সেকালের বাংলায় এই কুটির শিল্পকে অনেকে হস্তশিল্প, কারুশিল্প, শৌখিন শিল্পকর্ম, গ্রামীণ শিল্পও বলত। বর্তমানে শহর এলাকায়ও কুটির শিল্পের প্রসার ঘটছে আজকাল। তবে একসময় নকশি কাঁথা অতীত বাংলাদেশের গৌরব অর্জন করেছিল। সেকালের বাংলার প্রসিদ্ধ সুচিকর্ম হল নকশিকাঁথা। ১৩ ধরনের নকশি কাঁথা এক সময় আমাদের বাংলাদেশে তৈরি হত। সেই সব কাঁথাগুলির জনপ্রিয়তাও ছিল। বাণিজ্যিক ভাবে সফলও ছিল সেইসব কাঁথাগুলি। গ্রামীণ মহিলাদের হাতে বোনা সেই সব কাঁথাগুলি ছিল চিত্রিত কাঁথা। সেই সব মহিলা মহলের কাঁথাগুলিকে বলা হত মাটিকাঁথা, পাইড় কাঁথা। অতীত বাংলাদেশের সর্বত্র একসময় কাঁথা প্রস্তুত হত। তবে পদ্মাপারের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ঢাকার কাঁথা সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট মানের ছিল। আর গঙ্গাপারের নদিয়া, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, মুর্শিদাবাদ, মালদা, হুগলির বিভিন্ন অঞ্চলেও তৈরি হত কাঁথা। এই সব অঞ্চলের মহিলা শিল্পীরাও এক সময়ে সংসার বাঁচাতে, দু’-চার পয়সা ইনকাম করতে এই অঞ্চলে লেপ কাঁথা, দুজনী কাঁথা, দুরনীকাঁথা, আরশীলতা, ওড়কাঁথা, বাতায়নকাঁথা আর দস্তর কাঁথা তৈরি হত। দুই বাংলার এই সব অঞ্চলগুলিতে শীতলপাটি তৈরি হত। এক ধরনের চাটাই তৈরি হত, সে সময়ে যা মোরতা নামক গাছের বাকল থেকে তৈরি হয়। পশুপাখি, লতাপাতা এবং সামাজিক ডিজাইন দেখে এই শীতলপাটি তৈরি করা হয়। এতে লাল, নীল, সবুজ, কালো আর বেগুনি রঙের বাহারি সাজসজ্জা আঁকা হয়। সিলেটের রাজনগর, বালাগঞ্জ, বড়লেখা, নুয়াখালি, সিরাজগঞ্জ আর মোল্লার বাজার, সোনাগাজি, রায়পুর, বরিশাল এবং ফরিদপুর এলাকায় উন্নতমানের শীতলপাটি তৈরি হয়। কারুপাড়াভিত্তিক এই সব অঞ্চলে প্রায় ২৫ হাজার কারিগর শীতলপাটি তৈরি করে। এদেশে এক সময় রৌপ্য আর হাঁতির দাঁতের পাতি দিয়ে তৈরি করা হত শীতলপাটি। বাঁকুড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সাজানো হত শীতলপাটি। এক সময় গোটা বাংলার মহিলা মহলে গহনা শিল্পের কদর ছিল। সেই সব গহনা বাংলাদেশের নৃতাত্ত্বিক শিল্পের উল্লেখযোগ্য কুটির শিল্পের অঙ্গ ছিল। আর মেয়েদের সাজমহলে তার কদর ছিল খুব প্রাচীন কাল থেকেই। মহিলাদের অঙ্গের শোভাবর্ধনের জন্য বাঙালি মেয়েরা বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা ব্যবহার করে আজও। সেইসব গহনার ডিজাইনের মূল উৎস প্রকৃতি। সেই প্রকৃতির লতাপাতা, ফলমুল, পশুপাখি, নক্ষত্ররাজির মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর নেই। বাংলার মহিলামহলের সেই কুটির শিল্পের গহনার সংসারে, নানান গহনার নামকরণের মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্রময়তার খেলা। সেকালের গহনার মূল আকর্ষণের ছিল সিঁথিতে ঝাপা, টিকলি, কানে কানপাশা, হীরাম মুল কুড়ি, ঝুমকা, রত্নচূূর, নবরত্ন, চক্রবালি, নাকে বেশর নথ, ফুরফুরি, রিং, বালা, গলায় পুষ্পহার, সীতাহার, সাতনরী হার, চম্পাকলি, মোহনমালা, হাতে তাগা, মাদুলি বাজার মান্তাশা, রত্নচূড়, আঙুলে আঙ্গুষ্ঠার