এতদিন ধরে দেখে আসছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এবারের বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতিতে যে ধরনের রাজনৈতিক হইচই হয়েছে সেটা কিন্তু আমি অতীতে কখনও দেখিনি।

অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ী বা লালকৃষ্ণ আদবানির সময় বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আলোচনা হত না এমনটা নয়। তবে সেটা হত অন্যভাবে। দলের সভাপতি রাজ্যওয়ারি বৈঠক করতেন শেষ দিনে। পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি এবং রাজ্য থেকে জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য যাঁরা থাকতেন তাঁদের সঙ্গে রাজ্যের সম্পাদকমণ্ডলীর একটা বৈঠক হত।

সেই বৈঠকে রাজ্য বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাত যে পশ্চিমবঙ্গে তারা কী কী করতে চাইছে, কীভাবে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়া কখনও-সখনও অনুপ্রবেশ বা এই ধরনের কোনও জাতীয় বিষয় নিয়ে পৃথক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কিন্তু সেটা খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে।

আরও পড়ুন-জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় (আইনজীবী)

এবারের ছবিটা কিন্তু একেবারেই অন্যরকম। চালচিত্র এবং প্রতিমা, পটভূমি এবং বাস্তব আলোচনার পরিধি ও প্রসৃতি, সবটাই অন্যরকম।
২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্ষমতায় আসতে না পারার যে ব্যর্থতা, যে গ্লানি, যে অসহায়তা, যে বোকা বনে যাওয়া, এই সব থেকে সম্ভবত এখন দলটা দ্রুত বের হতে চাইছে। পুরনোটা ভুলে নতুনের দিকে তাকাতে চাইছে। অর্থাৎ একটা তোয়ালে খুঁজে নিয়ে তা দিয়ে মুখে লেগে থাকা গ্লানিটা মুছে ফেলতে চাইছে। অন্ধকার টানেল থেকে বেরোতে চাইছে। হতাশা কাটিয়ে সামনের দিকে তাকাতে চাইছে।
এটা না হয় বোঝা গেল।

আরও পড়ুন-Sujay Chanda: সুজয় চন্দ (অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা ও সংগীতপ্রেমী)

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে বিজেপির কেন এত হইচই?
অতীত তাড়া করেছে বলে? নাকি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর নীল নকশা তৈরি করার আগ্রহে?
বোধ হয় এগুলোর কোনওটাই নয়। এসবের অন্যতম কারণ একেবারেই আলাদা। এই হইচই, মাথাব্যথা, মাথা ঘামানো, এসব শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য, এমনটা ভাবলে ভুল হবে।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর সান্নিধ্যই বড় পাওনা : ব্রজ

পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০০-র উপর আসন নিয়ে জেতা, তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতাসীন হওয়া, এই সব ঘটনায় প্রথম যে বিষয়টা ধাক্কা খেল, সেটা হল একটা মিথ। আর সেই মিথ মোদি ও অমিত শাহ বিষয়ক। মিথটা এরকম, মোদি এবং অমিত শাহ জুটি নিজেরা সক্রিয় হয়ে মাঠে নামলে তাঁরা কখনও হারেন না। এই যে একটা তৈরি হওয়া মিথ, যেটাকে বলা যায় এক ধরনের অল্টারনেট রিয়েলিটি বা বিকল্প বাস্তবতা, সেটা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী এখনও গড়ে তুলতে কিংবা অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই মিথটাকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছেন।
এখানে কিন্তু একটা প্রশ্ন উঠতে পারে।

তামিলনাড়ুতে স্ট্যালিনও তো এই একই কাজ করেছেন। কেরলে সিপিএম জিতেছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপি হেরেছে। ক্ষমতায় আসতে আসতে কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা। শারদ পাওয়ারের চাতুর্যের কাছে পরাস্ত হয়েছে বিজেপি। ছত্তিশগড়েও কংগ্রেসই ক্ষমতায় এসেছে, বিজেপি আসতে পারেনি। এসব তো ঘটেইছে। তাহলে কেবল পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এত মাতামাতি কেন?
কারণ আছে। এবং সে কারণটা আদৌ দুর্লক্ষ্য নয়।

আরও পড়ুন-Kunal Ghosh Art Exhibition: শিক্ষাগুরু অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন শিষ্য কুণাল ঘোষের হাতে

পশ্চিমবঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়ার পর এবারের যে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক তাতে প্রধান বিষয় ছিল আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা উপনির্বাচন। উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর এবং গোয়া। এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের রণকৌশল নিয়ে আলোচনাই ছিল এই বৈঠকের বিষয়বস্তু। পশ্চিমবঙ্গে কেন দল হারল, সেই ভোটের ফলাফলের তাৎপর্য কী, তা নিয়ে ময়নাতদন্ত হওয়া সেখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়।

অতীতের ভোটের ফলাফলের বিশ্লেষণ করে তার প্রেক্ষিতে সামনের দিকে এগনোর রণকৌশল গ্রহণ করা, এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু এবারে যেটা হল, সেটা একেবারেই অন্যরকম। অভূতপূর্ব। পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের থেকেও সদ্য অতীত পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন বেশি গুরুত্ব পেয়ে গেল। বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডা তাঁর প্রারম্ভিক ভাষণে বারবার বলতে লাগলেন যে, বিজেপি আসলে পশ্চিমবঙ্গে পরাস্ত হয়নি, বরং বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এসেছে। বিজেপি তিনটে আসন থেকে ৭৭টা আসন পেয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখানেই শেষ নয়।
এরপর বিজেপির বিভিন্ন নেতারা তাঁদের আলোচনাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। রাজ্যপাল বারবার সে কথা জানাচ্ছেন। সন্ত্রাস চলছে, বিজেপি কর্মীদের ওপর কীভাবে মারধর হচ্ছে, শুভেন্দু অধিকারী সেই সমস্ত অভিযোগ জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ তুলে মমতা বিরোধিতার একটা ঝড় বিজেপির শীর্ষ নেতারা তুললেন।

এখানেই উঠছে প্রধান প্রশ্নটা।
কেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখনও এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে? (এরপর আগামিকাল)

Latest article