বিজেপিতে দলেই কোন্দল, ক্ষুব্ধ আরএসএস

Must read

প্রতিবেদন: ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে “ঘরের মেয়ে” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকর্ড ভোটে জেতা যখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, তখন বিজেপিতে তাদের প্রার্থীকে নিয়েই কাদাছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়েছে। তাদের দলেই প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা নেই। তার উপর আর এস এসের একটি বড় অংশ প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছে। বিজেপিরই একটি সূত্র বলছে, মুখে বড় বড় কথা বললেও রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও চান না এই প্রার্থী জমানতরক্ষা রক্ষা করুন, কারণ ইনি মূলত দিলীপবিরোধী শিবিরে থাকেন। ফলে ভবানীপুরে তৃণমূলের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন বিজেপির ঘরোয়া মহলেই বলাবলি চলছে প্রার্থীর জামানত যাবে নাকি কোনোমতে জামানত বাঁচবে। এমনকি সিপিএমের থেকেও কম ভোট পাওয়ার অনুমান করছে বিজেপির একাংশ।

আরও পড়ুন- যতীন্দ্র নাথ দাসের প্রয়াণ দিবসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধার্ঘ্য

১) বিজেপি সূত্রের খবর এই প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল কোনো নেত্রী নন। দুএকজনের মদতে কোনো কমিটিতে ঢোকা। মহিলা মোর্চার একটি পদে ছিলেন। সবচেয়ে বড় খবর হল লকেট চট্টোপাধ্যায় যখন মহিলা মোর্চার সভানেত্রী, তখন এই প্রিয়াঙ্কাকে সামনে রেখে লকেটকে উত্যক্ত করত দলের একটি শিবির। প্রিয়াঙ্কা তখন গায়ক-মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র বিশেষ স্নেহধন্য থাকায় লকেটকে তিতিবিরক্ত করা হত। চূড়ান্ত গোষ্ঠীবাজি চলত। লকেটকে সরানোর খেলা চলত। লকেট অপমানিতও হতেন। শেষে একবার রেগেমেগে কমিটি বদল করে প্রিয়াঙ্কাকে মহিলা মোর্চা থেকেই তাড়িয়ে দিয়েছিলেন লকেট। সংগঠনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বাড়ায় এরকম পদক্ষেপ নিতেই হয়। ফলে দলেই প্রমাণিত যে টিবরেওয়াল গ্রহণযোগ্য নন। এখন লকেট যাতে রেগে না থাকেন, তাই প্রচারক তালিকায় তাঁর নাম রেখে হাতেপায়ে ধরার প্রক্রিয়া চলছে।

২) ভবানীপুরে প্রার্থী পাচ্ছিল না বিজেপি। দিলীপ ঘোষ স্বয়ং একথা প্রকাশ্যে বলে দেন। দলীয় সূত্রে খবর, তারপরেও টিবরেওয়াল দলের পছন্দ ছিলেন না। এখানে দাঁড়াতে বলা হয় লকেট চট্টোপাধ্যায়কেই। কিন্তু লকেট সটান না বলে দেন। তখন ঠিক হয় কিছুদিন অন্তত প্রচারে থাকার স্বান্ত্বনা পুরস্কার দিয়ে টিবরেওয়ালকে দাঁড় করানো হবে। যেহেতু তিনি বাবুলের স্নেহধন্য এবং বাবুল-শুভেন্দুর বন্ধুত্বসূত্রে নামটি আসা, তাই দিলীপ ঘোষ শিবির চাইছে এর জামানত বাজেয়াপ্ত হোক।

৩) আর এস এসের বড় অংশ বেদম ক্ষুব্ধ এই টিবওয়ালকে নিয়ে। এতটাই ক্ষোভ, যে সিনিয়র আর এস এস সংগঠক, পুরনো বিজেপিকর্মী স্বপন দাস, যিনি এখন বিভিন্ন টিভি বিতর্কে বিজেপির পক্ষে বলেন, তিনিও একটি সংবাদমাধ্যমে নিজের কলমে লিখেছেন টিবরেওয়ালকে প্রার্থী করে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারলো বিজেপি। নিজের যুক্তিগুলো সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে স্বপনবাবু লিখেছেন,” আমরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার বাংলার মুখ করে তুললাম।” আর এস এসের এই ক্ষোভ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

৪) ভবানীপুরে বুথে বুথে স্থানীয় এজেন্ট পাচ্ছে না বিজেপি। কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়মের সুযোগ নিয়ে অন্য বুথ থেকে দুচারজনকে আনছে। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাচ্ছে না।

৫) বিজেপিতে এখন পরিকল্পনা হচ্ছে প্রচারে প্রার্থীর শুধু নাম রাখার, টিবরেওয়াল পদবি উল্লেখ বেশি না করার বা ছোট করে রাখার। হঠাৎ এই নির্দেশ যাচ্ছে দলে।

৬) লকেট মহিলা মোর্চা থেকে টিবরেওয়ালকে সরানোর পর তাঁর কোনও পদ ছিল না। তখন তিনি লোকসভার টিকিটের জন্য বর্ধমান, দুর্গাপুর এলাকায় পড়ে থাকতেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয় সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান, যিনি দিলীপ ঘোষ শিবিরের বিরুদ্ধে। তবে তাঁকে দল টিকিটের যোগ্য মনে করেনি। তখন টিবরেওয়াল ফের এন্টালিতে এসে ভিড়ে যান। বিধানসভায় এবার লড়েন। গোহারা হেরে যান তৃণমূলের স্বর্ণকমল সাহার কাছে। এরপর ভবানীপুরে কেউ না দাঁড়াতে চাওয়ায় তাঁকে টিকিট দিয়েছে দল।

৭) বিজেপির একাংশ যেভাবে আইনজীবী হিসেবে টিবরেওয়ালকে দেখাতে চাইছে, তিনি আদৌ তেমন কিছু নন। বিজেপির সূত্রই বলছে, দলের মামলা আসলে লড়েন অন্য সিনিয়ররা। দলের নেতাদের সঙ্গে সুসসম্পর্কের জেরে কেউ কেউ প্রচারের সুযোগটা নেন। বাস্তবটা দলের সবাই জানেন। বেশ কিছু আইনজীবী এনিয়ে নেতৃত্বের উপর ক্ষুব্ধ।

আরও পড়ুন- তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে খুন, সিবিআইয়ের জালে বিজেপির ৪

এহেন পরিস্থিতিতে বিজেপির ভবানীপুরের প্রার্থীকে তাদের দলেই নানা চোরাস্রোত। আন্দোলন বা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে না উঠে এসে সটান মঞ্চে বসা জনভিত্তিহীন টিবরেওয়ালকে দলই মেনে নিচ্ছে না, দলের বাইরের বৃত্তের মানুষ তো মানছেনই না।

আরও পড়ুন- ফের প্রকাশ্যে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল

অন্যদিকে “ঘরের মেয়ে” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে জনসমুদ্র। নন্দীগ্রামে গণনার সময় আলো নিবিয়ে কারচুপির প্রতিবাদের জন্য ফুঁসছেন মানুষ। যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কুৎসা, ষড়যন্ত্র চলছে, ভবানীপুর জবাব দিতে তৈরি। তার সঙ্গে কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির বিরোধিতা এবং রাজ্যের জনমুখী প্রকল্পগুলির সমর্থনেও জেগে উঠছে ভবানীপুর।
তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর রেকর্ড জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Latest article