সিধু
কেমন লাগছে এবারের বাংলা সংগীতমেলা?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ আয়োজিত এবারের বাংলা সংগীতমেলা দারুণ জমে উঠেছে। সুন্দর আয়োজন। নিজে গিয়েও দেখেছি। পাশাপাশি বন্ধুদের মুখেও শুনছি। প্রতিদিন দর্শক সমাগম খুবই ভাল হচ্ছে। রাজ্য সরকারের আয়োজনে কোনও ত্রুটি নেই। এবারের বাংলা সংগীতমেলায় পারফর্ম করতে পেরে ‘ক্যাকটাস’ খুবই খুশি। দারুণ এনজয় করেছি।
প্যান্ডেমিকের পর আবার মঞ্চে, কীরকম অনুভূতি?
সাংঘাতিক অনুভূতি। মৃত্যুশয্যা থেকে উঠে আসার মতো অনুভূতি। গত দেড় দু’বছর আমরা মঞ্চের বাইরে, অনুষ্ঠানের বাইরে, রোজগারের বাইরে ছিলাম। খুবই দুঃখ-কষ্টে ছিলাম। ধীরে ধীরে সমস্তকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরা আবার গান-বাজনা করছি, দর্শকরা আসছেন, অনুষ্ঠানের খবর আসছে। আয়োজকরাও চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। এই পরিস্থিতিতে একটাই প্রার্থনা, ওমিক্রন যেন কোনওভাবেই তার প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। সতর্ক থাকতে হবে আমাদেরও। মেনে চলতে হবে নিয়মবিধি। পরতে হবে মাস্ক, ব্যবহার করতে হবে স্যানিটাইজার। সরকারি অনুষ্ঠানগুলোয় গিয়ে দেখছি এইগুলো মেনটেন করা হচ্ছে।
শীতের মরশুমে কতগুলো অনুষ্ঠান করলেন?
অনেকগুলো। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি মোট সাতটা অনুষ্ঠান। আরও বেশকিছু অনুষ্ঠানের খবর আসছে। আশা করি নতুন বছর ভালই যাবে।
নতুন বছরের পরিকল্পনা?
গান-বাজনা নিয়ে সারা বছর কাটাতে চাই। শ্রোতারা যেন আমার গান পছন্দ করেন, সেই চেষ্টা করব। কিছু নতুন রিলিজ আছে। ১ জানুয়ারি রিলিজ করছে আমাদের একটি গান ‘আকাশ’। এটা নন ফিল্মি। নতুন বছর রিলিজ করছে একটি নতুন সিনেমা ‘আবার বছর কুড়ি পরে’। এতে আমার এবং পটার একটি ডুয়েট গান আছে। নাম ‘বন্ধু’। আশা করি শ্রোতাদের ভাল লাগবে। গানবাজনার বাইরে চাই নতুন বছরে আর একটা কাজ করতে, আমি একটু রোগা হতে চাই। বন্ধুবান্ধবরা অনেকেই এই পরামর্শ দিয়েছেন। দেখা যাক। ইংরেজি নতুন বছর সবার খুব ভাল কাটুক।
সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়
বাংলা সংগীতমেলার আজ শেষ দিন। এবারের মেলা কতটা জমজমাট?
খুবই জমজমাট। এই সংগীতমেলা পশ্চিমবঙ্গের গর্ব। খুব সংগঠিত একটি মেলা। বহু মানুষ এই মেলার সঙ্গে জড়িত। আমরা কিছুটা হলেও পরিচিত শিল্পী। দর্শক-শ্রোতারা বিভিন্ন জায়গায় আমাদের গান শোনার সুযোগ পান। সংগীতমেলা আমার কাছে অর্থবহ এই কারণে, এখানে বহু নতুন শিল্পী সুযোগ পান। যাঁদের গান সারা বছর শোনার সুযোগ খুব বেশি থাকে না। সংগীতমেলায় গান গেয়ে আমি খুব আনন্দ পাই। এবারেও পেয়েছি। পাশাপাশি গেয়েছি রাজ্য সরকারের পৌষ উৎসবেও। টালা পার্কে ছিল আমার অনুষ্ঠান। আমাদের বড় সুবিধা এটাই, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন নিজে একজন সংগীতশিল্পী। তিনি এই জগতের প্রায় সবাইকেই চেনেন, জানেন। গায়ক-গায়িকাদের পাশাপাশি তিনি মিউজিশিয়ানদেরও চেনেন। এটা একটা মস্তবড় সুবিধা। প্যান্ডেমিকের পরে শিল্পীরা সবাই এই সংগীতমেলার দিকে তাকিয়ে বসে ছিলেন।
প্যান্ডেমিকের পরে মঞ্চ ফিরে পেয়ে কেমন লাগছে?
