প্রতিবেদন : আপনাদের এলাকার পঞ্চায়েতের প্রার্থী আপনারাই ঠিক করুন। আপনাদের যদি মনে হয় এলাকার কোনও সজ্জন ব্যক্তি যিনি প্রার্থী হলে দল নয় সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে, আপনাদের দাবিকে অগ্রাধিকার দিয়েই তৃণমূল কংগ্রেস কাজ করবে। তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকেই প্রার্থী করবে। শনিবার রানাঘাটের মিলন মন্দির ময়দানে ঐতিহাসিক জনসভায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
আরও পড়ুন-ব্যবস্থাপনায় খুশি শাহ, মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে দফতরে
মঞ্চে দাঁড়িয়েই তিনি একটি ফোন নম্বর (৭৮৮৭৭-৭৮৮৭৭) দিয়ে বলেন, এই নম্বরে সরসরি ফোন করে আমাকে জানান। আমার আর আপনাদের মাঝখানে আর কোনও দেওয়াল রইল না। একইসঙ্গে দলীয় শৃঙ্খলা-সহ একাধিক ইস্যুতে এদিন কড়া বার্তা দেন তিনি। এদিন অভিষেক ছিলেন কার্যত বিধ্বংসী মেজাজে। তাঁর কথায়, আমি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, অন্য কেউ নয়। দলে কোথায় কে কী করছে আমি তার নজরদারি করছি। ফলে কেউ যদি মনে করেন নিজের মতো করে চলবেন, যা খুশি তাই করবেন তাহলে ভুল ভাবছেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে নদিয়া জেলার এই অঞ্চলে তৃণমূলের ফলাফল ভাল হয়নি।
এদিন সেকথা উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, কী এমন ঘটল যে এখানকার কিছু মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিলেন? নিজেই এর উত্তর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলের কিছু মানুষের আচার-ব্যবহার-ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্যই মানুষ মুখ ফিরিয়েছেন। এরপরেই মিলন মন্দির ময়দানের জনসমুদ্রকে সামনে রেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভুল করলে আমায় ক্ষমা করবেন, আমার দলকে ক্ষমা করবেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। শোধরানোর সুযোগ দিন। কথা দিচ্ছি মানুষ যেমন চায় তৃণমূল কংগ্রেসকে তেমনই দেখবেন। মানুষ যা চায় তেমনই পঞ্চায়েত-পঞ্চায়েত সমিতি-জেলাপরিষদ দেখবেন।
আরও পড়ুন-তাঁতশিল্পীদের নিয়ে অভিষেকের ভাবনা
শনিবার সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আচমকাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি এখানকার পঞ্চায়েত-পঞ্চায়েত সমিতি ও তাদের প্রধানদের কাজে খুশি? মঞ্চে-বসা নেতাদের চোখের দিকে তাকাতে হবে না, আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন। আপনাদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমার। জনতা উত্তর দেয়— না। এরপরেই মঞ্চে উপস্থিত দলীয় নেতৃত্বের দিকে ফিরে অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পঞ্চায়েতের প্রধান হব কিন্তু মানুষের কাজ করব না সেটা আর তৃণমূল কংগ্রেসে হবে না। আমি হতে দেব না। তাঁর আরও সংযোজন, কলকাতায় থেকে ৬ মাস অন্তর জেলায় এসে ছড়ি ঘোরাব। নিজের তল্পিবাহকদের সংগঠনের পদে বসাব— এসব আর হবে না৷ আমি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আমি এসব হতে দেব না। আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি, অন্য তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করব, মানুষ যেমনটা চায়।
আরও পড়ুন-তারকেশ্বরে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মিসম্মেলনে ঘোষণা, প্রতি বুথের কর্মিদল ঘুরবে বাড়ি বাড়ি
শনিবারের সভা থেকে আবারও কেন্দ্রের এজেন্সি-রাজনীতির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, মোদি-শাহ ইডি-সিবিআই দিয়ে বারবার ডেকে পাঠিয়েছে। মাথা উঁচু করে গিয়েছি। বিজেপি আমার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। আবার ডাকলে মাথা উঁচু করেই যাব। এভাবে যত তৃণমূল কংগ্রেসকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে তৃণমূল কংগ্রেস তত বাড়বে। এদিন সভার জমায়েত নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত ছিলেন অভিষেক। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়-সহ জেলা সাংগঠনিক পদাধিকারীদের ভূয়সী প্রশংসা করে অভিষেক বলেন, এই মাঠে যত মানুষ এসেছেন এর তিনগুণ মানুষ বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। এই সভার প্রস্তুতি পর্বে শুধু ব্যানার-হোর্ডিং-পোস্টার নয় যেভাবে দেওয়াল লিখন হয়েছে— যা আগে ৮০-৯০-এর দশকে হত— তাতে আমি অভিভূত। এরপরই তাঁর সংযোজন, যত মানুষ আজ এসেছেন এঁরাই ভোট দিলে বিজেপি ভেসে যাবে।
আরও পড়ুন-শুধু এমবাপে নয়, ফ্রান্স ভয়ঙ্কর: স্কালোনি
এদিনের সভায় জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিধায়ক কল্লোল খাঁ, মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, শংকর সিং, রুকবানুর রহমান,তাপস মন্ডল, নন্দ সাহা, ব্রজকিশোর গোস্বামী, সমীর পোদ্দার, রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শুভঙ্কর সিংহ ( যীশু), আবির নিয়োগী, জয়া দত্ত, নিলীমেষ চৌধুরী, বর্ণালি দে, কৌশিক ঘোষ, সুরজিৎ মন্ডল, দুলাল মন্ডল সহ অন্যান্য নেতৃত্ব