মার্ডার মুবারক

১৫ মার্চ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘মার্ডার মুবারক’। হোমি আদাজানিয়া পরিচালিত ছবিটি সাসপেন্স থ্রিলার। কাহিনি দানা বেঁধেছে একটি খুনের ঘটনাকে ঘিরে। অভিনয় অন্যতম সম্পদ। ক্যামেরার কাজও অসাধারণ। সবমিলিয়ে দেখার মতো একটি ছবি। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

দানা বাঁধে সন্দেহের বীজ
দিল্লি জুড়ে তোলপাড়। খুন হয়েছেন একজন সুপরিচিত জিম প্রশিক্ষক। যে সে জায়গায় নয়, ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লির এক অভিজাত ক্লাব, দ্য রয়্যাল ক্লাবে। ইংরেজদের হাতে তৈরি ক্লাবটি। বলা হয়, ইংরেজ চলে গেছে কবেই, তবে থেকে গেছেন ক্লাব-মেম্বাররা। তাঁরা নাকি ইংরেজের থেকেও বেশি ইংরেজ। ক্লাবের মেম্বার মূলত বিত্তশালীরাই। তাঁরা সমাজের উপর মহলের লোক। বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। মেম্বারের সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন। পাশাপাশি মেম্বারশিপ পাওয়ার জন্য ঝুলে রয়েছেন বহু মানুষ। এমন একটি ক্লাবে কী করে ঘটে গেল খুনের মতো একটি ঘটনা, বুঝে উঠতে পারেন না কেউ। তবে আশ্চর্যের বিষয়, মর্মান্তিক এই ঘটনায় কিন্তু বিন্দুমাত্র বিচলিত বা শোকগ্রস্ত নন ক্লাবের মেম্বাররা। তাঁরা আছেন বিন্দাস। বহাল তবিয়তে। মেতে রয়েছেন আনন্দ উৎসবে। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় নামমাত্র শোকপ্রকাশ করে দায় সেরেছেন। তবে সেগুলিও রীতিমতো অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানেই দানা বাঁধে সন্দেহের বীজ। শুরু হয় তদন্ত। ধীরে ধীরে উঠে আসে বেশকিছু অবাক করার মতো তথ্য। উন্মোচিত হতে থাকে ক্লাবের মেম্বারদের জীবনের গোপন রহস্য। বোঝা যায়, চকচকে মুখগুলো আসলে মুখোশ। মানবিকতার কোনও মূল্য নেই তাঁদের কাছে। সবমিলিয়ে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘মার্ডার মুবারক’ (Murder Mubarak) দুর্দান্ত একটি সাসপেন্স থ্রিলার। কাহিনির পরতে পরতে রয়েছে ভালবাসা, রাগ, যৌনতা, হিংসা। পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে এগোতে হয় হত্যাকারীর দিকে। সেই পথ মোটেই সহজ নয়, বেশ জটিল। কারণ সন্দেহভাজন একাধিক। সমস্ত চেনা যেন কোন মন্ত্রবলে অচেনা হয়ে যায়। একেবারে শেষে পাওয়া যায় অপরাধীর দেখা।

তারকাসমৃদ্ধ ছবি
অভিনয় এই ছবির অন্যতম সম্পদ। আছেন একঝাঁক তারকা। এসিপি ভবানী সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। তাঁর সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। মস্তিষ্ক দিয়ে অভিনয় করেন। প্রতিবারের মতো এবারও মুগ্ধ করেছেন। তাঁর বিশেষত্ব হল, অভিনয়ের সময় তিনি আর ‘পঙ্কজ ত্রিপাঠী’ থাকেন না। হয়ে ওঠেন সেই বিশেষ চরিত্রটি। হাঁটাচলা, হাবভাব, কথাবার্তায়। এই ছবিতেও তিনি যতটা সম্ভব নিখুঁত। কখনও নির্মম। কখনও শান্ত। মাঝে-মধ্যে রসিকতা বুনে দেন। কথা বলে ওঠে তাঁর দুটি চোখ। তিনি যেন মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি। উচ্চবিত্তদের আসল রূপ টেনে বের করে আনতে চান। ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা গেছে সারা আলি খানকে। আশ্চর্য অভিনয় ক্ষমতা রয়েছে এই নবাব-কন্যার। যদিও বলিউড এখনও পর্যন্ত তাঁকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ। এই ছবিতে অনেকের ভিড়ে তিনি নজর কেড়েছেন। বম্বি চরিত্রের ভিন্ন শেডস বেশ দক্ষতার সঙ্গেই ফুটিয়ে তুলেছেন। বহুদিন পর পর্দায় দেখা গেল করিশ্মা কাপুরের অভিনয়। নয়ের দশকের বহু হিট ছবির নায়িকা যে একজন দক্ষ অভিনেত্রী, আরও একবার প্রমাণ করলেন। মহারাজার চরিত্রে সঞ্জয় কাপুরকে দারুণ মানিয়েছে। নিজস্ব অভিনয় দক্ষতায় ছবিতে অন্য মাত্রা এনেছেন ডিম্পল কাপাডিয়া। আজও তিনি আনপ্যারালাল। টিসকা চোপড়ার অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। ছবিতে বিজয় বর্মার সুযোগ ছিল কম। তবে যতটুকু পেয়েছেন, নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। বাকিরা যথাযথ।

আরও পড়ুন- বসন্ত পূর্ণিমার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ…

আদ্যোপান্ত সোশ্যাল স্যাটায়ার
ছবিটি পরিচালনা করেছেন হোমি আদাজানিয়া। এর আগে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। তবে এটা তাঁর অন্যতম সেরা কাজ বললে অত্যুক্তি হবে না। গোটা ছবি জুড়ে বুনেছেন রহস্যের জাল। গুরুত্ব দিয়েছেন প্রত্যেকটা চরিত্রকে। কাজটা খুব সহজ ছিল না। সামান্য এদিকওদিক হলেই টাল খেতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। মার্ডার মিস্ট্রি যা যা ডিমান্ড করে, প্রায় সমস্তই পূরণ করেছেন। তবে ছবিটা কিন্তু নিখুঁত নয়। বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে চোখে। প্রথমার্ধে চিত্রনাট্যের বাঁধন বেশ আলগা লেগেছে। অভিজাত শ্রেণির নাক-উঁচু ভাব দেখাতে গিয়ে অকারণে ব্যয় করা হয়েছে অনেকটা সময়। কিছু সংলাপ মনে হয়েছে অপ্রয়োজনীয়। অনায়াসেই কাটছাঁট করা যেত। তবে দ্বিতীয়ার্ধ পুষিয়ে দিয়েছে প্রথমার্ধের খামতি। বেশ জমজমাট। চিত্রনাট্য টানটান। এককথায় ছবিটি আদ্যোপান্ত সোশ্যাল স্যাটায়ার। বিত্তশালীদের জীবন বা এই ক্লাবগুলোর ভিতরে ঠিক কী কী ঘটে, সেটার এক ঝলক তুলে ধরা হয়েছে।

মনে রেখাপাত করে
নেই তেমন গানের ব্যবহার। এর ফলে ছবিটি কিছুটা হলেও হয়েছে নির্মেদ। লিনেশ দেশাইয়ের ক্যামেরার কাজ অসাধারণ। কিছু কিছু দৃশ্য মনে রেখাপাত করে। সবমিলিয়ে ‘মার্ডার মুবারক’ (Murder Mubarak) দেখার মতো একটি ছবি। ১৫ মার্চ মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সে। মার্ডার মিস্ট্রি পছন্দের তালিকায় থাকলে দেখে নিতে পারেন।

Latest article