বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: শরৎ এলেই বিষাদের ছায়া নামত অসুর সম্প্রদায়ের জীবনে। সারা বাংলা যখন শারোৎসবে শারদ মেতে উঠত ,তখন পুজার চারদিন অসুর নাশিনি দূর্গার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে গৃহবন্দি থাকত এই সম্প্রদায়। বির্সজনের পর অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ নদীতে স্নান করে তবেই বাইরে বের হতেন।
সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে বর্তমান প্রজন্মের অসুর সম্প্রদায়ের চিন্তা ভাবনা । বর্তমানে সেই রীতি ভেঙে উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ এখন দেবী দুর্গার আরাধনায় নিজেদের শামিল করছেন।যেখানে দুর্গাপুজা দেখতেন না এই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা, পুজোর কদিন কালো কাপড় টাঙিয়ে রাখতেন বাড়ির দরজায়, সেখানে এখন পুজায় নতুন জামাকাপড় পরেন তাঁরা । আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লকের মাঝের ডাবরি চাবাগানে রয়েছে অসুর সম্প্রদায়ের বসবাস।
আরও পড়ুন : দশ হাতে অস্ত্র নয়, দশটি ফুল থাকে দশভূজার হাতে
তাঁরা বেশিরভাগ চাবাগানের শ্রমিক , কেউ কেউ কাজ করেন বিভিন্ন দোকান বাজারেও। আলিপুরদুয়ার জেলা ছাড়াও ডুয়ার্সের জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা, বানারহাট, চালসা তে এই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। মাঝেরডাবরি চাবাগানের সীমা অসুর জানান, আমরা নিজেদের অসুরের বংশধর বলে মনে করি।। আমাদের পুর্বপুরুষরা দুর্গা পুজায় সামিল হতেন না।এখন সকলের সঙ্গে আমরাও শামিল হই দুর্গা পুজায়।। লোক গবেষক প্রমোদ নাথ জানান,অসুর শুদ্র বংশের মানুষ এটা ঠিক। এরা অনার্য। মুলত দ্রাবির জনগোষ্ঠির ডুয়ার্সের অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ কিন্তু পৌরানিক অসুরের সাথে এই অসুরদের কোন যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট কোন প্রমান নেই। বরং আর্য অনার্য্যদের লড়াইয়ের যে কাহীনি অবলম্বনে অনেক পৌরানিক গল্প রচিত হয়েছে। সেভাবেই দুর্গার হাতে বধ হওয়া অনার্য অসুরকে এই বাস্তবের অসুরদের আদি বংশ বলে কোথাও কোথাও বর্ননা করা হয়ে থাকতে পারে। আর তার ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।