এবার বুঝি নোংরা খেলা চরম পর্যায়ে?

দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি ছিল অনেক দিন থেকেই। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইডি গ্রেফতারের পর ছবিটা একেবারে পরিষ্কার। ভীত বিজেপি, সন্ত্রস্ত বিজেপি মিথ্যের গ্যাস বেলুন ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। তাই, তাই-ই নোংরা খেলায় এত উৎসাহ তাদের। লিখছেন তানিয়া রায়

Must read

ডবল ইঞ্জিন সরকারের প্রশংসা অনেক শুনেছি। ওই কথা শুনিয়ে শুনিয়ে আমাদের কান ঝালাপালা করে দিয়েছেন মোদি, অমিত শাহ। তাই, ইচ্ছে হল, সত্যি সত্যি ডবল ইঞ্জিন সরকারের চেহারাটা কেমন, সেটা একটু বুঝে নিই।
বুঝতে গিয়ে টের পেলাম ওই বুজরুকির তত্ত্বের ভেতর না যাওয়াই ভাল।
দক্ষিণ-পশ্চিম মধ্যপ্রদেশের বারওয়ানি। আদিবাসী-অধ্যুষিত জেলা। চিকিৎসার জন্য গরিব মানুষের একমাত্র ভরসা সরকারি জেলা হাসপাতাল। হাসপাতালে ৪০০টি বেড। কিন্তু চাপ এতটাই, সারা বছর বেডের জন্য হাহাকার লেগে থাকে। অগত্য মাটিতে শুইয়েও চলে চিকিৎসা। শীঘ্রই আরও বেহাল হতে চলেছে এলাকার গবির রোগীদের হাল। নেপথ্যে মধ্যপ্রদেশের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের নয়া সিদ্ধান্ত। রাজ্যের সব জেলা হাসপাতালের ২৫ শতাংশ বেড বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তার বদলে মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো গড়বে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা। অর্থাৎ, সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও এই বেডগুলিতে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ আর থাকবে না।
মধ্যপ্রদেশের নগরোন্নয়নমন্ত্রী কৈলাস বিজয়বর্গীয়। আমাদের ভীষণ চেনা এই বিজেপি নেতা (Shame on BJP)। একদা বাংলায় এসে বড় বড় বুলি আওড়াতেন। তিনি এখন বলছেন, নীতি আয়োগের সুপারিশ মেনে এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতেই এই উদ্যোগ। আর মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গরিবরা। এই নয়া নিয়ম চালু হওয়ার পর বারওয়ানি জেলা হাসপাতালে ৪০০টি বেডের মধ্যে ১০০টি চলে যাবে বেসরকারি হাতে। এগুলিতে ভর্তির জন্য লাগবে টাকা। এমনিতেই সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেডের আকাল চলে। বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ আরও কমে গেলে গরিব মানুষ যাবে কোথায়?
সরকারি তথ্য বলছে, মধ্যপ্রদেশে ৫২টি জেলা হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৫০। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ বেসরকারি হাতে চলে যাওয়ার অর্থ ৪ হাজার ২০০টির বেশি বেডে চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে।
ডবল ইঞ্জিন সরকারের এই হল মজা।
মোদি ম্যাজিক আর মোদি গ্যারান্টির এখানেই শেষ নয়।
আদর্শ আচরণ বিধি জারি হওয়ার পরেও হোয়াটসঅ্যাপে আসছিল ‘বিকশিত ভারত’-এর সরকারি বার্তা। সেটির মাধ্যমে বিজেপির (Shame on BJP) হয়ে প্রচার চালাচ্ছিল মোদি সরকার। অবিলম্বে ওই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠানো বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কাছে এই মর্মে নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে। গত শনিবার ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আইন মেনে সেদিন থেকেই জারি হয়ে গিয়েছে আদর্শ আচরণ বিধি (এমসিসি)। অর্থাৎ এরপর রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কোনও জনমোহিনী প্রকল্প ঘোষণা অথবা তার প্রচার করতে পারে না। কিন্তু, কেন্দ্রের ‘বিকশিত ভারত’ বার্তায় মোদি জমানায় ১০ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরা হয়। মোদি সরকারের এই প্রচার বেআইনি।

দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেস বলে আসছে, রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছেন রাজ্যপালরা। তারই মধ্যে এবার তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবির কাজকর্ম নিয়ে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের সুপারিশ সত্ত্বেও প্রবীণ ডিএমকে নেতা কে পনমুড়িকে মন্ত্রিসভায় শপথবাক্য পাঠ করাতে রাজি হননি রাজ্যপাল। ক্ষুব্ধ শীর্ষ আদালত স্পষ্টই বলল, রবি সুপ্রিম কোর্টকেও অমান্য করছেন। পনমুড়িকে পুনর্নিয়োগ করা নিয়ে তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে সুপ্রিম কোর্ট এ-বিষয়ে নির্দেশ জারি করবে। উল্লেখ্য, তিন বছরের সাজা হয়েছিল তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মন্ত্রী পনমুড়ির। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট তাঁর সাজায় স্থগিতাদেশ দেয়। এরপরই পনমুড়িকে মন্ত্রিসভায় পুনর্নিয়োগ করার জন্য রাজ্যপালের কাছে সুপারিশ করেন মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন। কিন্তু রাজ্যপাল তা না মানায় সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য।

আরও পড়ুন- এক নারীর আত্মত্যাগ অন্য নারীর আত্মজাগরণের দোল

রাজ্যপাল-কেন্দ্রিক সমস্যা পশ্চিমবঙ্গে বিরাজমান। তাই রাজভবনের নয়া ‘পোর্টাল’ চালুর বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচারপর্বও। এরই মাঝে ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি ‘লোগ সভা পোর্টাল’ নামে একটি পোর্টাল চালু করলেন। রাজ্যপালের নিজস্ব এক্স হ্যান্ডেল ‘রাজভবন কলকাতা@ বেঙ্গল গভর্নর’-এ এই পোর্টাল চালু ও তার কার্যকারিতা সম্পর্কে একটি পোস্ট করা হয়েছে। এরই বিরোধিতা করতে বাধ্য হয়েছে মা-মাটি-মানুষ।
এসবের মধ্যে ভোটের মুখে মরিয়া হয়ে এজেন্সিগুলিকে নামানো হয়েছে। ভোটের মুখে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক ধরপাকড়। প্রশ্ন, মানুষের নজর ঘোরাতেই কি তড়িঘড়ি গ্রেপ্তারির এই রাজনীতি শুরু হয়ে গেল? কী বোঝাতে চাইছে ওরা? বিজেপির বিরুদ্ধে যারাই লড়াইয়ের ময়দানে নামবে, তাদের ঠিকানা হবে জেল। জামিন মিলবে, তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর। দেশের টাকায় হরির লুট চালিয়ে যাবে ওরা। আর বিরোধীদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হবে। যে-কোনও মূল্যে বিরোধীদের ধ্বংস করতে চায় বিজেপি। ঠিক যখন বিজেপির তোলাবাজি বেআব্রু হওয়ার মুখে, তখনই এমন বিধ্বংসী চাল দিল ওরা। এটা ফ্যাসিজম ছাড়া কিছু নয়।
একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে যদি ভোটের আগে এভাবে গ্রেপ্তার করা হয়, কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা আশা করব? আজ যদি সুপ্রিম কোর্ট এবং নির্বাচন কমিশন মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, বিজেপির (Shame on BJP) দমনমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে কে দাঁড়ানোর সাহস পাবে?
মোদি ভাবতেই পারছেন না, ভারতবর্ষ তাঁকে কী প্রত্যাঘাত করবে। অপেক্ষা করুন।

Latest article