প্রতিবেদন : রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে ভারতীয় জনতা পার্টি এবার দুর্গাপুজো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বলা ভাল তারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে, দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে ভবানীপুরের উপনির্বাচন প্রভাবিত করার জন্য । যা হাস্যকর । বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এভাবেই রাজ্য বিজেপিকে কটাক্ষ করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ।
তিনি বলেন, দুর্গাপুজোা নিয়ে বাঙালির আবেগ শুধুমাত্র রাজ্য নয়, রাজ্য ছেড়ে দেশ, দেশ ছেড়ে বিদেশ সর্বোত্তম। তার সাফ কথা, উত্তরপ্রদেশে গতবার দুর্গাপুজোা উপলক্ষে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। অথচ আমাদের এখানে গণেশ পুজো, ছট পুজো, যে কোনও পুজো যে কোনও ধর্মের মানুষ করতে পারেন। আমাদের এখানে ধর্মের চেয়ে বড় কথা এটা একটা সাংস্কৃতিক প্রকাশ। ২০২১ নির্বাচনের আগে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দুর্গার বংশ পরিচয় নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। দেবী দুর্গাকে পর্যন্ত বিজেপি রাজ্য সভাপতি অপমান করতে দ্বিধা করেননি । দুর্গাপুজো নিয়ে বিজেপির যে কোনও দুর্বলতা নেই এটা আমরা জানি ।
আরও পড়ুন : সংবাদমাধ্যমের উপর বিজেপির হামলায় তীব্র নিন্দায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। এই ক্লাবগুলো হচ্ছে আমাদের যে দূর্গা উৎসব, সার্বজনীন দুর্গোৎসব -এর মূল কেন্দ্রবিন্দু। এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে কিন্তু অনেক মানুষের যারা ডেকোরেটার্স আছেন , যারা আলোকসজ্জা করেন, যারা ঢাকা বাজান, যারা পুজোপাঠ করেন, সব মিলিয়ে অনেকেরই কিন্তু রুজি-রোজগারের বিষয় জড়িত । সারা বছরের একটা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থল দুর্গাপুজো। আইআইটি খড়গপুর একটা সমীক্ষা করেছে ,সেখানে দুর্গাপুজো উপলক্ষে কত টাকা বাণিজ্যিকভাবে লেনদেন হয় তার একটা প্রেক্ষাপট জানা গেছে। রাজ্য সরকারি ক্লাবগুলোকে অনুদান দীর্ঘ বছর ধরে দিয়ে আসছে, আজ নতুন নয় যে সামনে উপনির্বাচন আছে সেই জন্য দিচ্ছে। এটা মিথ্যা প্রচার। কারণ, এই ক্লাবগুলোই কিন্তু দুর্গাপুজোকে মানুষের কাছে সার্বিক সুন্দর ভাবে পৌঁছে দেয়। রাজ্য সরকার মনে করে তাদের পাশে নৈতিকভাবে দাঁড়ানো উচিত । সেই কারণেই কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদেরকে অনুদান দিচ্ছে।
আরও পড়ুন : ‘আমাকে আঘাত করতেই অভিষেককে হেনস্তা’, অহীন্দ্র মঞ্চের কর্মিসভায় আক্রমণাত্মক নেত্রী
এবার বিজেপি চিঠি দিয়ে বলেছে কেন দেওয়া হবে? সামনের উপনির্বাচন, এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দেওয়া হবে। গতবছর কোভিড মহামারির জন্য দুর্গাপুজো প্রায় হয়নি। শুধু দুর্গাপুজো কেন ২৫ ডিসেম্বর পালন করা যায় নি, ১ জানুয়ারি পালন করা যায়নি । এবং সেটা শুধুমাত্র কোভিড পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উৎসব পালন করা যায় নি। এখন সংক্রমণ কমেছে, অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে । তাই আমরা চাইছি যে রাজ্যের মানুষ বাংলার মানুষ তাদের জীবনের ছন্দ ফিরে পাক এবং দুর্গোৎসবের মধ্য দিয়ে তারা আবার জীবনের আনন্দ পাক। সেই কারণেই ক্লাবগুলোকে আমরা অনুদান দেবো বলেছি । শুধুমাত্র উৎসব নয়, ইয়াস, আম্ফান বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কিন্তু এই ক্লাবগুলোই এগিয়ে আসে । তারাই কিন্তু সাহায্য করে রাজ্য সরকারকে মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য । আজকে নতুন নয়, ২০১১ সাল থেকে এই অনুদান আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু রেখেছেন। বিজেপি হাস্যকর কথা বলছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি বাড়তি জনসমর্থন পাবেন উপনির্বাচনে । যারা বিধানসভা নির্বাচনে গো-হারা হেরে গেছেন, যারা বলেছিলেন ২০০ পেরিয়ে গেছি তাদের মুখে এ কথা মানায় না। কারণ, তারা যখন বলেন যে বাড়তি জনসমর্থনের জন্য অনুদান তখন তা হাস্যকর মনে হয় ।
বিজেপি বলছে, ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র নাকি ভবানীপুর সিট জেতার জন্য। বিজেপির কাছে অনুরোধ ,এই বালখিল্যপনা ছেলেমানুষি আপনারা বন্ধ করুন । তাহলে সেই প্রবাদ কথায় বলা হয়, কর্তা ঘোড়াতেও হাসবো। অনেক করেছেন আপনারা, বাঙালির আর বিরোধিতা করবেন না। দুর্গাপুজো নিয়ে রাজনীতি করবেন না । বাঙালির আবেগ বোঝার চেষ্টা করুন । বহিরাগত হয়ে এভাবে বাঙালিকে অপমান করা বন্ধ করুন । সংকীর্ণ রাজনীতি বন্ধ হোক বাংলা এবং বাঙালিকে ভালোবাসেন, তারপরে এসব কথা বলবেন।