চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়: দুর্গাপুজোর বাকি আর মাত্র ২০ দিন৷ গত ২ বছর করোনা ওলটপালট করে দিয়েছিল সব হিসেব-নিকেশ, কিন্তু এবার নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার পালা। শিল্পীদের সেই পুরনো ব্যস্ততা পুজোর আঁতুড়ঘর কুমোরটুলিতে। বাংলার ঘরে ঘরে আবার আলো করে আসুক মা, এই প্রার্থনা নিয়েই আলোর বেণু বেজে ওঠার প্রহরগোনা শুরু।
কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। তারপরেই মা আসবেন। আর এই সময়ে তুঙ্গে প্রতিমা নির্মাণের প্রস্তুতি। যার ব্যস্ততা ধরা পড়ল কুমোরটুলির আনাচে-কানাচে। গোটা কুমোরটুলির (kumartuli) মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশই বংশপরম্পরায় বাঁচিয়ে রেখেছেন প্রতিমা তৈরির ঘরানা। কুমোরটুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষ মৃৎশিল্পীদের মাঝে জায়গা করে নিয়েছেন মহিলা মৃৎশিল্পীরাও। তাঁরাই প্রকৃত অর্থে কুমোরটুলির দশভুজা। কুমোরটুলির অলিতে গলিতে প্রতিমা তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। বাঁশের উপর খড়ের কাঠামো, তারপর মাটির প্রলেপ, তার ওপর রং। সবশেষে মাথার চুল, হাত ও গলার অলংকার, অস্ত্রশস্ত্র। এ ছাড়াও আছে শোলার কাজ, চাঁদমালা, চালচিত্র, ময়ূরের পাখা, সিংহের কেশর, হাঁসের নানান কারুকাজ, মা দুর্গার অলঙ্কার। শুধুমাত্র দুর্গাপুজোকে ঘিরে ছোট ছোট জলধারার মতো নানান বিচিত্র শিল্প ও শিল্পীর সৃষ্টি হয় এই কুমোরটুলিতে।
আরও পড়ুন-তৃণমূলের লাগাতার আন্দোলনে ২০ শতাংশ বোনাস পেলেন চা-শ্রমিকরা
এমনই এক মহিলা শিল্পী চায়না পাল। তাঁর কথায়, সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপে পড়ে কাজ শেখা শুরু। বাবার হাত ধরেই কাজ শেখা। চায়না পালের প্রতিমার বিশেষত্ব হল এক চালার প্রতিমা। মাঝে পুজো কমিটির আব্দার মেনে থিম পুজোর কাজ করলেও, সাবেকিয়ানার টানে এখন শুধুই একচালার প্রতিমা তিনি তৈরি করছেন। এবারও তাঁর প্রতিমা ভূপাল, নেপাল গিয়েছে। একমাত্র মহিলা শিল্পী হিসেবে রাজ্যপালের পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তাঁর শিল্পসৃষ্টি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও সমাদৃত। তিনি নিজে বলছেন, সারা বছর এই কাজ করেই সংসার চলে। তবু এর মধ্যেই শিল্পসত্তাকে খুঁজে পাই। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চিনেও গিয়েছি। সেখানে বাংলার তথা কুমোরটুলির শৈল্পিক সৌন্দর্য, শিল্পসৃষ্টিকে প্রবাসীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।