প্রতিবেদন : বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, তারপর ২০২৪-এ হাইভোল্টেজ লোকসভা নির্বাচন। এই দুই মেগা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে একগুচ্ছ বার্তা দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দলের অন্দরের ঐক্যকে মজবুত রেখে আগামী দিনে বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিক লড়াইয়ের মোকাবিলা করার জন্য দলকে এখন থেকেই প্রস্তুত থাকার বার্তা দিলেন দলনেত্রী। সিনিয়র-জুনিয়রদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি। এদিন নেত্রীর প্রায় ৫০ মিনিটের ভাষণের শুরু থেকেই গোটা স্টেডিয়াম ছিল চাঙ্গা। তিনি এক-একটা লাইন বলেছেন, আর হাততালিতে ফেটে পড়েছে কানায়-কানায় পূর্ণ স্টেডিয়াম। দলের নতুন স্লোগানও ঠিক করে দেন, ‘এজেন্সি চাই না, চাকরি চাই’। নেত্রীর (Mamata Banerjee) বার্তায় চাঙ্গা দল।
২০২৪-এ খেলা হবে : এদিন নেত্রী বলেন, ২০২৪-এ এমন খেলা খেলব বিজেপি বুঝতে পারবে। খেলাটা বাংলা থেকেই তৈরি হবে। আমরা তো সকলেই একসঙ্গে। নীতীশ কুমার, হেমন্ত সোরেন, অখিলেশ যাদব, আমি— বিজেপির ১০০টা আসন বেরিয়ে যাবে।
পাল্টা লড়াই হবে : রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। ইডি-সিবিআইকে দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের যে ঘৃণ্য চক্রান্ত বিজেপি করেছে তার বিরুদ্ধে বৃহত্তম লড়াইয়ে শামিল হবে দলের নেতা-কর্মীরা। বুধবার মলয় ঘটক তো ভাল লড়াই করেছে। বক্তব্য নেত্রীর।
নতুন চাকরি : পুজোর মরশুমে রাজ্য সরকার ৩০ হাজার যুবক-যুবতীকে চাকরি দেবে। চলতি মাসের ১২ তারিখে ১০ হাজার জনের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে। নেত্রী বলেন, আমরা কর্মসংস্থান চাই বিজেপি-সিপিএম সংকোচন চায়।
শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন : নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের জন্য নেত্রীর বার্তা : আগামী ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ।
আরও পড়ুন: গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাকে বিরোধীশূন্য করার চ্যালেঞ্জ
ডেয়ারডেভিল অভিষেক : দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে নেত্রী বলেন, ও একটু ডেয়ারডেভিল আছে। চনমনে কথা বলে। ও খুব ভাল বক্তা। অনেকে বিশেষ করে মিডিয়া কখনও কেষ্টর সঙ্গে শতাব্দীর, কখনও অভিষেকের সঙ্গে আমার লড়াই লাগিয়ে দেবে ভেবেছে। ওসব করে কোনও লাভ হবে না। আমাদের দল যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধ।
বীরভূম ও কেষ্ট : বিজেপি ভেবেছে কেষ্টকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়ে দুটো লোকসভা দখল করে নেবে। অত সোজা নয়। নেত্রীর কথায়, কেষ্টকে বীরের সম্মান দিয়ে জেল থেকে বের করে আনবেন।
ভোটার তালিকা সংশোধন : আগামী ১১ নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলবে। জেলা থেকে ব্লকস্তর পর্যন্ত এই তালিকা সংশোধনের কাজ মন দিয়ে করতে হবে দলের নেতৃত্বকে।
নেতাজি ও বাংলার অপমান : দিল্লিতে নেতাজির মূর্তি বসানোকে কেন্দ্র করে নেতাজি ও বাংলাকে অপমান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। চিঠি পাঠিয়েছে বৃহস্পতিবার ছটায় উপস্থিত থাকতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে চিঠি লিখতে পারেন না, সেটাও জানে না ওরা। আমি তাই আজ দুপুরেই রেড রোডে নেতাজির মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে এলাম।
হাসিনা সফরে বাংলা নেই : শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন, এই সফরে আমার সঙ্গে তাঁর দেখা হোক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হল না। এই প্রথম দেখলাম দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর অথচ বাংলাই বাদ! ক্ষোভ নেত্রীর।
নতুন পুরনো মিশেল : দলের নতুনরা দলের ইতিহাস জানবে। আমার লেখা বইতে সবই আছে। ছোটরা বড়দের সম্মান দেবে বড়রাও ছোটদের আগলে রাখবে।
সাংগঠনিক রদবদল : দলের ব্লকস্তর পর্যন্ত অনেক সাংগঠনিক রদবদল করা হয়েছে। কয়েকটি বিষয় নিয়ে দলের কয়েকজন বিধায়ক ও সাংসদ নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তা খতিয়ে দেখতে তিনি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে বৈঠক করবেন, জানান নেত্রী।
কয়েকদিনের মধ্যেই আবার জেলা সফরে দুই মেদিনীপুর-সহ আরও দু-একটি জেলায় যাবেন। তমলুকে করবেন প্রশাসনিক বৈঠক। তাঁর কথায়, রাজ্য সরকারের কাজের বই বের করা হবে। তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এদিন কাজ নিয়ে দলের কাউন্সিলরদের সতর্ক করেন নেত্রী।