মণীশ কীর্তনিয়া, রাজাবালা (মেঘালয়): গত পাঁচ বছরে যারা জমি-দুর্নীতি-সহ একাধিক সীমাহীন দুর্নীতি করেছে তারা আজ বলছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে! তাহলে তো সবার আগে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়। বর্তমান সরকার দুর্নীতির সরকার। এই সরকারকে উপড়ে ফেলে দিন। বুধবার মেঘালয়ের রাজাবালার তিলাপাড়ায় উপচে পড়া জনসভায় এভাবেই দুর্নীতির প্রশ্নে এনপিপি-বিজেপিকে তুলোধোনা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, গুয়াহাটি-দিল্লিকে দেখিয়ে দিতে হবে, ওখান থেকে রিমোট কন্ট্রোলে নয়, মেঘালয়ের মানুষই ঠিক করবেন তাঁদের ভবিষ্যৎ৷ বাংলা পারলে মেঘালয়ও (Meghalaya) পারবে। অভিষেকের কথায়, নাড্ডা-শাহদের ভাঁওতায় বিশ্বাস করবেন না। আর মাত্র ৮ দিন। মেঘালয়ে পরিবর্তন হবেই। নতুন সূর্যের উদয় হবে এ-রাজ্যে। বাংলার (West Bengal) মডেলে হবে উন্নয়ন।
আরও পড়ুন: বেতন অর্ধেক করার সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে, উইপ্রো নিয়ে দাবি কর্মী সংগঠনের
এদিন নিজের বক্তব্যের শুরুতে অভিষেক বলেন, এক বছর আগে আমরা এখানে সংগঠন শুরু করেছিলাম। বলেছিলাম, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ব। আর আজ যত মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে পরিবর্তনের সরকার প্রতিষ্ঠা শুধু সময়ের অপেক্ষা। একইসঙ্গে বিজেপি (BJP) ও এনপিপি (NPP) সরকারকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, গত পাঁচ বছর বিজেপি ও এনপিপি এখানে সরকার চালিয়েছে। এখন অমিত শাহ, জে পি নাড্ডারা বলছেন, ‘এই পাঁচ বছর যারা দুর্নীতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন! আরে পাঁচ বছর তো আপনারাই সরকার চালিয়েছেন। এঁদের ভাঁওতায় আর বিশ্বাস করবেন না। সাফ কথা অভিষেকের। তাঁর সংযোজন, গত ৫ বছরে এখানে শুধু দুর্নীতি হয়েছে। একটাও উন্নয়ন হয়নি। মেঘালয়ে মাত্র বারোটা জেলা অথচ একটাও মেডিক্যাল কলেজ হয়নি। এটাই ডবল ইঞ্জিনের নমুনা। এখানেই না থেমে অভিষেক বলেন, এরা মেঘালয়ে ব্যাপক জমি দুর্নীতি করেছে। ৪৫ টাকায় জমি কিনে দালালদের মারফত ৮৫ টাকায় বিক্রি করেছে। প্রায় ১৫০ কোটি টাকার জমি দুর্নীতি। আপনাদের এই টাকা এরা পৌঁছে দিয়েছে দিল্লির মালিকদের। যাদের একটা খুটি পুঁতে ল্যাম্প জ্বালানোর ক্ষমতা নেই, এলাকায় জলের লাইন দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তাদের সরকারে বসার যোগ্যতা নেই। একইসঙ্গে বাংলার উদাহরণ টেনে বাংলার মতো লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য আর্থিক সাহায্য, সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলার মতো মেঘালয়েও (Meghalaya) দুয়ারে সরকার চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন অভিষেক। মুখরোয় পাঁচজন নিরীহ গ্রামবাসীর হত্যার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও তদন্ত হয়নি সেই প্রসঙ্গ তুলেও কনরাড সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এতদিন যেভাবে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে উপেক্ষিত অবহেলিত করে রাখা হয়েছে তার জবাব এবার আপনাদের দিতে হবে। সাফ কথা অভিষেকের। তাঁর সংযোজন, এদের শাস্তি দিতে পারবে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলই এমন একটা দল যারা কোনও অন্যায় শক্তির কাছে মাথা নত করে না। আমরাই বুকচিতিয়ে লড়তে পারি। আমরাই বিজেপিকে ল্যাজেগোবরে করেছি। আমরা মেঘালয়ে এমন মুখ্যমন্ত্রী চাই যে বিজেপি-এনপিপিকে সেই ভাষায় জবাব দেবে যেটা তারা বোঝে, এমন একটা দল চাই যে কারও কাছে মাথা নত করবে না, নিজের রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়াবে। এখানকার ভূমিপুত্রই মেঘালয়ের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে, ২৭ তারিখ তার সূচনা হবে। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, মেঘালয়ের ইনচার্জ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, মুকুল সাংমা-সহ একাধিক স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও দলীয় প্রার্থীরা।