রোদ উঠেছে হাসি ফুটেছে

বিধাননগর বইমেলা প্রাঙ্গণে চলছে ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। জমতে শুরু করেছে ভিড়। বিভিন্ন স্টলে বিকোচ্ছে দেশ-বিদেশের বই। শীতের আবহে মেলবন্ধন ঘটছে লেখক-পাঠকের। আজ রবিবার। মেলায় পালিত হবে শিশু দিবস। বিভিন্ন বয়সি পাঠকের উন্মাদনা পৌঁছবে চরমে। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

প্রথমদিন আবহাওয়া ছিল বিরূপ। অকাল বৃষ্টি কিছুটা হলেও ছন্দপতন ঘটিয়েছে। তবে দ্বিতীয় দিনই সরে গেছে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। ঝিলমিলিয়ে উঠেছে রোদ। প্রাণে উঠেছে খুশির তুফান। ফলস্বরূপ ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় জমতে শুরু করেছে ভিড়। নানা বয়সি বইপ্রেমী স্টলে স্টলে ঘুরছেন। নেড়েচেড়ে দেখছেন পুরোনো-নতুন বই। শীতের আবহে মেলবন্ধন ঘটছে লেখক-পাঠকের। শনিবার দুপুর থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে চেনা-ছবি। কেনাবেচা হয়েছে জমিয়ে। গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে জানালেন, ‘প্রথমদিন প্রায় প্রতিটি স্টলই খোলা ছিল। এসেছিলেন বহু মানুষ। দ্বিতীয় দিন থেকেই ভাল ভিড় হচ্ছে। শনিবার জনসমাগম অনেকটাই বেড়েছে। চলছে বেচাকেনা। হাসি ফুটেছে প্রকাশকদের মুখে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে মেলা। দিন যত এগোবে, ভিড় এবং বিক্রিবাটা তত বাড়বে।’

আরও পড়ুন-প্রাচীন বাংলার অখ্যাত শীতমেলা

আজ, রবিবার। ছোটদের দিন। মেলায় পালিত হবে শিশু দিবস। বড়দের হাত ধরে ভিড় জমাবে খুদেরা— আয়োজিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। ছোটদের প্যাভেলিয়নটি ষষ্ঠীপদ চট্টোপ্যাধ্যায় স্মরণে। মেলায় সব বয়সি পাঠকের উন্মাদনা পৌঁছবে চরমে। যাতায়াতের সমস্যা নেই। রাত পর্যন্ত চলছে বিভিন্ন রুটের বাস। শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত মেট্রো। করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন লাগোয়া বিধাননগর বইমেলা প্রাঙ্গণ।
মোট ৯টি গেট। প্রতিটি দিয়েই মেলায় ঢোকা ও বেরোনো যাচ্ছে। আছে বিশ্ববাংলা গেট এবং তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও লোরকার ১২৫তম জন্মবর্ষ উদযাপনে তাঁদের স্মরণে গেট। সমরেশ মজুমদার এবং এ এস বায়াটের নামে হয়েছে দুটি হল।
এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি ইউনাইটেড কিংডম। সরাসরি ও যৌথভাবে অংশ নিচ্ছে প্রায় ২০টি দেশ। আছে বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন। রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের প্রকাশনাও।

আরও পড়ুন-এক ডজন পিকনিক স্পট

বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হবে ২৬-২৮ জানুয়ারি। বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা। সিনিয়র সিটিজেন দিবস ‘চিরতরুণ’ পালিত হবে ২৪ জানুয়ারি। ‘জলের উপর পানি’র জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। বইমেলায় দারুণ চাহিদা। এ ছাড়াও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘আমাকে বিয়ে করবেন’, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ম্যাজিস্টোরি’, নলিনী বেরার ‘জল ঝিঁঝরি’, প্রচেত গুপ্তর ‘আজ একটা ভালো দিন’, জয়ন্ত দে-র ‘মনে যে জোনাক জ্বলে’, কুণাল ঘোষের ‘পথের বাঁকে এসে’, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘জগুমামা রহস্য সমগ্র ৫’, সিজার বাগচীর ‘প্রত্যাঘাত’, চুমকি চট্টোপাধ্যায়ের ‘মন জানলার গল্পরা’, দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্যালান্স শিট’ নিয়েও পাঠকের আগ্রহ রয়েছে। প্রবল উন্মাদনা চোখে পড়ছে আনন্দ পাবলিশার্স, দে’জ পাবলিশিং, পত্রভারতী, মিত্র ও ঘোষ, সিগনেট প্রেস, আজকাল, সংবাদ প্রতিদিন, করুণা প্রকাশনী, দীপ প্রকাশন, প্রতিভাস প্রভৃতি স্টলে। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে লম্বা লাইন। সন্দেশ, বিজল্প, কৌরব, সপ্তর্ষি প্রকাশন, মান্দাস, অরিয়ল পাবলিকেশন, আনন্দ প্রকাশন, এডুকেশন ফোরাম, জয়ঢাক প্রকাশন, বার্তা প্রকাশন, ছোটদের কচিপাতা, আমপাতা জামপাতা, উদার আকাশ, যুগ সাগ্নিক,, পাঠক, ছোঁয়া, অঙ্কুরোদগম প্রকাশনী, বই টার্মিনাস, সম্পর্কের শিকড় পাবলিকেশনের স্টলেও ভিড় উল্লেখ করার মতো। সপ্তধা-র কর্ণধার দেবাশিস ঘোষ জানালেন, ‘প্রথমদিন তেমন কিছু না হলেও, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিন আমাদের স্টলে ভালই বিক্রি হয়েছে।’ অন্যান্য বছরের মতো এবারও ‘জাগো বাংলা’ স্টলে চোখে পড়ছে মানুষের উন্মাদনা। পাওয়া যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন বই, সংকলন। পাঠকদের আগ্রহ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মণ্ডপটি ঘিরেও। এখানে আছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অন্তর্গত বিভিন্ন আকাদেমি ও পর্ষদের বই। এবারের লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নটি তৈরি হয়েছে সন্দীপ দত্ত স্মরণে। পত্রপত্রিকার সম্ভার সাজিয়ে বসেছেন সম্পাদকরা। ইসক্রা, নৌকো, শরৎশশী, পুরবৈয়াঁ, কিঞ্জল, আমি আমার মতো প্রভৃতি পত্রিকার টেবিলে দেখা যাচ্ছে পাঠকের আনাগোনা। আনন্দকানন পত্রিকার সম্পাদক অগ্নিশ্বর সরকার জানালেন, এবার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে লিটল ম্যাগাজিনকে। বাড়ানো হয়েছে প্যাভেলিয়নের মধ্যে চলাফেরার জায়গা।

আরও পড়ুন-ধান কেনাতেও কেন্দ্রের বঞ্চনা, তবু স্বনির্ভর প্রকল্পে ৩০ হাজার কোটি

এসবিআই অডিটোরিয়াম, প্রেস কর্নারের পাশাপাশি রয়েছে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সমরেশ বসু জন্মশতবর্ষ স্মরণে দুটি মুক্তমঞ্চ। সম্পাদক, প্রকাশক, কবি, সাহিত্যিকরা মেতে উঠছেন বই-পত্রিকা প্রকাশ, আলোচনা, কবিতাপাঠে। সঙ্গে থাকছে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ভিড় চোখে পড়ছে ফুড পার্কে। চলছে জমিয়ে পেটপুজো। তারপর গরম চা-কফিতে তৃপ্তির চুমুক। মেলায় বসেছেন কয়েকজন চিত্রশিল্পী ও হস্তশিল্পী। তাঁদের ঘিরেও উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার সঙ্গে মিশে রয়েছে মানুষের আবেগ, ভালবাসা। তাই প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে ওঠে তুমুল ঢেউ। আছে বিনোদনের বিবিধ উপকরণ। তবু বিন্দুমাত্র কমেনি মুদ্রিত বইয়ের চাহিদা। বরং দিন দিন বাড়ছে। পরিসংখ্যান অন্তত সেটাই বলে। সারা বছর হরেক মেলা। তবে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার কোনও তুলনাই হয় না। স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিল। আজও আছে। আগামী দিনেও থাকবে।

Latest article