প্রতিবেদন : শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী ক্ষেত্র নন্দীগ্রামেই (Nandigram) সমবায় সমিতির নির্বাচনে গোহারা হারল বিজেপি। শুধু হারল না, তৃণমূল-ঝড়ে উড়ে গেল বিজেপি, ধূলিসাৎ বিজেপি। হানুভূঞা, ঘোলপুকুর, বিরুলিয়া সমবায় সমিতির নির্বাচনে মোট ৫২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৫১টি আসনে জয়ী হল। সিপিএম ১টি আসন পেলেও বিজেপি খাতাই খুলতে পারেনি। শুধু নন্দীগ্রাম নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি-৩ ব্লকে মারিশদা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির ভোটে তৃণমূল নিশ্চিহ্ন করে দিল বিরোধীদের। এখানে ৪১-০ আসনে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একইসঙ্গে এদিন সিঙ্গুরের তৃষা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির ভোটে বিপুল জয় তৃণমূল কংগ্রেসের। তৃণমূল বামেদের হারিয়েছে ৯-০ আসনে। ১৯৭৮ সালের পর থেকে বামেরাই ক্ষমতায় ছিল। ফলে এই জয় নিশ্চিতভাবে মাা-মাটি-মানুষের উন্নয়নের জয়।
আরও পড়ুন: পুজোর মরশুমে পথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ পুলিশের
দিনরাত টিভি ক্যামেরার সামনে বড় বড় ভাষণ দেওয়া লোডশেডিং অধিকারীর ফাঁপানো বেলুন ফুটো হয়ে গিয়ে বিজেপির সাংগঠনিক কঙ্কালসার চেহারাটা বেরিয়ে এল।
নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনালাপ ভাইরাল করে নাচানাচি করা প্রলয় পাল বিজেপির হয়ে, বলা ভাল লোডশেডিং অধিকারীর প্রতিনিধি হিসেবে এই সমবায় সমিতির নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। তাও মানুষ ভরসা রেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের ওপরেই। এদিন সমবায় সমিতির ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই বিজেপির অন্দরে লোডশেডিং অধিকারীকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে৷ যে লোকটা নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রে সমবায় সমিতির নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের জেতাতে পারে না, তার ওপর কোন আক্কেলে ভরসা করবে দল?
খবর পৌঁছেছে দিল্লির বিজেপি নেতাদের কানেও। দলের অন্দরে তুমুল জল্পনা শুধু ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ওপর ভরসা করে বাংলায় কীভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে পর্যুদস্ত করা সম্ভব। সমবায় সমিতির এই ফলাফলেই ইঙ্গিত পরিষ্কার, যাই ঘটুক না কেন বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকেই ভরসা করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নেই তাঁদের অগাধ ভরসা। আর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিশনে তাঁদের আস্থা। এই বঙ্গে বিজেপির কোনও ঠাঁই নেই। আগামী সবক’টি নির্বাচনে এভাবেই বিজেপি গোহারা হারবে। সংগঠন ছাড়া-বুথে লোক ছাড়া-গঠনমূলক বিরোধিতা ছাড়া শুধু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চাইলে বাংলার মানুষ মেনে নেবেনই বা কেন? মেনে যে নেননি নন্দীগ্রামের এই ফলাফলেই তা পরিষ্কার। সঙ্গে এও পরিষ্কার যে, বিধানসভা নির্বাচনে লোডশেডিং না হলে শুভেন্দু অধিকারী জেতে না।
রবিবার নন্দীগ্রামের (Nandigram) এই সমবায় সমিতির নির্বাচনে ২,৫৬৪ জন ভোট দেন। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে সমর্থকরা সমবায় সমিতির সামনে স্লোগান-সহ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সবুজ আবির খেলা হয়। লোডশেডিং করে জেতা বিধায়ককে নন্দীগ্রাম থেকে দূর দূর দূর হটাও স্লোগানও ওঠে। নন্দীগ্রাম-২ ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন জানা বলেন, নন্দীগ্রামের (Nandigram) মাটি এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্জয় ঘাঁটি। এই সমবায় নির্বাচনের ফল এটাই প্রমাণ দিল। কেউ লোডশেডিং করে এখানে জিততে পারেন। কিন্তু মানুষের মন জেতা এত সহজ নয়। ইডি-সিবিআই লাগিয়ে যতই বঙ্গ বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টা করুক, নন্দীগ্রামের মানুষ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই আছেন। অপরদিকে এখানে জেতা তো দূর অস্ত, বিজেপি এই সমবায় সমিতির নির্বাচনে ঠিকমতো জনসংযোগই করে উঠতে পারেনি। মিডিয়ার সামনে একথা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি। আবার নন্দীগ্রাম-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মহাদেব বাগ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনালাপ ভাইরাল করে যে বিজেপি নেতা প্রলয় পাল নাচানাচি করছিলেন, তিনি এই সমবায় সমিতির নির্বাচনে বিরোধী বিজেপি শিবিরের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবুও বিজেপি এখানে খাতা খুলতে পারেনি। শুধু নন্দীগ্রাম (Nandigram) নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ৩ ব্লকের ‘মারিশদা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি’-র ভোটে বিজেপি প্রার্থীদের ধরাশায়ী করে সবক’টি আসনেই জয় ছিনিয়ে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। এই কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে মোট ৪১টি আসন। ৪১টিতেই ফুটল ঘাসফুল। নিল গেম খেল পদ্ম শিবির। রবিবার মারিশদা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে ভোট ছিল। সমিতির ৪১টি আসনেই প্রার্থী দেয় তৃণমূল। বিরোধী বিজেপি প্রার্থী দিয়েছিল ৩৯টিতে। কাঁথি-৩ ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি গৌরীশঙ্কর মিশ্র বলেন, বিজেপি এখানে সবগুলি আসনে প্রার্থী দিতেই পারেনি। ইডি, সিবিআই লাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের নামে বিজেপি যত কুৎসা করবে, মানুষ তত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করবেন। একের পর এক সমবায় সমিতির নির্বাচনে তৃণমূলের জয় তারই প্রমাণ দিচ্ছে।
আজ সিঙ্গুর বিধানসভার অন্তর্গত চন্ডীতলা ২নং ব্লকের কাপাসাহাঁড়িয়া অঞ্চলের তৃষা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালন সমিতির নির্বাচন ছিল রবিবার। তৃণমূল জিতল ৯-০-তে। ১৯৭৮ সালের পর থেকে এই সমবায় সমিতি বামপন্থীদের দখলে ছিল। আজ সেই সমিতির পরিচালনার দায়িত্ব পেল তৃণমূল কংগ্রেস। মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন এই জয় মা মাটি মানুষের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর উন্নয়নের জয়।