প্রতিবেদন : মিনি টর্নেডোর ভয়াল হানার পর উত্তরের জেলায় ঝড়-বিধ্বস্ত মানুষের সঙ্গে দিন-রাত এক করে কাটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর মঙ্গলবার চালসায় মার্সি ফেলোশিপ চার্চের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন তিনি। জনসংযোগ করলেন। এই পর্বেই তিনি একের পর এক নিশানায় বিঁধলেন কেন্দ্রকেও। কেন্দ্রের বঞ্চনা ও প্রতিহিংসা নিয়ে সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কেন্দ্রকে একহাত নিয়ে তিনি বললেন, সব বঞ্চনার জবাব দেবে বাংলা।
মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) কথায়, কেন্দ্র বঞ্চনা করে যাচ্ছে, কিন্তু রাজ্য সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে, পাশে থাকবে। একশো দিনের কর্মীদের বকেয়া মিটিয়েছি, আমরা পাহাড়বাসীর সমস্যার সমাধানও করব। কেন্দ্রের বঞ্চনায় তাঁরা কাজ হারালেও তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব আমরা। কিন্তু এখন আদর্শ আচরণবিধি চলছে, তা মিটে গেলে পুরো বিষয়টি দেখে নেব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রকে বলতে বলতে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, কোনও কথা কানেই তুলছে না। এখন আবার অফিসার বদলির নামে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। আবাস যোজনা থেকে একশো দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একচোখামিকে তুলোধোনা করে নেত্রী বলেন, জলপাইগুড়িতে ঝড়ে অনেকের বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়েছে। এঁদের নাম ছিল কেন্দ্রের কাছে পাঠানো আবাস যোজনার তালিকায়। কিন্তু বলতে বলতে আমার গলা শুকিয়ে গেল। কিছুই করল না কেন্দ্র। এমন নয় যে, আবাসের টাকা পুরোটাই কেন্দ্র দেয়। আমরা জমিও দিই, ৪০ শতাংশ টাকাও দিতে হয় রাজ্য সরকারকে। তাও বাকি টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। দিলে হয়তো ঝড়ে ঘরবাড়ি এত ক্ষতিগ্রস্ত হত না।
আরও পড়ুন- গোত্র ‘মা-মাটি-মানুষ’: মদনমোহন মন্দিরে পুজো অভিষেকের, শুরু রাজনৈতিক কর্মসূচি
মঙ্গলবার তিনি চালসার চার্চের অনুষ্ঠানে গিয়ে জনসংযোগও করেন। আদিবাসীদের সঙ্গে পা মেলান ধামসা-মাদলের তালে। বার্তা দেন শান্তির। নেত্রী বলেন, আমি হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, আদিবাসী, রাজবংশী সবার অনুষ্ঠানে যোগ দিই। আমি চাই, রাজ্যে সবাই যেন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেন। মনে রাখবেন শান্তির থেকে বড় আর কিছু হয় না। পাশাপাশি, মণিপুরে ২০০টি চার্চ জ্বালিয়ে দেওয়া নিয়েও দুঃখপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
নেত্রী আরও জানান, আমার কাছে অনিত থাপা দেখা করতে এসেছিল। সে জানাল, চা-বাগানে যে ইন্ডিভিজুয়াল ফান্ডিং করা হয়, সেটা ব্যান করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ১০ লক্ষেরও বেশি গরিব লোক বেকার হয়ে গিয়েছে। বলছে নাকি পেস্টিসাইড ছিল। থাকলে সেটা আগে দেখনি কেন? কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না করে কীভাবে ফান্ডিং বন্ধ করতে পারে কেন্দ্র? আমার কাছে চাল না থাকলে রুটি খাই, রুটি না থাকলে মুড়ি খাই, মুড়ি না থাকলে কেক খাই। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিকল্প ব্যবস্থা তো নিতে হয়। এখন আবার আদর্শ আচরণবিধি লাগু আছে, তাই মন চাইলেও আমি কিছু করতে পারছি না। আমি শুনে রাখলাম, ভোটের পরে আমি চা-শ্রমিকদের জন্য ব্যবস্থা করব।
চালসায় চার্চের অনুষ্ঠানের পর তিনি একটি আশ্রমে যান। সেই আশ্রমের আবাসিক বেশ কিছু শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় একঘণ্টা পনেরো মিনিট সেখানে তাদের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। আবাসিকদের অধিকাংশই বিশেষভাবে সক্ষম। ভোটের পর এই চার্চে স্পেশাল ক্যাম্প করে তাঁদের প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। চালসা রেললাইনের পাশ দিয়ে যেই রাস্তা ধরে চার্চে যেতে হয়, সেই রাস্তাটি অত্যন্ত বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ভোটের পরে সেই দেড় কিমি রাস্তাটি পাকা করে দেবেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান।