আস্ত একটা বছর সবে খাতা খুলে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার সাদা পাতায় নতুন নতুন খবর দিয়ে কলমের আঁচড় কাটার আগে মনে হল একবার পিছন ফিরে তাকাই।
মধ্যবিত্ত পরিবার। আমাদের ছোটবেলায় এখনকার মতন এমন হরঘড়ি দোকানে গিয়ে জামাকাপড় কেনার মোটেই চল ছিল না। বছরে দুবার নতুন জামা হত, পুজোয় আর পয়লা বৈশাখে। বছরের প্রথমদিনে নাকি নতুন কাপড় গায়ে দিতে হয়। মা-ঠাকুমার এইসব কথার জল গড়িয়ে মনের এত ভিতর পর্যন্ত ঢুকে গেছে যে এখনও, সারাবছর যা খুশি কেনাকাটা করার পরেও পয়লা বৈশাখে বাড়ির সকলের নতুন পোশাক না কিনলে মনটা বড় খুঁতখুঁত করে। শুধু অবশ্য নতুন জামা নয়। তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু তখন ছিল।
আরও পড়ুন-জন এলিয়ট ড্রিংকওয়াটার বেথুন এক মানবদরদি রাজপুরুষ
সকালে লুচি আলুরদমের সঙ্গে দরবেশ, ভাতের শেষপাতে পায়েস আর বিকেলে বাবার হাত ধরে গুটিগুটি দোকানে গিয়ে মিষ্টির বাক্স আর সরু করে পাকানো ক্যালেন্ডার নিয়ে আসা। মাসকাবারি যেখান থেকে কেনা হত সেই মুদি জেঠু সারা বছর খালি গায়ে ভুঁড়ির নিচে তেলচিট ধুতিতে গিঁট দিয়ে দোকান সামলাতেন। শুধু এই দিনটিতে তাঁর গায়ে একখানা ফর্সা পাঞ্জাবি উঠত। খদ্দের লক্ষ্মী। তাই অতিথি আপ্যায়নের জন্য সেদিন নিজেই সামনের কাঠের বেঞ্চিতে বসে থাকতেন। সব মিলে-মিশে আমাদের কিশোরীবেলা এমনকী মেয়েবেলাতেও পয়লা বৈশাখ বলতে ঘরের মধ্যে একটু ভাল খাওয়াদাওয়ার আমোদ-আহ্লাদ আর হালখাতাই বোঝাত। সেটাই হয়তো স্বাভাবিক। কারণ বছরের প্রথম দিনটির সঙ্গে হালখাতার এই যোগ বহুদিনের।
আরও পড়ুন-বনলতাকে ছুঁয়ে সটান চেরাপুঞ্জি
ইতিহাসের পাতা একটু ওল্টালে জানা যায় এই বাংলা নতুন বছরে হালখাতার সূচনা কিন্তু হয়েছিল মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে। সৌরপঞ্জি অনুসারে বাংলা মাস গণনা করা হত অনেক প্রাচীন কাল থেকে। বাংলা পঞ্জির উদ্ভাবক ধরে নেওয়া হয় সপ্তম শতকের বাংলার রাজা শশাঙ্ককে। পরে মধ্যযুগে গৌড়ের রাজা হুসেন শাহ শশাঙ্কের চালু করা বাংলা পঞ্জিকে মান্যতা দেন। তুর্কি সাম্রাজ্য তখন পরিচালিত হত হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে। কিন্তু হিজরি পঞ্জিকা চাঁদের ওপর নির্ভরশীল। বাংলার চাষীদের ফসল বোনা কিংবা তোলার সঙ্গে চাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই হিজরি পঞ্জিকা মেনে কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন হুসেন শাহ। তখন তাঁরই নির্দেশে সৌর আর হিজরি পঞ্জি মিলিয়ে তৈরি হল বাংলা সনের নিয়ম। এই নিয়ম মেনেই চৈত্র মাসে বছর শেষ হয় এবং পয়লা বৈশাখ নতুন বছরের সূচনা।
আরও পড়ুন-এই আমাদের নববর্ষ বিভেদ মোছা হর্ষ সুখে