প্রভৃতি। সেকালের দস্তার শিল্পীরা, ডোকরার মহিলা শিল্পীরা এই শিল্পের কারিগর। ওপার বাংলার ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ফরিদপুর অঞ্চলের গহনা শিল্পে উল্লেখযোগ্য নাম ছিল। আর এপারের গঙ্গাপারের নগর কলকাতা, হাওড়া, হুগলির পাশাপাশি বর্ধমানের দুর্গাপুরেও গহনা শিল্পের জগৎ তৈরি হয়েছে। যার অনেকখানি জুড়ে রয়েছেন মহিলা শিল্পীরা। তবে বাঁকুড়ার বিকনা আর পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের দেরিয়াপুরের ডোকরা শিল্পীদের পাড়ায় মহিলা শিল্পীরা প্রায় সকলেই গহনা তৈরি করেন।
আরও পড়ুন-ভাষা রক্ষায় নারীরা
আজও পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের গ্রামে ঢুকে কিছুটা পথ এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে পাড়া জুড়ে চলছে একটি বিশেষ ধরনের কুটির শিল্প। বাঁশ কেটে কেটে সরু কাঠি বানিয়ে, তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে মাছ ধরার বিত্তি বা ঘুণি বানানোর কাজ। পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বিল্লেশ্বর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কোমডাঙা গ্রামে গেলে বর্ষার আগে চোখে পড়ে এই দৃশ্য। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন এই বিত্তি বা ঘুণি বানিয়েই। বড় বাঁশ কেটে ছোট ছোট কাঠি তৈরি করে। তারপর সুতো দিয়ে তা গেঁথে মাছ ধরার ছোট-বড় নানান মাপের বিত্তি বা ঘুণি তৈরি হয়। আর যা স্থানীয় হাটে বিক্রি করে, দিন চলে সেই বিক্রির টাকায় পরিবারগুলির। এই শিল্পের কাজে যুক্ত মহিলা শিল্পীরা মূলত। অপরদিকে টাঙ্গাইল তাঁতশিল্প বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো কুটিরশিল্পের একটি। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ছিল। আজও তার খ্যাতি রয়েছে। এই ঐতিহ্যবাহী শাড়ি ওপার বাংলার টাঙ্গাইল জেলায় তৈরি হয় আজও। পূর্ব বর্ধমানের হ্যান্ডলুম সেক্টর গ্রামীণ অর্থনীতিতে দ্বিতীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী বিভাগ। বহু তাঁতি এবং সহায়ক তাঁতি ছাড়াও বহু লোক এই পেশায় নিযুক্ত রয়েছে। বাঁকুড়ার তাঁতিদের মূল অঞ্চল হল বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, বাঁকুড়া, ইন্দপুর, তালদানা, সিমলাপাল এবং পাত্রসায়র ব্লক। সমবায় সমিতি, ক্লাস্টার, এসএইচজি, মাস্টার তাঁতি এবং অন্যান্যরা এই জেলায় কর্মরত। সুতি সেক্টরের পণ্যগুলি— বিছানার চাদর, ধুতি, গামছা, গৃহসজ্জার টুকিটাকি এবং রেশম সেক্টরের মধ্যে বালুচরি শাড়ি, স্বর্ণচারী, সিল্ক আর তসরের নানান সামগ্রী তৈরি হয়। রেশম তাঁতিরা বাঁকুড়া জেলাতে প্রধান ভূমিকা পালন করে আজও। সিল্ক বালুচারি শাড়িটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত শাড়ি, যা এজেলার মহিলা শিল্পীদের হাতেও তৈরি হয়। ১৯৫৬ সালের দিকে, বিষ্ণুপুরে বালুচরী শাড়ির উৎপাদন শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন-অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, কার, কোন উদ্দেশ্যপূরণে আনা হল?
