পুজো (BJP-Durga Puja) নিয়ে গেরুয়াবাহিনীর দ্বিচারিতার নজির ভূরি ভূরি।
দলীয় উদ্যোগে বিজেপি রাজ্যে প্রথম দুর্গাপুজো করে ২০২০ সালে। প্রধানমন্ত্রী সেই পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছিলেন। পরের দু’বছরে পুজো হলেও তাতে বিশেষ উৎসাহ ছিল না। এবছরও দলীয় উদ্যোগে পুজোর পালে বাতাস নেই।
২০২১-এর বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে অভিযোগ ছিল, দুর্গাপুজো ও সরস্বতী পুজো মা মাটি মানুষের সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। পরে তাঁদেরই দেখা গেল ইউনিসেফের স্বীকৃতি উদযাপন করতে! এবং কী আশ্চর্য! পুজোর এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে গত বছর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে উদযাপনের আয়োজন করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। সেই অনুষ্ঠানে ডাকা হল না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে।
এখন বিজেপি নেতারা চান, পুজোকে জনসংযোগের হাতিয়ার করতে।
সেজন্যই সম্প্রতি দলের সব জেলা সভাপতির কাছে একটি নির্দেশ পাঠিয়ে প্রতিটি ব্লকে অন্তত একটি পুজোয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকতে বলা হয়েছে। ছোটবেলা থেকে পাড়ার পুজোয় জড়িয়ে থাকার অভ্যেস যাদের ছিল না তারা এখন কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। অবস্থা সামাল দিতে গেরুয়া শিবিরের এক্তিয়ারে থাকা পুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক ‘অনুদান’ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন- হামাসের হামলা নিয়ে মুসলিম দেশগুলি এখনও চুপ কেন? সুর চড়ালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী
আসল উদ্দেশ্য তো মাতৃ আরাধনা নয়। আসল লক্ষ্য ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। এখনও গ্রামবাংলার বহু ব্লকে প্রাথমিক সংগঠনই গড়ে ওঠেনি জঞ্জাল পার্টির (BJP-Durga Puja)। এই বাস্তব অবস্থা মেনে দুর্গাপুজোর বিপুল লোকসমাগমকে ধরতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি এখন তৃণমূল কংগ্রেসের মতো জনসংযোগ বাড়াতে দুর্গাপুজোতেই মন দিয়েছে।
পুজো নিয়ে বিজেপির অভিযোগ যে একেবারেই মনগড়া তা দুর্গাপুজোর উৎসাহকে ঘিরে রাজ্য সরকারের ভূমিকা দেখলেই বোঝা যায়। রাজ্যের প্রায় ৪৩ হাজার পুজোকে উৎসাহ দিতে এবছর ৭০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে সরকার। পুজো উদ্যোক্তারাও তাতে খুশি। যাবতীয় সমালোচনা উপেক্ষা করে ষষ্ঠীর আগেই পুজো উদ্বোধনে শামিল হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। পুজোকে ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ‘কার্নিভাল’। বিদেশি আদলে রেড রোডে প্রতিমার শোভাযাত্রা বাংলার শারদোৎসবকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ভাবনাটি অভিনব, একান্তই মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। এটি বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষকেও আকর্ষণ করেছে। বাংলার এই পুজো যে কত অসংখ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সময়ে মানুষের কেনাকাটার প্রবণতা বাড়ে। প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার বিকিকিনি বা ব্যবসার সুবাদে অর্থনীতিও আশার আলো দেখে।
এই যদি মৃন্ময়ী মায়ের প্রতি ভক্তি হয়, তবে চিন্ময়ী মায়ের প্রতি ভক্তির বহরটাও দেখে নেওয়া যাক।
আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) অনুমান, ২০৩০ সালের ভিতরে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। অর্থনীতির আয়তনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের পরেই গুরুত্ব পাবে ভারত। এই প্রসঙ্গে লক্ষণীয় যে, ভারতের এই সম্ভাব্য শ্রীবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হতে পারে তার অনুমিত বৃদ্ধির হার। আমেরিকার বৃদ্ধি যেখানে ১.৬ শতাংশ ধরা হচ্ছে, সেখানে সংখ্যাটি ভারতের জন্য প্রত্যাশিত ৬.৮ শতাংশ। আমেরিকার বৃদ্ধি যেখানে ১.৬ শতাংশ ধরা হচ্ছে, সেখানে সংখ্যাটি ভারতের জন্য প্রত্যাশিত ৬.৮ শতাংশ। এই সময়ে অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রশাসন এবং সমাজের নানা ক্ষেত্রে দেশের সকলের সমান অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয়। আর সেখানেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে ভারত। নাগরিকের প্রায় অর্ধেক নারী হওয়া সত্ত্বেও তাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য এখনও মারাত্মক। ভোটদানে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি—গত দু’বছরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলির একটি সাধারণ প্রবণতা। সাম্প্রতিক অতীতে হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একাধিক রাজ্যে ভোটদানের লাইনে পুরুষের চেয়ে মহিলাদেরই বেশি হারে পাওয়া গিয়েছে। অথচ মেয়েদের অন্ধকারে ফেলে রাখা বা ঠেলে দেওয়াটাই দস্তুর। বর্তমান সপ্তদশ লোকসভায় মহিলা সদস্য মাত্র ১৪.৪৪ শতাংশ। এই ত্রুটি দূর করা গেলে ভারতের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়ই হতে পারত। মহিলাদের ধৈর্যের পরীক্ষা গ্রহণের কৌশলী রাজনীতি বন্ধ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অথচ, বিজেপি কত ছলনাই না করছে!