একই সমস্যা থেকে বাংলা সন গণনাকে মান্যতা দিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরও। সম্ভবত তোডরমলের পরামর্শ মেনেই সম্রাট নির্দেশ দেন সেই সময়ের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ফতেউল্লাহ সিরাজিকে। তিনি এই পঞ্জিকার নিয়ম-কানুন সংস্কার করে আরও নির্দিষ্ট করেন। সম্রাটের চালু করা নিয়মে এই বাংলা পঞ্জি অনুসারে বছরের শেষ দিন মানে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে কৃষকদের সব খাজনা দিয়ে দিতে হত। তারপরের দিন সম্রাট আকবর চাষীদের মিষ্টি খাওয়াতেন। তাঁদের জন্য গান-বাজনারও আয়োজন করা হত। এইসময় গম, যব, ছোলা, অড়হর— এইসব রবিশস্য উঠত বলে খাজনা দিয়েও কৃষকের হাতে কিছু পয়সা থাকত। তাই ব্যবসায়ীরাও বছরের এই শুরুর দিনটিকেই বেছে নিয়ে হালখাতার সূচনা করেন। তার মানে বাংলা নববর্ষ আর তার যে মূল উত্সব, তার প্রচলন হল মুঘল সম্রাট আকবরের হাত ধরে। হিন্দু রাজা শশাঙ্ক আর তুর্কি রাজা হুসেন শাহের চিন্তা-ভাবনাকে স্বীকৃতি দিলেন ভারত সম্রাট।
আরও পড়ুন-রাজনারায়ণ বসু স্মৃতি পাঠাগার বাংলার নবজাগরণের অন্যতম কেন্দ্র
বাংলায় চিরকালই বছর শেষের উত্সবের নানা ধুম। চৈত্রাবসানে গাজন আর চড়ক তো আছেই। গ্রামবাংলার মানুষের কাছে চিরকালই এই দুটি খুব প্রিয় উত্সব। শহর কলকাতাতেও যে একসময় খুব ধুমধাম করে চড়কপার্বণ হত তার প্রমাণ আমরা পাই হুতোমের লেখায়। হুতোম প্যাঁচার নকশা শুরুই হচ্ছে চড়কের উত্সব দিয়ে—
“কলিকাতা সহরের চার দিকেই ঢ্যাকের বাজনা শোনা যাচ্চে, চড়কীর পিঠ সড়্ সড়্ কচ্চে, কামারেরা বাণ, দশলকি, কাঁটা ও বঁটি প্রস্তুত কচ্চে; সর্ব্বাঙ্গে গয়না, পায়ে নূপুর, মাথায় জরির টুপি, কোমরে চন্দ্রহার, সিপাই পেড়ে ঢাকাই সাড়ি মালকোচা করে পরা, তারকেশ্বরে ছোপান গামছা হাতে, বিল্বপত্র বাঁধা সূতা গলায় যত ছুতর, গয়লা, গন্ধবেণে ও কাঁসারীর আনন্দের সীমা নাই— ‘আমাদের বাবুদের বাড়ি গাজন!’’
এই উপলক্ষে একসময় পাড়ায় পাড়ায় সঙ বেরোনরও খুবই চল ছিল। কলকাতা তো বটেই মফসসল শহরগুলিতেও গোরুর গাড়িতে চড়ে সংক্রান্তির সন্ধেয় হ্যাজাকের আলোয় সঙ বেরোত হইহই করে। তাতে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের চরিত্ররা যেমন থাকত তেমনি আবার সাম্প্রতিক নানা ঘটনা নিয়ে সঙ বের করারও খুবই রেওয়াজ ছিল।
আরও পড়ুন-রেলের জন্মদিন
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ নিয়ে যখন প্রাণপণে লড়াই করে যাচ্ছেন তখন তাঁর পক্ষে এবং বিপক্ষে দুরকম সঙ-ই রাস্তায় বেরিয়েছিল বলে শোনা যায়। এ-ছাড়াও বছর শেষের দিনগুলিতে মেলা বসার রেওয়াজ তো ছিলই। আজকের বাংলাদেশের বরিশালের নলচিড়াতে সংক্রান্তির দিন থেকে মস্ত মেলা বসত। আসর হত গান-বাজনারও। চট্টগ্রামের কিছু জায়গায় সংক্রান্তির দিন লাওন নামে এক ধরনের নাড়ু খাইয়ে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে শুভেচ্ছা বিনিময় হত। তবে সংক্রান্তির উত্সব থাকলেও বছর শুরুর কোনও উত্সব কিন্তু সেভাবে ছিল না। হুতোমের নকশায় এ-নিয়ে আক্ষেপের বর্ণনাও আমরা পাই। আসলে সেকালের কলকাতায় ব্রিটিশরা যেভাবে নাচ-গান-আমোদ করে, কেল্লায় তোপ দেগে ইংরাজি নববর্ষকে আহ্বান জানাত বাঙালির নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর তেমন কোনও আয়োজন ছিল না। কবি ঈশ্বর গুপ্তও তাঁর কবিতায় বলেছেন, বাংলা হালখাতা আসলে ব্যবসায়ীদের উত্সব। সাধারণ মানুষের তার সঙ্গে বিশেষ যোগ নেই।
