খরদহ থেকে গোসাবা, অপচেষ্টা রুখে শান্তিতে সমস্ত কেন্দ্রের ভোট

Must read

প্রতিবেদন : জয় হবে না। আগেই জানত বিজেপি। তাই ভোটের শেষ লগ্নে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। প্রয়াত কাজল সিনহার পুত্রকে মাথায় লাঠির বাড়ি মারে বিজেপি প্রার্থীর নিরাপত্তারক্ষী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জখম আর্যদীপ সিনহাকে রহড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা গিয়েছে, বিজেপি প্রার্থীর ওই নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন জেলাশাসকের কাছ থেকে এই ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘বিজেপিকে মানুষের কাছে উত্তর দিতে হবে।’’ এই ঘটনার প্রতিবাদে কিছু সময়ের জন্য বিটি রোড অবরোধ করেন তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকরা। এছাড়াও বিজেপি চেষ্টা করেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে অস্থিরতা তৈরি করার। কিন্তু ভোটাররা সেই প্ররোচনায় পা দেননি। কমিশনের সেক্টর অফিসার বিজেপির অভিযোগকে নস্যাৎ করে জানিয়ে দেন, ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নে। তিনি এই বিষয়ে রিপোর্টও পাঠান। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও ভোটারদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ ওঠে। তা সত্ত্বেও সকাল থেকেই বুথে বুথে ভোট দেওয়ার জন্য দেখা গেল লম্বা লাইন। সারাদিন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখলেন তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী নানাভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্টদের বাধা দিয়েছে। ভোটারদের দুটি টিকার কাগজ আনার কথা বলে বিভ্রান্ত করেছে। আমাকেও ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।’’ বহিরাগত এনে বিজেপি ভুয়ো ভোট দিতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। ব্লক সভাপতি সুকুর আলি পুরকায়েত জানান, ‘‘ধৃতদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই।’’

দিনহাটায় বিজেপির প্ররোচনা ব্যর্থ হয়। ভোটের দিন মানুষের সাড়া বুঝিয়ে দিল দিনহাটায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা। সকাল থেকেই নানান অস্থিরতা তৈরি করলেও বিজেপির দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন মানুষ। বিধায়ক পদ ছেড়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেন নিশীথ প্রামাণিক। ভোটের দিন তাঁকে দিনহাটার মানুষ দেখলেন নির্বাচনবিধি লঙ্ঘন করতে। ভেটাগুড়ি বুথে সশস্ত্র দেহরক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে বুথে হাজির হন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী উদয়ন গুহ নিশীথের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের আইন ভাঙার অভিযোগ করেন। বুথে ভোট দেন দিনহাটার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী উদয়ন গুহ।

আরও পড়ুন : ফের ছুটবে লোকাল ট্রেন, ভিড় নিয়ন্ত্রণে ভরসা যাত্রীদের সহযোগিতা

এদিন নাতি সায়নজিৎ গুহকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে আসেন উদয়ন। ভোটদানের পর তিনি বলেন, ‘‘দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। কোভিড বিধি মেনে  উৎসবের মেজাজে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। বিজেপি নানাভাবে প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে তা প্রতিহত করেছেন।’’ উদয়ন গুহ আরও বলেন, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে জিতে নিশীথ প্রামাণিক দিনহাটা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিজেপি মানুষকে ভুল বুঝিয়ে দলে টেনেছিল। মানুষ যে ভুল বুঝতে পেরেছেন তা ভোটের দিনই প্রমাণ মিলল তাই এবার বিজেপির  নির্বাচনী এজেন্ট হওয়ার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’’

শান্তিপুরে বিজেপির শিবির জনশূন্য। এমনকী তাঁরা কোনও পোলিং এজেন্টও দিতে পারেনি। উন্নয়নের পক্ষে আওয়াজ তুলে শান্তিপুরবাসীরা বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করেছিলেন। বিধায়কপদ ছেড়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’’ ভোটাররা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, এবার আর এই ভুল নয়। ফলে শান্তিপুরের ভূমিপুত্র ব্রজকিশোর গোস্বামীই যে বিজয়ী হতে চলেছেন একথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভোটের দিন সকাল থেকেই গোটা শান্তিপুর বিধানসভা এলাকায় নির্বিঘ্নে ভোট হচ্ছে, ভোট দিতে এসে এ কথা বললেন শান্তিপুর বিধানসভার উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী। বাবা ও মাকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেন ব্রজকিশোর। ভোটদানের শেষে তিনি বলেন সকাল থেকেই গোটা শান্তিপুর বিধানসভা এলাকায় সুষ্ঠুভাবে ভোট হচ্ছে। নদিয়া জেলার রানাঘাট দক্ষিণ সভানেত্রী রত্না ঘোষ কর জানিয়েছেন, ভোটের প্রথম থেকেই আমরা বুঝেছিলাম যে এখানে বিজেপি-সহ বিরোধী কোনও প্রার্থীর পক্ষে মানুষ ভোট দিতে ইচ্ছুক নয়। ভোটাররা মা মাটি মানুষের সরকারের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন তাই এদিনকার ভোটদানে সেরকমই দৃশ্য চোখে পড়ল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘নতুন করে গড়ে তোলা হবে শান্তিপুর।’’ ইতিমধ্যেই শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, কালনা ব্রিজের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। গোসাবায় ভোট প্রচারেও সেভাবে দেখা যায়নি বিরোধী বিজেপি বা বাম প্রার্থীকে। নির্বাচনের দিনেও বিরোধীদের চোখে পড়ল না। গোসাবার ন’টি দ্বীপের ১৪টি ও বাসন্তীর ২টি পঞ্চায়েত মিলিয়ে গোসাবা বিধানসভা। ৩৩০টি বুথের অধিকাংশতেই বিরোধীদের এজেন্ট ছিল না। কার্যত নির্বাচনের খেলা শুরুর আগে মাঠ ছেড়ে দেন বিরোধীরা। এদিন সকালে বালি-২ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত মণ্ডল নিজের ভোট দেন। নিজের ভোট শেষে বেশ কিছু দ্বীপে গিয়ে বুথ ঘুরে দেখেন। সর্বত্র কর্মী-সমর্থকরা প্রার্থীকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বাস দেখান। অন্যদিকে, বিরোধী বিজেপি শুক্রবার রাতে রাঙাবেলিয়াতে রাতের অন্ধকারে লিফলেট বিলি করার সময় গ্রামবাসীরা ধরে ফেলেন। চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিজেপি প্রার্থী বহিরাগত। এখানকার ভোটার নন। কিন্তু বুথে বুথে ঘোরার নামে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। প্রয়াত বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের স্ত্রী অনিতা নস্কর ও ছেলে বাপ্পাদিত্য নস্কর চুনাখালি পঞ্চায়েতের হরিণখালি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২ নং বুথে ভোট দেন। সুন্দরবনের মানুষ বরাবর ভোটকে উৎসবের চোখে দেখেন। এদিনও সেই ছবি বারে বারে ধরা পড়েছে। আধা সামরিক বাহিনীর ব্যবহারে মোটের ওপর খুশি সবাই। নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সুব্রত মণ্ডল বলেন, দিনভর বিরোধীদের দেখা গেল না। বিজেপি প্রার্থী অশান্তি করার নানান চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মানুষ রুখে দিয়েছে। জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

Latest article