স্বাধীনতার স্বপ্ন
অ্যাকশনে ফিরলেন দেব। ‘ব্যোমকেশ’ মুক্তির আগে দিয়েছিলেন ইঙ্গিত। সেটা যে সত্যি, প্রমাণ পাওয়া গেল ‘বাঘা যতীন’-এর অফিসিয়াল টিজার দেখে। দেশাত্মবোধক এই ছবিতে একাধিক লুকে ধরা দিয়েছেন বাংলার সুপারস্টার। কখনও লম্বা দাড়ি, গোঁফ, মাথায় পাগড়ি, বিস্ফারিত চোখে পাঞ্জাবি লুকে, কখনও সাধুবাবার বেশে, কখনও আবার ক্ষতবিক্ষত মুখ। বোঝাই যাচ্ছে, ছবিতে অ্যাকশন যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে ইমোশনও। মাথা উঁচু করে তিনি বলেছেন, ‘ফিরে আমি আসবই, হয় স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়ে, নয়তো স্বাধীনতার স্বপ্ন হয়ে।’
আরও পড়ুন-ভাগীরথী-অজয়ের জলে ভাঙছে নদীপাড় দামোদরে নিখোঁজ ১, কাঁচাবাড়ি ভেঙে জখম ২
অস্বীকার করা যায় না
স্বপ্ন দেখেছেন দেব। শুধু পর্দায় নয়, বাস্তবেও। স্বপ্ন দেখেছেন অন্য ধরনের ছবি তৈরির। যে ছবি মাসের নয়, ক্লাসের। ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে তাঁর স্বপ্ন। মুক্তি পাচ্ছে একটার পর একটা ছবি। যেখানে তিনি ‘পাগলু’মার্কা হিরো নন, আপাদমস্তক চরিত্র হয়ে উঠছেন। এটা ঠিক, নিখুঁত নন তিনি। আছে প্রচুর ত্রুটি। তবে তাঁর চেষ্টার কাছে হার মানে বাকি সবকিছু। নেটিজেনদের সমালোচনায় বিদ্ধ হন প্রতি মুহূর্তে। ছবি মুক্তির আগে এবং পরে। তবু তিনি স্কোর করে বেরিয়ে যান। সরল হাসি ছড়িয়ে। শুধুমাত্র বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করে। সমালোচনা করা যায়। কিন্তু তাঁকে আজ কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। অস্বীকার করা যায় না বলেই দিনে দিনে বেড়ে যায় তাঁর সাহস। এগিয়ে যান রুচিশীল এক ছবি থেকে অন্য ছবিতে। ঠান্ডা মাথায়।
আরও পড়ুন-পুজোর মধ্যে ডাকা যাবে না অভিষেককে, ইডিকে স্পষ্ট বার্তা হাইকোর্টের
ঐতিহাসিক চরিত্রে
বাঘা যতীন হলেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে পালন করেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জার্মান প্লট তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর বুকে ছিল আগুন। চোখে ছিল দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন। তাঁকে নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম এবং বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়। বাঘা যতীনের জীবনকাহিনি নিয়ে আগেও বাংলায় ছবি তৈরি হয়েছে। সেই ছবি মুক্তি পেয়েছে ১৯৫৮ সালে। অভিনয় করেছেন ধীরাজ ভট্টাচার্য, নিমু ভৌমিক, ছায়া দেবী প্রমুখ। এবার তাঁর জীবনকাহিনি পর্দায় তুলে ধরছেন দেব। নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে। নামভূমিকায় তিনিই। এর আগেও ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘গোলন্দাজ’ ছবিতে তাঁকে দেখা গেছে ভারতীয় ফুটবলের আদিপুরুষ নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্রে। এই ধরনের চরিত্রে নামার আগে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা এবং পরিশ্রম করতে হয়। সেটা করেন দেব। যোগ্যতা যেমনই হোক, নিজেকে উজাড় করেন একশো শতাংশ। কাজের প্রতি থাকেন সৎ। তাঁর চেষ্টাটা ফুটে ওঠে পর্দায়। ‘বাঘা যতীন’ টিজারেও তিনি চমকে দিয়েছেন। ছবিটি ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রত্যাশা।
আরও পড়ুন-অভিনব পন্থা, ইনস্টাগ্রাম রিল দেখে অপরাধীকে গ্রেফতার পুলিশের
গানের জন্য
দ্বিভাষিক ছবি ‘বাঘা যতীন’। এবারের পুজোয় রিলিজ। বাংলা ভার্সন মুক্তি পাবে ১৯ অক্টোবর। হিন্দি ভার্সন আসবে একদিন পর, ২০ অক্টোবর। ছবির জন্য রূপম ইসলামের গাওয়া ‘এই দেশ আমার’ গানটি আগেই মুক্তি পেয়েছে। কিছুদিন আগে এসেছে ছবির দ্বিতীয় গান ‘বাঘা বাঘা হে’। গানটি গেয়েছে খুদে শিল্পীরা। যার মধ্যে রয়েছে কয়েকজন বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পীও। গানটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। ভরপুর প্রশংসা পাচ্ছে। এই গানের মাধ্যমে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর বীরগাথার সঙ্গে পরিচয় করানো হচ্ছে নতুন প্রজন্মের। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন নীলায়ন চট্টোপাধ্যায়। একটি অনুষ্ঠানে দেব মজা করে বলেছেন, ‘বাঘের থেকে গানের জন্য বেশি খরচ করেছি।’ সুরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘নীলায়ন একটা রত্ন। ভীষণ গুণী একটা ছেলে।’
আরও পড়ুন-ব্যক্তিগত আলোচনা চান কানাডার বিদেশমন্ত্রী
অভিনেতার খোঁজে
‘বাঘা যতীন’ ছবিতে দেবের বিপরীতে থাকছেন নবাগতা সৃজা দত্ত। এ ছাড়া সুদীপ্তা চক্রবর্তীকে দেখা যাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। পরিচালনা করেছেন অরুণ রায়। কিছুদিন আগেই জানা গেছে, ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন দেব। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচালকের সঙ্গে নিজের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘বাঘা যতীনের পিছনের আসল মানুষ। আমার বন্ধু। আমার পরিচালক। অসাধারণ প্রতিভাধর। তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে ওঠো অরুণদা। তুমি জানো তোমাকে আমরা কতটা ভালবাসি।’ এই দেব মানবিক। এইভাবেই তিনি সবার পাশে থাকেন। এগোতে পছন্দ করেন অন্যদের সঙ্গে নিয়ে। উন্নত মানসিকতাই তাঁকে অনেকের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কিছুদিন আগেই ব্যোমকেশ ছিলেন। এখন বাঘা যতীন। সে তো পর্দায়। আসল মানুষটির বিন্দুমাত্র বদল ঘটেনি। যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। মাটির কাছাকাছি। মানুষের কাছাকাছি। যত বেশি দেখেন, তত বেশি শেখেন। দেখতে দেখতে শিখতে শিখতে হয়ে উঠছেন পরিশীলিত। আয়নার সামনে দাঁড়ালে তারকা নয়, একজন অভিনেতাকে খোঁজার চেষ্টা করেন। সেই খোঁজ শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। চলছে। আগামী দিনেও চলবে।