আরও পড়ুন-তাপের দাহ আরও চলবে
এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার আমাদের দেশে, যে কোনও উত্সবের সঙ্গেই ধর্মীয় অনুষঙ্গকে জুড়ে দেওয়ার একটা প্রচলন আছে। এক্ষেত্রেও সেরকমটা ঘটেছে। যে-কারণে সাধারণভাবে গাজনকে বলা হয় শিবের উত্সব। বাবু কলকাতায় নিম্নবর্ণের মানুষরা এই দিনটিতে শিব সেজে বেরোতেন। যে জমিদারবাবু অন্যদিনে তার ছায়া মাড়াতেও ঘৃণা বোধ করেন, গাজনে শিবত্ব প্রাপ্তির পর তাঁকেও সেই শিবসাজা মানুষটিকে প্রণাম করতে হত! তবে এসবই হল প্রচলিত নিয়ম-কানুন। চড়ক-গাজন কিংবা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নীলষষ্ঠী কোনও কিছুর সঙ্গেই সেই অর্থে ধর্মের কোনও যোগ নেই। সবই লোকাচার। তবে শহর-গ্রাম সর্বত্রই এই উত্সব মূলত নিম্নবর্ণের মানুষের। এখন দেখা যায় ধর্মের বিভেদ ভুলে সবাই এতে অংশ নিচ্ছেন।
নববর্ষ নিয়ে হুতোমের আক্ষেপ ঘুচতে কিন্তু অনেকটা সময় লেগেছে। আর সেখানেও আরও অনেক কিছুর মতোই যিনি আমাদের নতুনভাবে নতুন বছর উদযাপনের পথ দেখিয়েছেন তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অনেকটা বিজয়ার ঢঙে রবিঠাকুর নববর্ষেও নিয়ম করে প্রিয়জনদের চিঠি লিখতেন। ১২৯৫ বঙ্গাব্দের ২ বৈশাখ আমরা দেখি তিনি গাজিপুর থেকে প্রিয়নাথ সেনকে চিঠি লিখে বলছেন, ‘‘নববর্ষের কোলাকুলি গ্রহণ কর”। গাজিপুরে পয়লা বৈশাখের ব্রহ্মোপাসনায় তিনি নববর্ষের মহিমা ঘোষণার কথাও বলেছেন। এরও দু’বছর আগে আগে আমরা দেখি মহর্ষিভবনের উপাসনা উপলক্ষে তিনি তিনটি নতুন গান লিখেছিলেন। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় গান তিনটি প্রকাশিত হয়। ১৩০৯-এর বৈশাখে কবি লেখেন নববর্ষ প্রবন্ধ।
আরও পড়ুন-মোদি জমানায় শিক্ষার মান নামল শিবপুর বিইতে
শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমে প্রথমবার ধুমধাম করে নববর্ষ পালিত হয়েছিল ১৯০২ সালের ১৪ এপ্রিল। সেবার রামেন্দসুন্দর ত্রিবেদী, হীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো মানুষরা এসেছিলেন এই উত্সবে যোগ দিতে। এর কিছু বর্ণনা আমরা জগদানন্দ রায়ের লেখায় পাই। তিনি লিখেছেন যে বর্ষশেষের হুল্লোড়ের পর গাজনের লোকজন, চড়কীরা একসময় ক্লান্ত হয়ে পথেই শুয়ে পড়ত। কিন্তু চৈত্রাবসানের সেই রাতে কবির পরিবারের মানুষ, আশ্রমিকরা কেউ ঘুমোতেন না। এমনকী কেউ ঘুমোতে চাইলেও তাঁকে নানা ছুতোনাতায় জাগিয়ে রাখা হত। তারপর ভোর চারটের সময় মন্দির থেকে মৃদঙ্গের শব্দ আর রাধিকা গোস্বামীর প্রভাতী রাগিণীর সুর কানে এলেই সবাই মন্দিরে গিয়ে উপস্থিত হতেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই আরম্ভ হত গুরুদেবের উপদেশ। শান্তিনিকেতনের এই উত্সবে যোগ দেওয়ার জন্য ১৯০২ সালের পর থেকে কবি নিজেও দীনেশচন্দ্র সেন, প্রিয়নাথ সেন, প্রমুখকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। শান্তিনিকেতনে যে ভারি চমত্কার ভাবে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছে সেকথা জানিয়ে কবি মীরা দেবীকেও চিঠি লিখেছিলেন।
