প্রতিবেদন : বিজেপি জেনে রেখো, তোমরা আর কোনও দিনও ক্ষমতায় আসবে না। মানুষ তোমাদের চিনে নিয়েছে। এবারই তোমাদের শেষবার। সোমবার মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম ও ভগবানগোলার জোড়া সভা থেকে স্পষ্ট বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী বলেন, যে দুটো ফেজ হয়ে গিয়েছে, তাতে তোমরা এপাশ-ওপাশ-ধপাস হয়ে গিয়েছ। বাকি যে পাঁচটা ফেজ হবে, তার জন্য বুক দুরু দুরু করছে এখন থেকেই।
ইসবার পগার পার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এবারের লড়াইটা দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার। এই লড়াইটা আমাদের জিততে হবে। ইসবার ৪০০ পার, বলেছিলেন প্রচারবাবু। আমি বলেছিলাম, ইসবার পগার পার। ইসবার ২০০ ভি নেহি হোগা পার। আর যদি আমার এই কথাগুলো সত্যি হয়, খাওয়াবেন তো মুর্শিদাবাদ-মালদহের মানুষ?
এক মাস বাকি : তৃণমূলনেত্রী (Mamata Banerjee) বলেন, মনে রাখবেন, আদৌ স্বস্তিতে নেই বিজেপি। আর এক মাস বাকি। তারপর ঢাক বাজাবে ঢাকি। বিজেপির বিসর্জন চলবে সারা দেশ জুড়ে। কারণ ‘বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও’ আওয়াজ উঠেছে এবার। হাওয়া কিন্তু রটে গিয়েছে। দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মুম্বই, বিহার, রাজস্থান, চেন্নাই, কেরালা, বাংলা বলছে বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও। বলছে, বিজেপি হটাও ধর্ম বাঁচাও, জাত বাঁচাও। বলছে, বিজেপি হটাও একসাথ মে রহো।
জবাব দিতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিজেপির জন্য দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। জাতি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, ধর্ম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এনআরসি-সিএএ করে ওরা সবাইকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে। এই যে জিনিসপত্রের দাম কত বেড়েছে, প্রচারবাবুর মুখে তো কোনও কথা নেই! মোদিবাবু আমাকে যত ইচ্ছা গালাগালি দেন, আমার গায়ে ফোসকা পড়বে না। কিন্তু আপনাকে জবাব দিতে হবে, ১৫ লাখ দেবেন বলেছিলেন, কেন দেননি। বেকারদের ২ কোটি চাকরি দেবেন বলেছিলেন, কেন দেননি। কেন কৃষকরা ন্যূনতম সাপোর্ট পাচ্ছেন না, আপনাকে জবাব দিতে হবে, কেন অত্যাবশ্যক ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তা বলতে হবে। আমরা বিনা পয়সায় রেশন দেব, আর তুমি শুধু ভাষণ দেবে, তা আর হবে না।
ট্যাঁ-ফোঁ করতে দেব না : তিনি বলেন, আমরা আরও একটা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিচ্ছি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য। তাঁদের কাছে আবেদন, ওঁরা যেন ভোটটা দিয়ে যান। আমরা বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। সিএএ-ইউসিসি করতে দেব না, বিজেপিকে ট্যাঁ-ফোঁ করতে দেব না। আমরা একসঙ্গে থাকব। আমরা চার কোটি ছেলেমেয়েকে স্কলারশিপ দিয়েছি। সংখ্যালঘু স্কলারশিপে নাম্বার ওয়ান বাংলা। ওবিসিদের সংরক্ষণের আওতায় এনেছি। বাংলায় কন্যাশ্রী পান ১ কোটি, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ১ কোটি ১২ লক্ষ, স্বাস্থ্যসাথীতে ৯ কোটি পরিবার চিকিৎসা পান।
নিজের মুখটা দেখুন : এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মোদিবাবুকে চ্যালেঞ্জ করছি— বাংলায় এসে ভোট চাওয়ার আগে, তৃণমূলকে চোর বলার আগে আপনি নিজের আয়নায় নিজের মুখটা দেখুন। আর শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বলুন বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে কী অবস্থা আর বাংলায় কী অবস্থা। ৩৫০টা টিম পাঠিয়েছিলেন বাংলায়, কী পেয়েছেন?
আরও পড়ুন-বিদ্যুৎ বিভ্রাট: CESC-কে তিরস্কার বিদ্যুৎমন্ত্রীর
মগের মুলুক নাকি : এদিকে একজন বলছে, বোমা ফাটাব। কত বড় গদ্দার নেতা। তোমার বাড়ির ভাইবোনের যদি চাকরি চলে যেত, তাহলে কী করতে? নিজে তো টাকা বাঁচাতে ভাজপা ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে গেছো। যোগ্য গরিব ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছিল, কোথাও ভুল থাকলে আমরা শুধরে নেব, তা বলে সরাসরি চাকরি খেয়ে নেবে! যেন মগের মুলুক পেয়ে গিয়েছে।
ব্যাপম দুর্নীতি তোপ : এরপর তিনি মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম দুর্নীতি ইস্যুতে তোপ দাগেন বিজেপিকে। বলেন, মধ্যপ্রদেশে শিক্ষা নি য়ে দুর্নীতি হয়েছিল। ব্যাপম কেলেঙ্কারিতে যারা ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়েছিলেন, তাঁরাই খুন হয়ে গিয়েছিলেন। জানতে চাই, ব্যাপমের রেজাল্ট কী হল। বাংলাকে চোর বলার আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন। দেশ জুড়ে আওয়াজ উঠেছে, গলি গলি মে শোর হ্যায়, বিজেপি চোর হ্যায়। বেকারের চাকরি নেই বিজেপির ভোট নেই। সকাল থেকেই প্রচারমন্ত্রীর ছবি দেখে ঘুমের মধ্যে তাঁর চোখগুলো দেখে ভয় হচ্ছে— কখন না বোমা ফাটায়, কখন না চাকরি খেয়ে নেয়।
গঙ্গাভাঙন রোধে : মালদহ ও মুর্শিদাবাদে গঙ্গাভাঙন বড় আকার নিয়েছে। কেন্দ্রের করার কথা, কিছু করেনি। মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ানে গঙ্গা ভাঙনের কাজ আমরাই করেছি। দিল্লির সরকার কিছু করেনি, উল্টে দিল্লি সব টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দে গঙ্গার ভাঙন রোধ ও বন্যা মোকাবিলার কাজ করছি। এতেই প্রমাণিত, বিজেপি মানুষের কথা ভাবে না।
সিবিআই-এনআইএ কোথায় : সোমবার মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগুইআটি ও পুরুলিয়ায় দুই তৃণমূল সদস্যের খুন নিয়ে মুখ খোলেন। তাঁর প্রশ্ন, কেন এবার সিবিআই বা এনআইএ এল না? বিজেপি সিবিআই-ইডি-এনআইকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই এক্ষেত্রে এল না কোনও সিবিআই বা এনআইএ।