প্রতিবেদন : বাংলায় সবুজ ঝড়। সমস্ত এক্সিট পোলের চক্রান্তকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়ে লোকসভায় তৃণমূল যে শুধু আসন বাড়াল তাই নয়, ভোটের মধ্য দিয়ে বাংলা বুঝিয়ে দিল মোদির গ্যারান্টি আসলে ৪২০, তাঁদের ভরসা তৃণমূলনেত্রী আর অভিষেকের গ্যারান্টিতে। তৃণমূলকে মানুষ যে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন তা ডায়মন্ড হারবার থেকে শুরু করে যাদবপুর, বসিরহাট, হুগলি, জয়নগর, কলকাতা দক্ষিণ, বারাসত-সহ প্রায় ১২ জনের বেশি প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটে জিতেছেন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কেন্দ্রে ৪ লক্ষ ভোটে জেতানোর আবেদন জানিয়েছিলেন। মানুষ ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে তাঁকে সর্বকালীন রেকর্ড ৭ লক্ষের বেশি ভোটে জিতিয়েছেন। বেশ কিছু আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। কিন্তু সে নিয়ে কড়া প্রশ্ন রেখেছেন নেত্রী। বলেছেন, বেশ কিছু আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জেতার পরও জয়ী ঘোষণা করা হয়নি। বিজেপির পছন্দের অবজারভার পাঠিয়ে এসব কাজ করছে। নইলে তৃণমূলের আসন আরও বাড়ত। ২০২১-এর নন্দীগ্রামের মতো চক্রান্ত হচ্ছে। এর জন্য যতদূর যেতে হয় যাব।
আরও পড়ুন-হাসনে ধরাশায়ী প্রজ্জ্বল রেভান্না
লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর মা-মাটি-মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে কালীঘাটের বাসভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, মানুষই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। মোদিজি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি এতে আমি খুশি। নৈতিক হার স্বীকার করে অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। দেশের মানুষ বিজেপিকে এককভাবে জিততে দেননি। এজেন্সির অত্যাচার, মিডিয়ার একাংশের অত্যাচার, বিচারব্যবস্থার একাংশের অন্যরকম রায়, মানি-পাওয়ার সবকিছুর বিরুদ্ধে মানুষ এই রায় দিয়েছেন। মোদি-শাহর অহঙ্কার চূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা যা করেছেন তা ক্ষমাহীন অপরাধ। মানুষ তাঁদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন। উত্তরেও মানুষ আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। সেখানকার তথাকথিত এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মেরদণ্ড ভেঙে গিয়েছে। নেত্রীর সংযোজন, তথাকথিত বিরোধী দলনেতারও মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি রাহুল গান্ধী, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব-সহ জোটের বাকিদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে যাবেন জানিয়ে বলেন, এবার ভোটে সব থেকে বেশি অত্যাচার হয়েছে বাংলায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে সবটা করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশকে কাজে লাগানো হয়নি। যে পুলিশ অবৈধ টাকা নগদ উদ্ধার করেছে, তাকে বদলি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যতবার এসেছেন ততবারই বাংলার আইপিএস, আইএএস, আইসি বদল করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন জয়ী ইউসুফ পাঠানকে। নাম না করে অধীরকে বিজেপির এজেন্ট বলে কটাক্ষ করে বলেন, তিনি কংগ্রেসের নয়, বিজেপির লোক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কংগ্রেসকে বলেছিলাম এখানে দুটো আসন দিচ্ছি। লড়াই হোক। ওরা ১০০-র বেশি আসন পাবে। কিন্তু ওরা সেটা করল না। এখন আমার কথা মিলছে তো!
আরও পড়ুন-বিরোধী ঝড়ে ছারখার যোগী, ইন্ডিয়াকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু
এরাজ্যে অনেক আসনে বিজেপি টাকা ছড়িয়েছে। এই টাকা কোথা থেকে এল তার হিসেব দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে নেত্রী বলেন, ওরা বিজেপির কমিশনের মতো কাজ করেছে। আমাদের কোনও কথা শোনেনি। বিজেপি রিপোল চাইলে দিয়েছে। আমরা চাইলে দেয়নি। এটা কেন হবে? মানুষ এসব দেখছেন। জবাব দিয়েছেন। আগামী দিনেও জবাব দেবেন।
বাংলার বকেয়া নিয়ে নেত্রীর বক্তব্য, অবিলম্বে বাংলার টাকা দিয়ে দিক নতুন সরকার। না হলে দিল্লির বুকে কীভাবে আন্দোলন করতে হয় আমাদের জানা আছে। এপ্রসঙ্গে দিল্লিতে আন্না হাজারের আন্দোলনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে নেত্রী বলেন, আন্দোলন হবে। কীভাবে কেন্দ্রের সরকারের ভিত নড়িয়ে দিতে হয় তৃণমূল কংগ্রেসের জানা আছে।
এক্সিট পোল নিয়েও মিডিয়ার একাংশকে তুলোধোনা করেছেন নেত্রী। তিনি বলেন, এরা মরাল ভেঙে দিতে চেয়েছে, যাতে গণনাকেন্দ্রে গিয়ে লড়াই করতে না পারে এজেন্টরা। বিজেপির তৈরি করে দেওয়া এক্সিট পোল দেখানো হয়েছে। মানহানির মামলা করব আমরা। মোদির বিজ্ঞাপনের এতটাকা কোথা থেকে আসে তাও তদন্ত করে দেখা উচিত। কিন্তু কর্মীরা মাথা ঠাণ্ড রেখে দলের নির্দেশ পালন করেছেন গণনাকেন্দ্রে। আমি সর্বস্তরের তৃণমূলকর্মীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রে আর যা খুশি তাই হবে না, ইন্ডিয়া বৈঠকে অভিষেক
সন্দেশখালির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে নেত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানান, যে সন্দেশখালি নিয়ে এতো অপপ্রচার, সেখানেও আমরা জিতেছি। হাজি নুরুল ইসলাম জিতেছেন ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৪৭ ভোটে। আমি সন্দেশখালির মা-বোনেদের স্যালুট জানাচ্ছি। বিজেপি বাংলার মহিলাদের সম্মানহানি করেছে।