ব্যক্তিগত কথা বলি। যত সিনেমার মিউজিক বা বিজ্ঞাপনের কাজ করি না কেন, আমি মনে করি মঞ্চেই আমার সুন্দর সময় কাটে। তাই মঞ্চে ওঠার থেকে ভাল কিছু আর হয় না। মুখোমুখি শ্রোতা-দর্শকদের গান শোনানোর অনুভূতিই আলাদা।
নতুন বছরের পরিকল্পনা?
সবথেকে বড় কথা, আমাদের অনুষ্ঠান আবার শুরু হয়েছে। শীতের মরশুমে ইতিমধ্যেই বেশকিছু অনুষ্ঠানে আমরা অংশ নিয়েছি। আমি চাই আরও ভালভাবে মানুষকে গান শোনাতে। তারজন্য বেশি সময় রিহার্সাল করতে চাই। সামনে বেশকিছু অনুষ্ঠান আছে। প্রায় ১৫টা অনুষ্ঠান। চলছে তার প্রস্তুতি। আরও কয়েকটা অনুষ্ঠানের কথা চলেছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি মার্চ মাসের অনুষ্ঠানের জন্যেও ফোন আসছে। এটা খুব ভাল লক্ষণ। গানের মধ্যে দিয়ে যাতে সবাইকে আনন্দ দিতে পারি, প্রতি মুহূর্তে তার চেষ্টা করছি। অবশ্য সবকিছু ঠিকঠাক চলবে তবেই, যদি আমরা কোভিড নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে চলি। এটা ছেড়ে দেওয়ার ফলে আবার যদি কোভিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন বহু মানুষের ক্ষতি হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার ফলে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। সেই ভয়াবহ দিন যেন আর ফিরে না আসে। সতর্ক হতে হবে সবাইকে। করতে হবে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার। সরকারি অনুষ্ঠানে একটা নিয়ন্ত্রণ থাকে। এই নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে সব জায়গায়।
রাঘব চট্টোপাধ্যায়
বাংলা সংগীতমেলা কতটা জমেছে?
অসম্ভব জমেছে। এক কথায়, দারুণ। অন্যবার তো জমেই। এবার যেন আরও বেশি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অপূর্ব ব্যবস্থাপনা। তাঁদের কাজের কোনও তুলনাই নেই। চমৎকার সাজানো-গোছানো। দারুণ সাউন্ড সিস্টেম। যন্ত্রসংগীত শিল্পীরাও চমৎকার বাজাচ্ছেন। আমি গান গেয়েছি একতারা মঞ্চে। দর্শক-শ্রোতারা তাঁদের ভাললাগার কথা জানিয়েছেন। খুব আনন্দ পেয়েছি। এর পাশাপাশি হচ্ছে পৌষমেলাও।
কেমন লাগছে প্যান্ডেমিকের পরে মঞ্চ ফিরে পেয়ে?
খুবই ভাল লাগছে। দারুণ অনুভুতি। সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানগুলো শুরু হয়েছে। অর্থনৈতিক সমস্যা সব জায়গায়, সব সেক্টরে চলছে। আমাদের সবাইকেই একটু কম্প্রোমাইজ করে চলতে হচ্ছে। ওভারঅল খুব ভাল রেসপন্স। মানুষের আবেগ উচ্ছ্বাসটা আমরা অনুভব করতে পারছি। নভেম্বর মাস থেকেই বেশ কিছু অনুষ্ঠান করলাম। অনুষ্ঠানগুলো করতে পেরে আমরাও খুব খুশি।
প্যান্ডেমিকের সময়টা কীভাবে কেটেছে?
কিছু অনলাইন অনুষ্ঠান করেছি। গান শিখিয়েছি। নিজেও শিখেছি। এইভাবে নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের একটা মিউজিক অ্যাকাডেমি আছে। সময় কাটিয়েছি সেখানকার স্টুডেন্টদের সঙ্গে। বাড়িতে একটা রেকর্ডিং স্টুডিও আছে। সেখানে কিছু কাজ করেছি। কম্পোজ করেছি নতুন গান। এইভাবেই কেটেছে।
আরও পড়ুন-মনে পড়ে সেদিনের কথাগুলো
নতুন বছরের পরিকল্পনা?
