প্রতিবেদন : কংগ্রেস থেকে আজাদ হলেন গুলাম নবি। রাহুল গান্ধীর ওপর তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে শুক্রবার কংগ্রেসের সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করলেন কাশ্মীরের এই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেসের সঙ্গে ৫৭ বছরের সম্পর্ক শেষ করলেন গুলাম নবি আজাদ, যিনি ইন্দিরা গান্ধী-রাজীব গান্ধী-নরসিমা রাও হয়ে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন। সোনিয়া গান্ধীকে পাঠানো দীর্ঘ পাঁচ পাতার ইস্তফাপত্রে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব তো বটেই, তাঁর রাজনৈতিক যোগ্যতা-দূরদর্শিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও বড়সড় প্রশ্ব তুলে দিয়েছেন গুলাম নবি আজাদ।
আরও পড়ুন-শিশুকে ছুঁড়ে ফেলে মাকে গণধর্ষণ করল বিএসএফ
সোনিয়া গান্ধীর প্রতি আস্থা-ভরসা থাকলেও রাহুল গান্ধীর ওপর তা যে একেবারেই নেই একথাও পরিষ্কার লিখেছেন গুলাম নবি। এই চিঠি প্রকাশ্যে আসা মাত্র দেশ জুড়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে, যেখানে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে এখন গুলাম নবি আজাদ, এবং তার আগে কপিল সিব্বলদের মতো কংগ্রেসের সঙ্গে সমার্থক হয়ে যাওয়া নেতারা কংগ্রেস ছাড়েন, সেই দলটার প্রতি কোন ভরসায় ২০২৪-এ বাজি রাখবেন দেশবাসী৷ সোনিয়া গান্ধী অসুস্থ। রাহুল গান্ধী যিনি গত ৮ বছরে নিজের দলকেই ভরসাযোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারেননি। বরং একের পর এক নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। এরকম একজনের নেতৃত্বে কীভাবে ২০২৪-এ বিজেপি বিরোধিতা করে সফল হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন-চিকিৎসকের লক্ষ লক্ষ টাকা জালিয়াতি, টাকা সহ পাকড়াও তিন, সফল কলকাতা পুলিশ
গুলাম নবি আজাদ তাঁর কংগ্রেস ছাড়ার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন যে কয়েকটি বিষয়কে তার মধ্যে অন্যতম হল, বর্তমানে সোনিয়া গান্ধী কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি শুধু আছেন এই মাত্র। আসলে কংগ্রেসের সব সিদ্ধান্ত নেন রাহুল গান্ধীর সিকিউরিটি গার্ড এবং তাঁর আপ্ত সহায়ক, যা শুনে স্তম্ভিত গোটা দেশ। শিশুসুলভ-অপরিণত সহ একাধিক বাছাই করা বিশেষণ ব্যবহার করেছেন রাহুল গান্ধীর জন্য গুলাম নবি। শুক্রবার সোনিয়া গান্ধীকে লেখা পাঁচ পাতার দীর্ঘ চিঠিতে ছত্রে ছত্রে রাহুল গান্ধীর প্রতি তীব্র ক্ষোভ-অপমানের জ্বালা উগরে দিয়েছেন গুলাম নবি। এমনকী তিনি এও লিখেছেন যে রাহুল গান্ধী পুরোপুরি রাজনীতিতে আসার পর বিশেষ করে ২০১৩ এর জানুয়ারির পর থেকে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার জন্যই কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। এর আগে কপিল সিব্বল আর এবার গুলাম নবি আজাদের মতো বর্ষীয়ান অভিজ্ঞ নেতা কংগ্রেস ছাড়ায় নিঃসন্দেহে মুখ পুড়ল কংগ্রেসের। এই গোটা ঘটনায় ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতার নিরিখে কংগ্রেসের শেয়ার নিঃসন্দেহে তলানিতে নেমে এল। এত বড় ধাক্কার পরে সোনিয়া বা রাহুল গান্ধী কিছুই বলেননি। কারণ বলার মতো অবস্থায় তো তাঁরা নেই। কীই-বা বলতেন। গুলাম নবি আজাদ কার্যত হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-ওয়াঘা-আটারি সীমান্তে ঘুরে সেনা জওয়ানদের স্যালুট জানালেন তৃণমূল বিধায়ক
বিশেষ করে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হেরেছে রাহুল গান্ধীর অপরিণত রাজনীতি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা দূরদর্শিতার অভাব ও সিনিয়রদের কথা না শোনার কারণেই। বক্তব্য গুলাম নবি আজাদের। সোনিয়া গান্ধীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও দলের জন্য সোনিয়া গান্ধীর চেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়ে গুলাম নবি লিখেছেন, রাহুল গান্ধী প্রতিপদে সিনিয়র কংগ্রেস নেতাদের অপমান করেছেন, তাঁদের মতামত কানে তোলেননি বরং অনভিজ্ঞ কোটারির নেতা তুলে এনে তাঁদের হাতেই সব দায়িত্ব দিয়েছেন। আর তাতেই কংগ্রেসের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত হয়েছে।
বারবার বহুভাবে রাহুল গান্ধীকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি তা শোনেননি। ৭৩ বছরের এই কংগ্রেসি তাঁর জীবনে ইন্দিরা গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধী বা পরবর্তী অধ্যায় কংগ্রেসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যে সাফল্যের সঙ্গে সামলেছেন সে কথাও চিঠিতে মনে করিয়েছেন সোনিয়াকে। চিঠিতে উঠে এসেছে ৩০ জন কংগ্রেসি নেতার কথা যাঁদের কথাও রাহুল গান্ধী শোনার প্রয়োজন মনে করেননি।
গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে আরও ৬ জন নেতা কংগ্রেস ছেড়েছেন। জম্মু-কাশ্মীরে নতুন দল তৈরি করবেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছেন গুলাম নবি আজাদ।