মণীশ কীর্তনিয়া: ওরা ষড়যন্ত্র করে আমাদের চারজনকে জেলে ঢুকিয়েছে। আমি ওদের আটজনকে জেলে ভরব। আমি বিশ্বাস করি না এরা সব চোর। ওদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এমনকী খুনের অভিযোগ রয়েছে। ওদের নামে যা মামলা রয়েছে সব খুলব। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোরে দলের বিশেষ অধিবেশনের মঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। দলনেত্রীর কথায়, মনে রাখবেন বিজেপির আয়ু আর তিন মাস। তারপর? তারপর কী হবে, সেটাও ভাবুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সিপিএম ও বিজেপি কোলবালিশ হয়ে ঘুরছে। সব হিসেব হবে। ওরা সব শূন্যই থাকবে। আমাদের বিধায়ক-নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে খুব হাসছ না? ভাবছ এটাই চলবে? মনে রেখো তোমরা যখন ক্ষমতায় থাকবে না, তখন তোমরা কোথায় থাকবে? তোমরা সব সেলে থাকবে। এরপর তিনি বলেন, বাইরে সব গদ্দাররা ঘুরছে, বলছে ওই দিন ইডি-সিবিআই যাবে। আর অমনি ইডি-সিবিআই চলে যাচ্ছে! সব সিজ করে নিচ্ছে। কিন্তু কোনও সিজার লিস্ট দিচ্ছে না।
এদিন দিল্লির ধরনা প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল সুপ্রিমো (Mamata Banerjee) বলেন, ববি (ফিরহাদ হাকিম) সেদিন বলছিল, দিদি কোমরটায় খুব ব্যথা হচ্ছে। আমি বললাম, কেন? তখন বলল, দিল্লিতে ধরনা দিতে গিয়ে ডান্ডার পর ডান্ডা খেয়েছি। বক্সিদাও ডান্ডা খেয়েছে। এরা অনেক লড়াই করেছে। এরা আমার অনেক লড়াইয়ের সাথী। আমাদের লড়াই এখনও চলছে। আমরা আর চুপ করে থাকব না, সাফ কথা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আগুনে মেজাজে। একটার পর একটা ইস্যু তুলে ধরে বিজেপি-সিপিএমের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঢেউ তুলেছেন।
বাংলার বকেয়া আদায়ে এদিন ফের ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর কথায়, আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে দিল্লি যাব। সেইসময় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলবে৷ দলীয় সাংসদদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাইব দেখা করার৷ বাংলার বকেয়া দিতেই হবে৷ ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা দিতেই হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সময় চাইব। তিনি সময় দিলে বাংলার বকেয়া নিয়ে আবারও তাঁকে জানাব। কিন্তু সময় না দিলে রাস্তায় থাকব। রাস্তাই রাস্তা দেখাবে। সাফ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এরপরই নেত্রী বলেন, সিপিএমের হাতে প্রচুর মার খেয়েছি। না-হয় ওদের মারও খাব। বাংলার গরিব মানুষের জন্য আজীবন লড়াই করেছি। সেই লড়াই করে যাব। সাফ কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
আরও পড়ুন- লগ্নি মসৃণ করতে বেশ কয়েকটি দফতরকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিন দলের সর্বস্তরের সাংগঠনিক নেতৃত্ব, সাংসদ-বিধায়ক, পুরসভার পুরপ্রধান, জেলা সভাপতি, পঞ্চায়েত-পঞ্চায়েত সভাধিপতি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি-সহ দলের সর্বস্তরের সকলকে ডাকা হয়েছিল। ইনডোরের উপচে-পড়া সভায় দলনেত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন আগামী দিনে লড়াই আরও জোরদার হবে। তাঁর কথায়, বিজেপির পতন শুরু হয়ে গিয়েছে। আর তো মাত্র তিনটে মাস। বিজেপি করাপশানে ভরে গেছে। এরপরই হুঙ্কার দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের লোকেরা চোর? যখন গরু-কয়লা পাচার হয়, যাদের দেখার কথা তারা কী লেমনচুস খায়? এদিন সিপিএমকেও তুলোধোনা করেছেন নেত্রী। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ৩৪ বছরে সিপিএম যা করে গেছে তা সীমাহীন। সিপিএমের সব দুর্নীতিবাজ। ওরাই টাকা খায়, আর দুর্নীতি বলে চিৎকার করে। ওরা হল বড় পকেটমার।
বিজেপির গেরুয়াকরণের বিরুদ্ধে এদিন আবার গর্জে ওঠেন নেত্রী। তিনি বলেন, যেটা যা পারছে, সব গেরুয়া করে দিচ্ছে। এমনকী ভারতীয় দলের জার্সিটাও গেরুয়া করে দিতে চেয়েছিল। প্লেয়াররা প্রতিবাদ করায় তা পারেনি। আমার মতে, ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিম দুরন্ত খেলছিল, কোনও ম্যাচ হারেনি। অথচ পাপিষ্ঠরা যখন মাঠে গেল, তখনই হেরে গেল। আমি বলব, বিশ্বকাপ ফাইনাল যদি কলকাতা কিংবা মুম্বইয়ে হত তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হত।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিস্ফোরক মুডে। তিনি বলেন, আরএসএসকে অনুরোধ করব আপনারা অনেক কাজ করেন, পার্টিটা দেখেন, আপনাদের বলব, এই দুটো ক্ষতিকারক লোককে প্রশ্রয় দেবেন না। নাম না করে এদিন অযোধ্যার রামমন্দির নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপিকে তীব্রভাবে বিঁধেছেন নেত্রী। তাঁর কথায়, জনগণের টাকায় একটা মন্দির করে ভাবছে, অনেক কিছু করছে। জনগণের টাকা নষ্ট করছ।
নির্বাচনের আগে ভারতীয় জুমলা পার্টি (বিজেপি) অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু কিছুই রাখে না। সদ্য শেষ হওয়া শিল্প সম্মেলনের সাফল্যকেও তুলে ধরেন নেত্রী। মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন শিল্প সম্মেলন নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে।
সিপিএমকে তীব্র আক্রমণ করে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওরা বিভিন্ন জায়গায় সরকারি পদে বসে আছে, টাকা খাচ্ছে। ওরাই বদনাম করছে। এবার বদলা হবে। বদলা মানে রাজনৈতিকভাবে বদলা। রাজনৈতিকভাবে গেঁথে দিন। বুথে বুথে হারিয়ে ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিন। বাংলায় এত কাজ হয়েছে তারপরও বিরোধী ও সিপিএমের জ্ঞান শুনতে হবে আমাকে! ক্ষোভের সঙ্গে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দলকে যে কর্মসূচি দিয়েছেন তার বাইরেও আরও নির্দেশের জন্য সজাগ থাকতে হবে, মানুষের পাশে থাকতে হবে।