প্রতিবেদন : রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাকরিপ্রার্থী ও কর্মরত শিক্ষকদের নানা দিক থেকে বিপদে ফেলে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পরিণাম কী হতে পারে মঙ্গলবার তা দেখল গোটা বাংলা। এতদিন তাঁদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছেন বিজেপি-সিপিএমের যেসব আইনজীবী নেতারা, অনেক আগেই তাঁদের মুখোশ খুলে গিয়েছে। এবার বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে।
আরও পড়ুন-অনেক হয়েছে, আর নয়
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ভিতরেই বিক্ষোভের মুখে পড়লেন সিপিএম নেতা আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। একদল শিক্ষকের প্রশ্নবাণের মুখে পড়ে কার্যত পালিয়ে বাঁচা ছাড়া আর কোনও উপায় রইল না তাঁর। এতদিন ধরে আসলে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি যে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে তাঁদের ব্যবহার করেছেন তা ধরা পড়ে গিয়ে বিপাকে পড়লেন বিকাশ। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের মধ্যেই তাঁকে শুনতে হল, আপনি আসলে চাকরি খেয়ে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেন। সরকারকে বেইজ্জত করতে গিয়ে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছেন হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎকে। কেন করলেন এই কাজ? কিংশুক দে, সুমন মিত্র, উজ্জয়িনী সাঁতরাদের মতো কর্মরত শিক্ষকের প্রশ্নের মুখে পড়ে উত্তর দিতে না পেরে পালালেন বিকাশ। এই ঘটনায় তৃণমূলের স্পষ্ট বক্তব্য, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি যাতে থাকে এবং চাকরি হয় সবসময় সেই চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়োগ পদ্ধতিতে কতিপয় ব্যক্তি যে ভুল-ত্রুটি করেছেন, সেটা শুধরে নিয়ে যাঁরা যোগ্য এবং প্যানেলে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের চাকরির চেষ্টা করছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু মূলত সিপিএমের কিছু আইনজীবী, সঙ্গে বিজেপি ও কংগ্রেস ওই ভুল-ত্রুটি নিয়েই রাজনীতি করছেন। তাঁরা সমস্ত চাকরিটাকে অনিশ্চিত করে দিতে চাইছেন। তাঁরা দ্বিচারিতা করছেন। তাঁরা একবার চাকরিপ্রার্থীদের কাছে গিয়ে বলছেন, চাকরি হোক। আবার আদালতে গিয়ে বলছেন গোটা প্যানেলটাই বাতিল হোক।
আরও পড়ুন-শাহকে তিন চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে চাকরি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে এসেছিলেন কিছু চাকরিরত শিক্ষক। সেই সময় তাঁরা হাতের সামনে পেয়ে যান বিকাশকে। আচমকাই তিনি শিক্ষকদের বলেন, ২০২২ পর্যন্ত যাঁদের চাকরি হয়েছে এক ইঞ্চি এদিক-ওদিক দেখলে সকলের চাকরি খেয়ে নেব। তখন কিংশুক-সুমনরা পাল্টা বলেন, খিদে পেলে ভাত খান, চাকরি কেন খাবেন? আপনি বলছেন সকলের চাকরি খেয়ে নেব। আপনি কি ঠিক জানেন কতজন দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে, কারা কারা পেয়েছে, কীভাবে পেয়েছে? যদি সেটা না-ই জানেন তবে কী করে বলছেন সকলের চাকরি খেয়ে নেব? আপনি কি যারা খেটে চাকরি পেয়েছে, পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছে, সৎ পথে চাকরি পেয়েছে, তাদের চাকরি খেতে পারেন? একথা শোনার পর হাসতে থাকেন বিকাশ। তারপরেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। তাঁকে ঘেরাও করে তাঁরা বলেন, আপনি আসলে এভাবে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে তাদের গোটা বিষয়টিকে সামনে রেখে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। আপনার রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আপনি এগুলি করেছেন। চাকরি খেয়েছেন, চাকরি আটকেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আসার পর ৭০ থেকে ৮০ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি হয়েছে। আপনারা চাইছেন সেটাও খেয়ে নিতে! আর অদ্ভুতভাবে দেখা যাচ্ছে, কখনও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, কখনও লোকসভা নির্বাচনের আগে এ ধরনের চাকরি খাওয়ার রায় বেরোচ্ছে। আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিচারপতিরা যে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন, চাকরি খেয়েছেন, সেটা এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। উনিও তো পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ৩২ হাজার শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি রায় দিয়েছিলেন। এখন আবার লোকসভা নির্বাচনের মুখে এই ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি নিয়ে রায়। কোথাও গিয়ে বিচার ব্যবস্থার প্রতিও কখনও কখনও আমাদের সন্দেহ জাগছে। বিশেষ করে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখার পর। আপনারা সিপিএম, বিজেপি একসঙ্গে মিলে কাজ করছেন। মুহূর্তকাল উত্তেজনার মুখেই পালাতে থাকেন বিকাশ। তাঁর পিছনে ধাওয়া করেন উপস্থিত শিক্ষকরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এমনকী এদিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাও বিকাশ ভট্টাচার্যকে বলেন, শুধু প্যানেল বাতিল, প্যানেল বাতিল করছেন কেন? চাকরি দেওয়ার কথা বলুন। বিচারপতির মুখে এই কথা শুনে কোনও উত্তর দিতে পারেননি সিপিএমের বিকাশ।
আরও পড়ুন-শ্লীলতাহানি, ক্ষোভ, তাড়া খেলেন বসিরহাটের রেখা
মঙ্গলবার খড়গপুরে এ-বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, বিচারপতি মান্থা পর্যন্ত বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে বলতে বাধ্য হয়েছেন, শুধু প্যানেল বাতিল বলছেন কেন? বিকল্প কোনও ব্যবস্থা থাকলে সেটা বলুন। এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে ঘিরে যাঁরা প্রশ্ন করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে যোগ্য ও কর্মরত শিক্ষক। কেউ কেউ বলছেন, তাঁরা নাকি বিতর্কিত চাকরিপ্রার্থী। বিকাশ ভট্টাচার্যের দ্বিচারিতা নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন করেছেন, তাঁরা দেখতে পারছেন রাজনীতিতে জলঘোলা করার জন্য যোগ্য চাকরিরত শিক্ষকদের চাকরি খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন এই সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেসের আইনজীবীরা। আমরা এর তীব্র বিরোধীতা করছি। যাঁরা যোগ্য, যাঁদের নাম প্যানেলে রয়েছে, তাঁদের পাশে সরকার সবসময় রয়েছে।