মেলালেন, তিনি মেলালেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্নার উদ্যোগেই জোড়া লাগল এক ভেঙে যাওয়া দাম্পত্য জীবন। কাগজে-কলমে এই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল ২৩ বছর আগে। কিন্তু, বিয়ের বছর দুই পরেই স্ত্রীর অভিযোগের কারণে জেলে যেতে হয় স্বামীকে। অন্ধপ্রদেশের গুন্টুর জেলার বাসিন্দা এই দম্পতি।
আরও পড়ুন-বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা মিজোরাম পুলিশের!
১৯৯৮ সালে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই কোল আলো করে আসে সন্তান। কিন্তু সন্তান জন্মের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি বাবা। স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে কারাবাস করতে হয়। ওই মহিলা স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির আরও তিন সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেন। ওই মামলায় নিম্ন আদালত মহিলার স্বামীকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের যান ওই মহিলা। তাঁর দাবি ছিল, স্বামীর কারাবাসের মেয়াদ বাড়াতে হবে। কিন্তু হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন ওই মহিলা। স্বামীর কারাবাসের মেয়াদ বাড়ানোই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
২০১২ সালে শীর্ষ আদালত বিষয়টি আপোসে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের কাছেই মামলাটি ফেরত পাঠায়। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। মামলাটি ফের সুপ্রিম কোর্টে ফিরে আসে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধান বিচারপতি রামান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ওঠে এই মামলা। প্রধান বিচারপতি রামান্না নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন ওই দম্পতিকে। কিন্তু প্রধান বিচারপতির ওই পরামর্শ কানে তোলেননি মহিলা। ঘটনার জেরে মামলাটির শুনানি হয় বুধবার। এদিন ভিডিও কনফারেন্সে ওই দম্পতি শুনানিতে অংশ নেন।
উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি বলেন, যদি স্বামীর কারাবাসের মেয়াদ বাড়ানো হয় তাহলে রাজ্য সরকারের যে চাকরি তিনি করেন তা খোয়াতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই ভদ্রমহিলা স্বামীর কাছ থেকে যে খোরপোষ পান তা বন্ধ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে তিনি চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়বেন। তাই তাঁরা যদি নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নেন তাহলে উভয়ের পক্ষেই সেটা ভালো হবে।
আরও পড়ুন-করোনা টিকা নিয়ে সাংসদ প্রসূনের প্রশ্নের জবাবে যা জানালেন মন্ত্রী
প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য শোনার পর ওই ভদ্রমহিলা তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকতে রাজি হন। তবে তিনি জানান, স্বামীকে তাঁর প্রতি যাবতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ভদ্রলোকও স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে রাজি হন। একই সঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, নিম্ন আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের যে আবেদন তিনি করেছেন সেটি প্রত্যাহার করে নেবেন। এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ওই দম্পতিকে জানান, দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিতভাবে তাঁদের একসঙ্গে বসবাসের কথা জানাতে হবে। প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে চলা একটি বিতর্কের অবসান হল।