অঙ্কিতা মল্লিক
কয়েকদিন আগেই আমাদের দোল এপিসোডের যখন শ্যুটিং হল খুব মজা হয়েছে। আমরা সব্বাই ছিলাম। সত্যি এখন উৎসব মানেই একটা ইভেন্ট। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সবকিছুই খুব পরিকল্পনা করে আগে থেকে ভেবে করা হয়। দিন বদলাচ্ছে কনসেপ্ট বদলে যাচ্ছে। সুন্দর ছবিটাই এখন একটা বড় ব্যাপার তাই পুরনো নয় নতুন জামা পরে এখন সবাই দোল খেলে। আমাদের শ্যুটিং সেটে যে কোনও উৎসবকে উপলক্ষ করেই খুব আনন্দ হয়। একটা উৎসবের পরিবেশ এবং আমেজ তৈরি হয় যেটার মধ্যে সবাই ইনভলভ থাকে। দর্শকরা বাড়ি বসেই ওই মুহূর্তগুলোকে এনজয় করতে পারে। আমার ফুলের দোল আর আবির দিয়ে দোল খেলতেই বেশি ভাল লাগে। রং ছোটবেলায় খেলতাম এখন আর খেলা হয় না। দোলের (Dol yatra 2024) জন্য আমার আলাদা করে কোনও প্ল্যানিং থাকে না। ওই দিনটা ছুটি থাকবে। ঠিক কী করব এখনও জানি না। তবে খুব মজা করব। বাড়িতেই থাকব। তবে শৈশবের সেই স্মৃতি আজও অমলিন। আমার খুব ভাল লাগার একটা দিন।
সৌমদীপ মুখার্জি
ছোটবেলায় পাড়াতে একেবারে রং মেখেই দোল (Dol yatra 2024) খেলতাম। আবির নয় একেবারে প্রপার রং যাকে বলে। দশটা থেকে দুটো আড়াইটে পর্যন্ত চলত তারপর বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া। সন্ধ্যেবেলা হই-হুল্লোড়। এখনও মনে আছে। ওইভাবে রং খেলা হয় না। তবে জগদ্ধাত্রীর সেটে দোলের একটা প্রোমো শ্যুটিংয়ের দিন বা পুরো এপিসোডটা যখন শ্যুটিং হয়েছিল তখন খুব আনন্দ হয়েছে। পুরো শ্যুটিং ফ্লোরে দোলের সিকোয়েন্স। যেখানে জগদ্ধাত্রী, স্বয়ম্ভূ, কৌশিকী ধারাবাহিকের সব চরিত্র অর্থাৎ আমি, অঙ্কিতা, রূপসাদি— আরও সবাই ছিলাম। ওখানেই একটা ঘটনা ঘটেছে সেই নিয়েই পুরো পর্বটা। ফলে এই শ্যুটিংটা নিয়ে কয়েকদিন ধরে সেটেই আবির খেলা চলেছিল। বেশ এনজয় করেছি। এখন দোল বলুন বা অন্য কোনও উৎসব সবটাই যেন পুরো একটা ঝাঁ-চকচকে ইভেন্ট। উৎসব এখন ইভেন্টে পরিণত হয়েছে। বিষয়টা আমরা যেমন এনজয় করি তেমন দর্শকরাও করেন। ভীষণভাবে তাঁরা দেখতে চান এগুলো। ফলে সেইদিনগুলোর রেটিংও বেশি থাকে। পুরোটাই পারফর্মেন্স। কে কতটা ভাল করল সেটাই দিনের শেষে দেখা হয়। দোলের দিন আমার ছুটি। রং খেলব না কিন্তু দিনটা পরিবার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কাটাব।
স্বস্তিকা ঘোষ
ইভেন্ট মানেই তো আনন্দ। আমার যেটা মনে হয় এখন সব মানুষ আনন্দ করতে চায়। আমরা শিল্পীরা সারাবছর চার দেওয়ালের মধ্যে শ্যুটিং করি। কোনও পরিবর্তন নেই সেখানে। এমনও হয় রিপিট সংলাপ বলতে হয়। দর্শক সেটাতেও আনন্দ পান। দীপা রোজ একই জামাকাপড় পরে, একইরকম মেকআপ করে, একই সাজ সাজে। সেদিনের দোল ইভেন্টে বা দোলের শ্যুটিংয়ে দীপা একটু আলাদা করে সাজল। সবাই একসঙ্গে হল খাওয়াদাওয়া হল। যেটা রোজ হত না। আমাদেরও একটু চেঞ্জ এল। মানুষের কাছে এখন আনন্দটাই সবকিছু। তাই