সংবাদদাতা, বর্ধমান : নিম্নচাপের জেরে লাগাতার বৃষ্টি এবং জলাধারগুলিতে জল ছাড়া নিয়ে গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হল। জল বাড়তেই পাড় ভাঙা শুরু হয়েছে ভাগীরথীর। আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে পূর্বস্থলীর ঝাউডাঙা ও কেতুগ্রামের সীতাহাটি মানুষের। অজয়ের ভাঙনে আশঙ্কিত মঙ্গলকোটের আতকুলা গ্রামের বাসিন্দারা। প্রবল জলস্রোতে তলিয়ে নিখোঁজ গলসির সোদাই গ্রামের সখা রুইদাস (৬০)।
আরও পড়ুন-সৌজন্যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প, পুজোর মুখে বিকোচ্ছে মাটির লক্ষ্মীর ভাঁড়
গ্রামের উত্তর-দক্ষিণ দিক দিয়ে দামোদরের জল বয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাসীরা উত্তর দিকের অংশ পারাপার করে শিকারপুর আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে গরুর লেজ ধরে তিনি শিকারপুর আসার চেষ্টা করেন। আচমকা গরুর লেজ ফসকে দামোদরের জলে তলিয়ে যান। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এরই মাঝে একটানা বৃষ্টির জেরে লাগাতার কাঁচাবাড়ি ভাঙার ঘটনা সামনে এসেছে। জেলা প্রশাসন জানায়, মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে ৮৭ হাজার ২৫ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, অজয় ও ভাগীরথীর জল বাড়ায় আতঙ্ক নদী-তীরবর্তী এলাকায়। পূর্বস্থলীর ঝাউডাঙা, কেতুগ্রামের সীতাহাটি, মঙ্গলকোটের আতকুলা গ্রামে বন্যার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠা বেড়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। পাড় ভেঙে কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েত কার্যালয়টির একেবারে গায়ে চলে এসেছে ভাগীরথী। আর ৭ ফুট ভাঙলেই সেটি নদীগর্ভে চলে যাবে।
আরও পড়ুন-পুজোর মধ্যে ডাকা যাবে না অভিষেককে, ইডিকে স্পষ্ট বার্তা হাইকোর্টের
নদীর গা বরাবর শাঁখাইঘাট-উদ্ধারণপুর থেকে মউগ্রাম পর্যন্ত পাকা সড়কটিও ভাঙনের মুখে। সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানেল সাব-ডিভিশনের প্রতিনিধিরা এলাকা পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি ভাগীরথীর ভাঙনে আতঙ্ক ছড়ায় পূর্বস্থলীর ঝাউডাঙায়। নদিয়ার বেথুয়াডহরির পাকারাস্তার গায়ে ধাক্কা মারছে গঙ্গার ভাঙন। একটানা বৃষ্টির জেরে গলসি ১ ব্লকে একটি এবং রায়না ১ ব্লকের শ্যামসুন্দর মাঝপাড়ায় একটি কাঁচাবাড়ি ধসে যায়। রায়নায় এই ঘটনায় নিখিল সরকার ও তাঁর স্ত্রী টুম্পা আহত হন। কাঁচাবাড়ি ভাঙার ঘটনায় শুরু হয় কেন্দ্রবিরোধী ক্ষোভ। এদিনই মাঝপাড়ায় ছুটে যান বর্ধমান সদর দক্ষিণের মহকুমা শাসক কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘ঝাউডাঙায় অনেকটাই কাজ হয়েছে। ভাঙন রুখতে এলাকার যজ্ঞেশ্বরপুর ও ছাতনিতেও পাড় বাঁধানোর কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে।’ মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরি বলেন, ‘বাঁধ মেরামতির জন্য সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।’
আরও পড়ুন-রাজভবনের গেটের সামনে রাতভর ধর্নায় থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নিশানায় রাজ্যপাল
মঙ্গলকোটের বিডিও জগদীশচন্দ্র বাড়ুই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে মেরামতির জন্য সেচ দফতরকে চিঠি দিয়েছেন। জেলা প্রশাসন জানায়, জেলায় আবাস যোজনার জন্য ২ লক্ষ ৩৬ হাজার আবেদন জমা পড়ে। চূড়ান্ত হয় ১ লক্ষ ৯৬ হাজার। তার মধ্যে ২০ হাজার আবেদন ফিল্ড ভিজিটে বাদ যায়। ১ লক্ষ ৭৬ হাজার বাড়ির তালিকা পাঠানো হয় নবান্নে। কিন্তু মাত্র ৫৬ হাজার আবেদন অনুমোদন করে কেন্দ্র। জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি গার্গী নাহা জানান, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারির মধ্যে এই ৫৬ হাজার আবেদনকারীকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেও টাকা আসেনি। কেন্দ্রের এভাবে বাংলার মানুষকে বঞ্চনায় বিপদে পড়ছেন বহু মানুষ। এ-নিয়ে তৃণমূল আন্দোলন করায় স্বৈরাচারী কেন্দ্র দমন-পীড়ন চালিয়ে তা ভাঙার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রের এই বিমাতৃসুলভ আচরণে ক্ষোভপ্রকাশ করে গ্রামের মানুষ বলছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের বাড়ির অবস্থা অত্যন্ত খারাপের জন্য দায়ী বিজেপির প্রতিহিংসা ও স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি।