মণীশ কীর্তনিয়া, জলপাইগুড়ি: সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, এবার ভেবে দেখুন কেন এত ইডি-সিবিআই-এর ঘনঘটা। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে জনসংযোগের মাঝেই খবর আসে নিজের কৃতকর্মের জন্য নিয়োগ-সংক্রান্ত সব মামলা থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি, সিবিআই যতবার ডাকবে ততবার যাব। এদিন বন্ধ নিয়েও তাঁর কড়া প্রতিক্রিয়া ছিল। অভিষেকের কথায়, বিজেপি বন্ধ ডেকেছিল কিন্তু বাংলার মানুষ বন্ধের গুষ্টি চটকে দিয়েছে। এদিন আলিপুরদুয়ার ছেড়ে জলপাইগুড়িতে তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু করেন অভিষেক। দিনভর চলে একাধিক জায়গায় জনসংযোগ ও জনসভা। এদিন নাগরাকাটা-চালসা-মাল-এ জনসভা করেন অভিষেক। সব ক’টি সভাতেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সঙ্গে বীরসা মুন্ডাকে শ্রদ্ধা-সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। এদিন গয়েরকাটা-সহ জলপাইগুড়ির বিভিন্ন রাস্তায় ছিল আমজনতার ঢল।
আরও পড়ুন-তদন্তে সিবিআইকে সহযোগিতার বার্তা দিলেন অভিষেক
সুপ্রিম নির্দেশ প্রসঙ্গে : দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। একইসঙ্গে অভিষেক বলেন, ভোটে লড়াই করতে না পেরে বিজেপি বিচারব্যবস্থার অল্প কয়েকজনকে কাজে লাগাচ্ছে। দু’বছরে ২৬টি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর সংযোজন, এই মামলায় আমি পিটিশনার ছিলাম। সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট সংক্রান্ত সমস্ত আদালতের মতকেই মর্যাদা দিয়ে চলি।
আরও পড়ুন-সত্যপালের বাড়িতে সিবিআই
নিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ে বা অন্য বিষয়ে তৃণমূলের কোনও নেতা বা মন্ত্রী বা কর্মীর বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থাকে তা হলে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে বাংলায় পেরে উঠছে না। তাই বিচারব্যবস্থার আশ্রয় নিয়েছে। বিচারব্যবস্থার এক-দু’জনকে কাজে লাগিয়ে তারা বাইশ মাসে তেইশটা সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এ-মাসে আরও তিনটে মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২৪ মাসে ২৬টি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বেছে বেছে এক বা দুজন বিচারপতি এগুলো করছেন। এই মামলাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে গেলে, সর্বোচ্চ আদালত তা খারিজ করে দিচ্ছে। মানুষও দেখুক আসলে কী হচ্ছে।
আরও পড়ুন-বাংলার মানুষ বনধ সমর্থন করে না, বিজেপিকে একহাত নিয়ে বললেন অভিষেক
দেখি কে আটকায় আমায় : বিজেপির ডাকা এই সর্বনাশা বন্ধ ব্যর্থ করেছে মানুষ। বন্ধ ব্যর্থ এবং যে উদ্দেশ্যে বিজেপি বন্ধ ডেকেছে, সেটাও ব্যর্থ। কর্মনাশা সর্বনাশা ধর্মনাশা বন্ধের সংস্কৃতি বাংলার মানুষ মানে না। আপনারা তো দেখছেন মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা। একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যে রাজনৈতিক দল বন্ধ ডেকেছিল তার গুষ্টি চটকে বাংলার মানুষ প্রমাণ করেছে বন্ধ সমর্থন করে না। এদিন নাগরাকাটার সভায় অভিষেক বলেন, আমার যা কর্মসূচি-সভা ছিল বন্ধ শুনে আরও ৩টে কর্মসূচি যোগ করেছি। রাস্তায় ঘুরছি। দেখি কে আমায় আটকায়! রাস্তার দু’ধারে মানুষ রয়েছেন। দোকান, হাটবাজার সব খোলা। রাস্তার দু’ধারে মানুষ দেখলেই তো বোঝা যাচ্ছে। বিজেপিকে তোপ দেগে তিনি বলেন, দিন আনে দিন খায় অনেক পরিবার রয়েছে। যারা পাঁচ হাজার, ছয় হাজার টাকায় চাকরি করেন। দিনে দুশো, আড়াইশো, তিনশো টাকা আয় করেন। তাঁদের চাকরি করতে হবে, কর্মস্থলে পৌঁছতে হবে। যারা ভাবছে বন্ধ নিজেদের সংগঠনের শক্তি এবং সাংগঠনিকভাবে কতটা বলিষ্ঠ সেটা মানুষের কাছে উপস্থাপিত করবে তাদের ভাবা উচিত মানুষের অসুবিধা হয়। এরপরও জোরজবরদস্তি করে কোথাও বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় ওরা। মানুষের হয়রানি, মানুষের অসুবিধা করছে ওরা। এটাই ভারতীয় জনতা পার্টি। সিপিএমের হার্মাদরা গেরুয়া জার্সি পরে আবার সেই সংস্কৃতি আবার সেই সন্ত্রাসের বাতাবরণ বাংলায় আনতে চাইছে। বন্ধ সফল না ব্যর্থ সেটা মানুষের উপর ছেড়ে দিন না। জোর-জবরদস্তি করতে হচ্ছে কেন? দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ জারি করতে হচ্ছে কেন? আপনারা বন্ধ ডেকেছেন সেটা মানুষ সমর্থন করছে না বর্জন করছে সেটা মানুষের উপর ছেড়ে দেওয়া হোক। এরা চায় না কখনই মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়, যারা রুটি-রুজি সঙ্গে দৈনন্দিন যুক্ত তাঁদের ভাল চায় না ওরা।
বিজেপির স্ফুর্তি : বিজেপি নেতাদের তো অসুবিধা হয় না ম্যাথু স্যামুয়েলের মতো কেউ এসে খামে মুড়ে ৫ লাখ টাকা এসে দিয়ে যাবে তাতে সংসার চলে যাবে। সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে ৫ কোটি নিয়ে বসে যাবে। আর বছরের পর বছর বাড়িতে বসে খেয়ে ফুর্তি করবে। যাদের ২০০-৩০০ টাকা করে লস হল তাদের টাকা কে দেবে? ভারতীয় জনতা পার্টি করবে ব্যবস্থা? সাধারণ মানুষকে ২০০-৩০০ টাকা করে দিয়ে তারপরে বন্ধ ডাকা উচিত। যারা ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।