শান্তিপুর আজও টেক্সটাইলের জন্য বিখ্যাত। অতীতে এই অঞ্চলে হাতে বোনা কাপড়ের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল। সরকারি অনুপ্রেরণা, সহায়তায় আজও প্রতিভাবান তাঁতিরা এখনও টিকে রয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষের পেশাকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছে অনেকেই। এদের পাশাপাশি সূক্ষ্ম বয়ন শিল্প আবারও বিকাশ লাভ করে বাংলায়। আজ, শান্তিপুর, ফুলিয়া, সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রাম এবং অম্বিকা কালনার বিস্তীর্ণ তাঁত বেল্টে বিচিত্র নকশা আর রঙের সূক্ষ্মভাবে বোনা পালক-স্পর্শ টেক্সটাইলগুলি। ফুলিয়া এবং সমুদ্রগড় বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ি সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে তৈরি জ্যাকোয়ার্ড এবং জামদানি কাজের সংমিশ্রণে বিশেষজ্ঞ। যেখানে শান্তিপুর অতি সূক্ষ্ম ধুতি এবং জ্যাকার্ডের জন্য আজও পরিচিত। বহু মহিলা শিল্পী এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
বাংলার সরকার কুটির শিল্পকে পুনর্গঠন এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিভিন্ন মহিলা কুটির শিল্পীদের নিয়ে তৈরি হয় সংঘ বা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর।
আরও পড়ুন-চোপড়ার শোকার্ত পরিবারের পাশে রাজ্য
সেই স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সাহায্যে সরকার মহিলা কুটির শিল্পীদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতাভুক্ত করে। সরকারি উদ্যোগে বাংলার জেলায় জেলায় শুরু হয় কুটির শিল্পীদের নিয়ে সরকারি কুটির শিল্প মেলা।
বাংলার এই প্রাচীন ধারার কুটির শিল্প মোট আটটি শ্রেণিভুক্ত। সেগুলি হল—
খাদ্য, পানীয়, তামাক প্রক্রিয়াকরণ শিল্প— দুগ্ধজাত, ফল প্রক্রিয়া ও টিনজাতকরণ, মৎস্য প্রক্রিয়া ও টিনজাতকরণ, আদা শুষ্ককরণ, ডালমিল, আটামিল, ময়দামিল, অন্যান্য শস্য কারখানা, তেল কল, চাল কল, মশলা চূর্ণকরণ, বেকারি, গুড় তৈরি, পশু খাদ্য, মুরগির খাদ্য, বরফ, খয়ের, লবণ তৈরি, মিষ্টান্ন, মধু প্রক্রিয়াকরণ, পানীয়, বিড়ি, হুক্কা, তামাক, জর্দা, মৌমাছি পালন, মৎস্য চাষ, ঘানির তৈল, হাঁস, মুরগি পালন, চিড়া, মুড়ি তৈরি।
বস্ত্র ও চামড়া শিল্প— সুতাকাটা, রেশমজাত দ্রব্য, হস্তচালিত তাঁত, বস্ত্র মুদ্রণ, জামদানি, সুচিকর্ম, হোসিয়ারি, মোজা তৈরি, উলজাত দ্রব্য, নারকেলের ছোবড়াজাত দ্রব্য, পাটের সুতা, ছিকা, মাছ ধরার জাল, পোশাক শিল্প, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়াজাত আসবাবপত্র, খেলাধুলার সামান, হুক্কা তৈরি, বাদ্যযন্ত্র, মাদুর শিল্প, কাঠ খোদাই, কাঠের কৃষি সরঞ্জামাদি, ঘর সাজানোর দ্রব্যাদি এবং কাঠের উপজাত।
মুদ্রণ ও মোড়ক-সহ কাগজ শিল্প— পুরনো কাগজজাত দ্রব্য, মুদ্রণালয়, বই বাঁধাই, কাগজের হস্তশিল্প, কাগজের ব্যাগ, কাগজের ফুল ইত্যাদি।
রাসায়নিক, পেট্রোলিয়াম ও রসায়নজাত শিল্প— অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানি আয়ুর্বেদীয় ঔষধ, ছাপা আর রঞ্জন শিল্প, রং এবং বাণিজ্য, আগরবাতি, প্রসাধনী সামগ্রী, সাবান তৈরি, বুট পলিশ, মোম তৈরি, চিরুনি ও বোতাম, মৃৎশিল্প, কাচ শিল্প, চুনজাত দ্রব্যাদি, শিল পাটা, চক তৈরি, শ্লেট- পেন্সিল, প্লাস্টিকের খেলনা, ফুল ব্যাগ ইত্যাদি।