এখনও সেভাবে কিছু ভাবিনি। তবে দুই বছরে অনেক কিছু কাজ পেন্ডিং হয়ে আছে। সেই কাজগুলো আস্তে আস্তে করে ফেলার ইচ্ছে আছে। নতুনদের গান শেখাব। পাশাপাশি শিখব আমার গুরুদের কাছে। শেখার কোনও শেষ নেই। বেরোবে আমার কিছু সিঙ্গলস। তারজন্য অডিও রেকর্ড করব, মিউজিক ভিডিও বানাব। এইভাবেই দর্শক-শ্রোতাদের সামনে নতুন বছরে হাজির হব নতুন গান, নতুন কাজ নিয়ে। নতুন বছর সবার খুব ভাল কাটুক।
শান্তনু রায়চৌধুরী
প্যান্ডেমিকের সময় কীভাবে কেটেছে?
সংগীত সকল কালে সকল সময়ে আনন্দের ও সুন্দর। ঈশ্বরের স্বরূপ সংগীত। লকডাউনের সময় আমাদের অনেক অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। মনের মধ্যে সাময়িকভাবে একটা খারাপ লাগা জন্ম নিয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। তবে বন্ধুবান্ধব এবং কিছু সংগীতপ্রেমীর অনুরোধে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরে আসি। শুরু করি লাইভ অনুষ্ঠান। বেশকিছু আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, যাঁরা মিউজিকের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের আমন্ত্রণে দু-একটি লাইভ অনুষ্ঠান করি। এইভাবেই চলতে থাকে গানবাজনা। পাশাপাশি ভারতীয় সংগীত সম্পর্কে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছি। ফলে প্যান্ডেমিকে আমার মধ্যে আর অবসাদ আসেনি। মনে হয়েছে, পৃথিবীতে যখন যা ঘটছে, সবই ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই হচ্ছে। আমি তো এক ক্ষুদ্র মানুষ। সংগীত একটা ব্যক্তিগত পূজার মতো। লকডাউনের সময় তাঁর কৃপায় সম্পূর্ণরূপে সংগীতের কাছে নিবেদন করার চেষ্টা করেছি। গত দুই বছরে আমার খাওয়া-পরার কোনও অভাব হয়নি। আসলে সংগীত তো ঈশ্বর। বাবা-মা যেমন খাওয়া-পরার অভাব রাখেন না, সংগীতও তাই। সেইসময় সংগীত সাধনার পাশাপাশি ছবি আঁকা, কোলাজ করা, বাগান করার মধ্যে দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছি। সবমিলিয়ে প্যান্ডেমিকের সময় নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করার সুযোগ পেয়েছি।
আবার মঞ্চ ফিরে পেয়ে কেমন লাগছে?
ভাল লাগছে। তবে প্যান্ডেমিকের সময় মঞ্চে দাঁড়িয়ে দর্শকদের সামনে গাওয়ার সুযোগ পাইনি বলে আমার সেইরকম কোনও আক্ষেপ নেই। দর্শকরা আমার কাছে ঈশ্বর। ঈশ্বর তো সর্বত্র বিরাজমান। তার আনন্দেই মেতে আছি। অনলাইন অনুষ্ঠান হোক বা অফলাইন, অন স্টেজ হোক বা অফ স্টেজ, কেউ না কেউ এই সংগীত শুনেই চলেছেন। তাছাড়া বাতাস তো আছেই। তাই না? শীতের মরশুমে বেশকিছু অনুষ্ঠানে দর্শকদের সামনে গাওয়ার সুযোগ হল। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পৌষ উৎসব এবং বাংলা সংগীতমেলা।
কতটা জমজমাট এবারের বাংলা সংগীতমেলা, পৌষ উৎসব?
এবারের বাংলা সংগীতমেলা এবং পৌষ উৎসব খুব ভাল লেগেছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পীদের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তারজন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। পরমশক্তি এই মানুষটিকে সকল সময় ভাল রাখুন, শক্তি দিন— এই প্রার্থনা। সংগীতমেলা ও পৌষ উৎসব অবশ্যই এক খোলা জানালা। তাই মানুষ এই উৎসব থেকে আনন্দের রসদ পাচ্ছেন।
নতুন বছরের পরিকল্পনা?
সেইরকম কোনও পরিকল্পনা নেই। আছে শুধুই প্রার্থনা। ঈশ্বরের কৃপায় সকলে ভাল থাকুক। সকলে সকলের সঙ্গে থাকুক। সবাইকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা।