নয়াদিল্লি : আমেরিকার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্ন করার জন্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিককে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশালীন ভাষায় আক্রমণ শুরু করেছে গেরুয়া বাহিনী। যে মোদি পারতপক্ষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন না, দেশের ভিতর কখনও সাক্ষাৎকার দিলেও পূর্বপরিকল্পিত স্তুতি আর প্রশংসার ঘেরাটোপে থাকেন, তাঁকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে মার্কিন মুলুকে। বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাজিরা দেওয়ার পর সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অপ্রিয় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। মোদির এই বিড়ম্বনা হজম হয়নি বিজেপির ট্রোল বাহিনীর। প্রশ্ন করা সাংবাদিককেই ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও পড়ুন-পুরোহিত নিয়োগে বর্ণভেদ নয় : হাইকোর্ট
এবার হিন্দুত্ববাদী ট্রোল বাহিনীর এই মানসিকতার কড়া নিন্দা করে গণতন্ত্রের মূল নির্যাস স্মরণ করাল জো বাইডেন প্রশাসন। ২২ জুন ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও মোদি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে প্রশ্ন করেছিলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হোয়াইট হাউসের প্রতিবেদক সাবরিনা সিদ্দিকি। এরপরই বিজেপির ট্রোল বাহিনীর সাঙ্গোপাঙ্গরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অশালীন ভাষায় সাবরিনাকে আক্রমণ শুরু করে। এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি। তিনি বলেছেন, যেভাবে একজন সাংবাদিককে হেনস্তা করা হচ্ছে তা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। এটা গণতন্ত্রের মূল নীতির বিরোধী। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন পিয়ের বলেছেন, তাঁরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একজন সাংবাদিককে ভয় দেখানো বা তাঁকে হেনস্তা করার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
আরও পড়ুন-চিকিৎসকদের পরামর্শ একপ্রকার অগ্রাহ্য করেই বাড়ি ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ওই সাংবাদিক সম্মেলনে সিদ্দিকি মোদিকে প্রশ্ন করেন, আপনার সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। সর্বদাই সরকারের সমালোচক ও বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রুখতে আপনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আপনার সরকার কি দেশের মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে এবং বাক্স্বাধীনতা বজায় রাখতে ইচ্ছুক? সিদ্দিকির প্রশ্নের জবাবে মোদি বলেছিলেন, ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনও বৈষম্য নেই। জাতি, ধর্ম, বর্ণ সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই।
আরও পড়ুন-প্রয়াত লিথিয়াম ব্যাটারির আবিষ্কর্তা জন গুডএনাফ
মোদিকে এ ধরনের প্রশ্ন করার পরই বিজেপির ট্রোল বাহিনী আসরে নেমে পড়ে। মোদি-ভক্তদের অশালীন মন্তব্যের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়েন সিদ্দিকি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিদ্দিকি একজন সম্মানীয় সাংবাদিক। তাঁর সততা, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। প্রতিবেদকের এই হয়রানি কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি। সাউথ এশিয়ান জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনও সিদ্দিকির পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, যথাযথভাবে নিজের কাজ করার জন্য হয়রানির শিকার হচ্ছেন সিদ্দিকি। এটা কখনওই কাম্য নয়।