অধাতব খনিজ শিল্প— চুনাপাথর, শামুকজাত চুন, রঙিন চক, খড়ি মাটি, শঙ্খজাত দ্রব্য, বোতাম, চুড়ি ইত্যাদি।
মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি-সহ ধাতব শিল্প— লৌহজাত আসবাবপত্র, ইলেট্রোপ্লেটিং, তারের জাল, ধাতব পাত, মুদ্রণ, তারকাটা, কাঁসা-পিতল, স্টিল ট্যাঙ্ক, মেশিনারি সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রপাতি, চুলের ক্লিপ, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, জুয়েলারি, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, কামার শিল্প প্রভৃতি।
হস্তশিল্পসহ অন্যান্য শিল্প—
এই সব শিল্পের সঙ্গে ছিল বাংলার মহিলাদের অন্তরের যোগ। বহু মহিলাই এই সব শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে থাকত যুক্ত। বাংলার প্রাচীন কুটির শিল্পের ইতিহাসে তাদের অবদান ছিল চিরস্মরণীয়। শুধু স্বদেশি আন্দোলনের সময়ই গোটা বাংলার মহিলাকুল ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। অর্থনৈতিক লড়াইয়ে বাংলার মহিলাদের কুটিরশিল্পের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
বাংলার মেদিনীপুর জেলার সবংয়ের মাদুরশিল্প আজও বিখ্যাত। সেই শিল্প সম্পর্কিত ইতিহাস, প্রচলিত গল্প-কাহিনি বহুকালের ঐতিহ্য বহন করছে। মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন জীবিকার মানুষের মধ্যে ঘুরে ঘুরে দেখেছি, তাদের আঞ্চলিক শিল্পের প্রতি প্রেম। কখনও গিয়েছি কাঁথি উপকূলের জেলেদের সমাজে, কখনও জেলার কৃষিজীবীদের মধ্যে, আবার কখনও ঝাড়গ্রাম মহকুমা এলাকা নিয়ে জঙ্গলমহলের পাহাড়-জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে গিয়ে দেখেছি বাবুইদড়ির শিল্প আর সেখানকার মহিলা শিল্পীদের কাজ। সত্যিই বিচিত্র তার স্বাদ।
গ্রামীণ মানুষের চাষাবাদ, মাছধরা বা শিকার-আহরণের সঙ্গে সঙ্গে তারা যেন কেমন অদ্ভুতভাবে স্বমহিমায় প্রাকৃতিক সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য ওই জেলাটির বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের সব কুটিরশিল্প গড়ে তুলেছিল!
আরও পড়ুন-চাকরি দেওয়ার নাম করে ভারতীয়দের যুদ্ধে, নামাচ্ছে রাশিয়া! অভিযোগ স্বীকার কেন্দ্রের
শুধু মহকুমাগুলোই নয়, থানা এলাকাগুলোতেও প্রকৃতি বিভিন্নরূপে, বিভিন্ন ভঙ্গিতে মানুষের বিভিন্ন ধরনের লোকাচার, হস্তশিল্পের সহায়তা করে। সেই সময়ে ওই জেলার দিকে দিকে, গ্রাম-গঞ্জে ঢুকলেই শুনতে পেতাম বাড়িতে বাড়িতে তাঁতের খটাখট শব্দ। নজরে পড়ত, চাষ-আবাদের সঙ্গে সঙ্গে এক এক এলাকায় এক এক ধরনের বিচিত্র সব কুটিরশিল্পের অস্তিত্ব। প্রকৃতি যেন এমন সব শিল্পসম্ভার গড়ে তোলার জন্যই উৎপাদনের মূল উপাদান। জেলায় গড়ে উঠেছিল বিশেষ বিশেষ কুটিরশিল্প যার চাহিদা ছিল তামাম দেশ জুড়েই। যেমন : সবং অঞ্চলের মাদুর, নন্দীগ্রামের গোপীনাথপুরের দারু বা কাষ্ঠশিল্প, চন্দ্রকোনা-ময়না-রামনগরের বস্ত্রশিল্প, মশারি-শিল্প, খড়ারের কাঁসা-পিতল, রঘুনাথবাড়ির কেশিয়াড়ির তসর, হিজলির রেশম বা তৃণজ রেশম, ঘাটালের গরদ, জোত-ঘনশ্যাম এবং জশাড় এলাকার মোষ, হরিণ ইত্যাদি প্রাণীর শিঙের শিল্প, জঙ্গলমহলের পাথর, শাল-পিয়াল-আবলুস কাঠ, মধু-মোম-গালা ইত্যাদি কেন্দ্রিক অভূতপূর্ব সব শিল্পসম্ভার। কত শত বছর আগের থেকে এসব কুটিরশিল্পের সৃষ্টি হয়েছিল তা আজ আর কেউ বলতে পারে না। সেই সব শিল্পীদের শিল্পকর্ম, শৈল্পিক নৈপুণ্য তৈরি হয়েছিল বাংলার মহিলা শিল্পীদের হাত ধরেই।