অপরাজিতা জোয়ারদার, রায়গঞ্জ : ওপারে চাষের জমি। বাবাকে চাষের কাজে সাহয্য করেন বছর ২২-এর শিল্পী। সেদিনও সকালে বাবার সঙ্গে যাচ্ছিলেন কাজে। সীমান্তে আটকায় বিএসএফ জওয়ান। জিজ্ঞাসাবাদের নামে সেদিন লোলুপ দুটো ঘোলাটে চোখ যেন গিলে খাচ্ছিল তাঁকে। প্রতিবাদ করার উপায় নেই। অনেকক্ষণ সহ্য করে আওয়াজ তুলেছিল শিল্পী। পথ ছাড়তে বলেছিল। রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয় তাঁদের। এই ঘটনা মনে পড়লে আঁতকে ওঠে শিল্পী। একা বেরতে ভয় পায়। শুধু শিল্পী নয়, আমিনা, হুসেনারা, স্বপ্নারাও কাজ থাকলেও যেতে পারে না সীমান্ত এলাকায়।
আরও পড়ুন : থানায় নিখোঁজ ডায়েরি, ভোটে জিতে উধাও বিজেপি বিধায়ক
সীমান্তে অনুপ্রবেশ, পাচার রোখার নামে দাঁড় করিয়ে বিএসএফের তল্লাশির নামে হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, করণদিঘি, ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা এই হয়রানির শিকার। প্রতিবাদ করার সাহস নেই তাঁদের। অত্যাচার বাড়বে। বলতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা আমিনা। তাঁদের অভিযোগ, বিএসএফের কড়া দমন নীতির ফলে তাঁদের দিন আনা দিন খাওয়া জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তায় চলাফেরা করতেও বাধা দেওয়া হয়। যখন তখন চলে তল্লাশি। এমনকী সীমন্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগও করেছেন এলাকার মহিলারা। পাশাপাশি তাঁরা মনে করছেন, এলাকার মহিলারা আরও বেশি ভুগবেন নিরাপত্তাহীনতায়। তাঁদের দাবি, যেকোনও সময় মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় বিএসএফ জওয়ানরা। চাষের সামগ্রী নিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে ফেরার সময়ও যত্রতত্র তল্লাশি শুরু করে তারা। এলাকা বৃদ্ধি পাওয়ার পর এই সমস্যা যে আরও বাড়তে পারে তা নিয়ে এখনই অশনিসংকেত দেখছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধূ বলেন, “আমরা রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে পারি না। বিএসএফের জাওয়ানদের চোখ অত্যন্ত বাজে ভাবে পড়ে। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। এলাকা বৃদ্ধি পাওয়ার পর আমাদের ছেলেমেয়েরা কতটা সুরক্ষিত তাই নিয়ে চিন্তায় আছি।’’