বিজেপির হয়ে ভোটে বিএসএফ

Must read

সংবাদদাতা, দিনহাটা : বিএসএফের অত্যাচারে জেরবার সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলি। বারবার উঠে এসেছে একাধিক অভিযোগ। সেই অভিযোগ আরও জোরালো হল। এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে দিনহাটা সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের ভিতরে ঢুকে জনসংখ্যা খতিয়ে দেখছেন জওয়ানরা। শুধু তাই নয়, কতজন ভোটার, হিন্দু-মুসলিমের সংখ্যা— সব কিছুই যাচাই করতে চাইছে তারা। বিএসএফের এক্তিয়ার-বহির্ভূত এই কাজের তীব্র সমালোচনা করেছেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। কয়েকদিন আগেই বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। রাজ্য বিধানসভায় উঠে এসেছিল সেই প্রশ্ন। এবারও প্রতিবাদ করলেন। জানালেন, গ্রামের ভোটার সংখ্যা কত, তা বিএসএফের জানার কথা নয়। তিনি ট্যুইট করে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বিএসএফ কি তবে ২০২৪-এর জন্য তৈরি হচ্ছে? সীমান্ত থেকে অনেক ভিতরে দুরাচাপড়ি, খারিজা রাখালমারি, দিনহাটা বিধানসভা এলাকায় ঢুকে খবর নিচ্ছে ভোটার কত, শতকরা হিন্দু-মুসলমান কত? দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে এর কী সম্বন্ধ? ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এক্তিয়ার!’’ উদয়নের আরও অভিযোগ, বিএসএফের এই সব কার্যকলাপেই প্রমাণ, বিজেপির হয়ে কাজ করছে তারা।

আরও পড়ুন : হাঁসখালিতে বৃদ্ধার শেষকৃত্যে গিয়ে মুহুরি পরিবার প্রায় শেষ

এদিকে মুর্শিদাবাদে নানা ছুতোয় বিএসএফের অত্যাচার বাড়ছে। রাজ্য প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করতে কোনওরকম আলোচনা না করেই কেন্দ্র বাড়িয়েছে বিএসএফের এক্তিয়ার। এবার জওয়ানরা কাঁটাতারের বেড়া দিতে জোর করে শুরু করেছে জমি অধিগ্রহণ। তারই প্রতিবাদে নেমেছেন চাষিরা। এর জেরে চাষি এবং পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে বৈঠক করতে বাধ্য হল বিএসএফ। রবিবার চাষিদের নিয়ে বৈঠক করেন সুতি-১ ব্লকের বিডিও এইচ এম রিয়াজুল হক, ব্লক প্রশাসনের অন্যান্য কর্তা ও বিএসএফ আধিকারিকরা। পাশাপাশি এদিনের বৈঠকে ছিলেন বর্ডার সংলগ্ন এলাকা নুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরাও। মূলত চাষিদের রাজি করাতেই এই বৈঠক বসে। সুতি-১ ব্লকের বিডিও এইচ এম রিয়াজুল হক জানান, ‘‘এলাকার চাষিদের অনুমতি পেলে তবেই কাজ হবে। না হলে কোনওভাবেই হবে না বেড়া দেওয়া।’’ উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে ১২৫.৩৫ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে। এর মধ্যে ৪২.৩৫ কিলোমিটার ডাঙা। শুরু হয়েছে মাপজোকও। সামশেরগঞ্জ, সুতি ১, সুতি ২, রঘুনাথগঞ্জ ২, লালগোলা, ভগবানগোলা ১ ও ২, রানিনগর ২ ও জলঙ্গি ব্লকের অধীনে থাকা এই সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে বলে বিএসএফের তরফে জানানো হলেও চাষিরা অনুমতি দিচ্ছেন না।

আবার মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকাতেও সীমান্তে চাষবাস লাটে। সৌজন্যে বিএসএফের অত্যাচার। শীত পড়তে না পড়তেই কুয়াশা থাবা বসিয়েছে রানিনগর ব্লকের কাহারপাড়া, বামনাবাদ এলাকায়। আর তাকে অজুহাত করেই সময়মতো জমিতে চাষ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। কৃষকরা রীতিমতো শঙ্কিত। রানিনগরের পদ্মাপাড়ে বাংলাদেশ। রানিনগর ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শত শত বিঘা জমিতে চাষবাস চলে। পাটচাষের সময় পাচারের অভিযোগ তুলে কৃষকদের না যেতে দেওয়ার অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে হামেশাই ওঠে। এবার শীতের কুয়াশা চাষবাসের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল গরিব মানুষগুলোর কাছে। কাহারপাড়া, বামনাবাদ এলাকায় পদ্মার চার কিলোমিটার আগেই কড়া নজরদারি চলছে বিএসএফের। নিজের দেশে নিজের জমিতে সেই নজরদারি এড়িয়ে চাষ করতে যেতে পারছেন না ইউসুফ, হামিদ, কুতুব শেখরা। চাষিরা জানাচ্ছেন, কুয়াশা থাকলে বেলা ১১টার আগে জমিতে ঢুকতে দেয় না বিএসএফ। অত বেলায় গিয়েও বিকেলের আগেই ঘরে ফিরতে হয়। ফলে মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হয়। প্রতিবাদ করলেই জোটে মার। বেশি কিছু বললে পাচারকারী তকমা লাগিয়ে দেবে, এই ভয়ে গুটিয়ে থাকেন তাঁরা। কাঁটাতার পেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো কেন্দ্রীয় সরকার আবার বিএসএফের সীমানা বাড়িয়ে ৫০ কিমি করেছে। তাতেই রাতের ঘুম ছুটল সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েক হাজার কৃষকের।

 

 

Latest article