তাঁরা এখন ইভেন্ট করতে চান। তাই কথায় কথায় ইভেন্ট হয়। আমার সেটা খুব ভাল লাগে। দোলের দিনটায় পরিকল্পনা কিছু নেই। আবির খেলতে খুব ভালবাসি। গ্রামে থাকতে আবির খেলতাম, পুকুরে স্নান করতাম— সেগুলো খুব মিস করি। এ-বছর শান্তিনিকেতনে যাবার ইচ্ছে রয়েছে। ওখানকার হোলি খেলা দেখব। খুব এনজয় করব। আগের বছর কো-অ্যাক্টররা মিলে দোলের (Dol yatra 2024) আগের দিন নিজেরা হোলি খেলেছি। দারুণ মজা করেছি। এবারও সেটা করার ইচ্ছে আছে।
আরও পড়ুন- এক নারীর আত্মত্যাগ অন্য নারীর আত্মজাগরণের দোল
রাহুল মজুমদার
গত বছর সাত-আটদিন ধরে আমাদের দোলের শ্যুটিং হয়েছিল। রোজ ফ্লোরে গিয়ে রং মেখে শ্যুট করে আবার বাড়ি ফিরে স্নান করে পরেরদিন আবার একই জিনিস করেছি যেটা বড্ড হেকটিক হয়ে যায় আমার মনে হয়। কিন্তু তা-ও খুব ভাল লাগে কারণ দর্শকদের জন্যই সবকিছু। তাই এটা তো করতেই হবে। যে-কোনও উৎসব এখন টেলিভিশনে প্রোমো রিলিজ থেকে শুরু হয়ে বেশ সাতদিন-দশদিন ধরে চলে। ইভেন্টের এটাই মজা। এই ধরনের ইভেন্টই মানুষ এনজয় করে। এবারেও হয়েছে এমনটাই। আমি নিজে দোল খুব একটা খেলি না। ছোটবেলায় লাল-নীল, হলুদ-সবুজ, সিলভার, গোল্ডেন— সব রং মেখেছি। ভূত হয়ে বাড়ি ফিরেছি। সেই উন্মাদনা আর নেই। শ্যুটিংয়েই যা হয়। এইদিনটা শ্যুট থাকে না। পুরো ছুটিটা বাড়িতেই কাটাই। একটু আবির খেলি। মায়ের হাতের তৈরি মালপোয়া দোলের দিন মাস্ট— আমাকে খেতেই হবে। আর প্রচুর আড্ডা-গল্প চলে। ব্যক্তিগতভাবে রং খেলার সামান্য ইচ্ছে থাকলেও সবটাই পূরণ হয়ে যাচ্ছে শ্যুটিংয়ে এসে। তাই বেশ ভাল লাগছে।
শ্বেতা মিশ্র
আসলে উৎসব আর উৎসব নেই। সেটা আজ ইভেন্ট। এটা শুধু দোল বলে নয় গোটা নেশন জুড়ে সবকিছুতে হয়ে গেছে। আগে বলত ভক্তি ঘরের ভিতরে হয়। এখন মিডিয়া পৌঁছে যাচ্ছে সেলেব্রিটিদের বাড়ির পুজো কভার করতে। ওখানে সবটাই ক্যামেরার কথা ভেবে অ্যারেঞ্জ করা হচ্ছে। তো আমার যেটা সবসময় মনে হয় সেখানে দাঁড়িয়ে এখন উৎসব মানে সবটাই শো বিজনেস বা ইভেন্ট। সবটাই অন্যকে বিনোদন দেওয়ার বিষয় হয়ে উঠেছে। আমি নিজে যদিও এই বিষয়ে বিশ্বাসী নই। একটু ব্যক্তিগত থাকতেই পছন্দ করি। তবে শ্যুটিং ফ্লোরে থাকলে দর্শকদের জন্য। সেটা তো করতেই হবে। কারণ টেলিভিশনে যা দেখানো হয় আমরা সবটাই করি দর্শকদের জন্য। সবটা বাস্তবে ঘটে না। তাই আমি নিজেও সেই ইভেন্টে শামিল হই। তবে এই ইভেন্ট-ইভেন্ট করে আমার মনে হয় পুজো বা উৎসবে আসল ফ্লেভারটা কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আগে যেমন বাড়ির সবচেয়ে বাজে জামা পরে আমরা রং খেলতাম এখন ওই দিনটার জন্য পোশাক কিনি। খুব মেপেজুপে আবিরটুকু গালে লাগাই যাতে ছবিটা ভাল হয়। আসল দোলের মজা তো তা নয়। আমি দোলের দিন বাড়িতেই থাকি ফ্যামিলির সঙ্গে সময় কাটাই। রং খেলা আর হয় না। একবার ইচ্ছে রয়েছে মথুরাতে ফুলের হোলি দেখার।