আরও পড়ুন-হতাশ ম্যান ইউ সমর্থকদের বিক্ষোভ
পাশ্চাত্যের অনুকরণ নয়। কিন্তু পশ্চিমের ধরনকে আত্তিকরণের মাধ্যমে নিজের মতো নতুন উত্সব সৃষ্টি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গান, প্রার্থনা এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে নববর্ষকে আহ্বান জানানোর ধারণা বাঙালি পেয়েছে তাঁর থেকেই। কিন্তু আম বাঙালি বহুকাল পর্যন্ত তা গ্রহণ করেনি। রবীন্দ্রনাথের এই চিন্তা-ভাবনাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে নামিয়ে আনার পিছনে আছে এক লড়াইয়ের ইতিহাস। এমন এক লড়াই যেখানে এই উত্সবই হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা। সেই উত্সব, সেই প্রতিবাদও কিন্তু বাঙালির, আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের বাঙালিদের। সেদেশে পাকিস্তানি শাসনকালে বাঙালি সংস্কৃতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারির ইতিহাস আমরা সবাই জানি। বাংলাভাষার জন্য মানুষ শহিদ হয়েছিলেন। সারা পৃথিবীর ইতিহাসে এমন উদাহরণ আর আছে কিনা সন্দেহ। সেই দমন-পীড়নের লক্ষ্যেই পাক-সরকার একবার রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারই প্রতিবাদে ১৯৬৫ সালে ছায়ানটের উদ্যোগে রমনা পার্কে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন হয়। “এসো হে বৈশাখ…” গানের মধ্যে দিয়ে আহ্বান জানানো হয় নতুন বছরকে। সেই ধারা আজও অব্যাহত। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে এটিকে জাতীয় উত্সব বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এরপরে ১৯৮৯ সাল থেকে এই উদযাপনে যোগ হয় নতুন এক আকর্ষণ, তার নাম মঙ্গলযাত্রা। অনেকটা শান্তিনিকেতনের দোল উত্সবের বৈতালিকের ধরনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গা প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসে চারুকলায়। তারপর থেকে প্রতিবছর নতুন নতুন সাজে সেজে ওঠে এই মঙ্গলযাত্রা। রাস্তা জুড়ে দেওয়া হয় রঙ-বেরঙের আলপনা।
আরও পড়ুন-প্রকৃতিকে রক্ষায় জঙ্গলমহলে পুজো
বাংলাদেশের পয়লা বৈশাখের এই উদযাপনের প্রভাব এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। অত বড় মাপের না হলেও কলকাতাতেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় বের হয় ছোট ছোট মিছিল। গান গেয়ে, নতুন বছরকে আহ্বান জানিয়ে পথ হাঁটেন সবাই। রাস্তা সাজানো হয় আলপনায় । আয়োজন হয় নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এই সব কিছুর সঙ্গে কলকাতার বিশেষ আকর্ষণ— কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় বহু বছর ধরে পয়লা বৈশাখের দিন লেখক-পাঠক-প্রকাশকের শুভেচ্ছা বিনিময় আর মিষ্টিমুখের যে চল আছে সে তো নিজগৌরবে থাকেই।
আরও পড়ুন-মন্ত্রীর নির্দেশের পর নড়েচড়ে বসল প্রশাসন, মাটিপাচার বন্ধে পুলিশ
তবে এই সব উত্সব-অনুষ্ঠানেই গত দুবছর করোনার কারণে ভাটা পড়েছিল। হয়নি কিংবা শুধু নিয়মরক্ষাটুকু সারা হয়েছে কোনওক্রমে। এ-বছর আবার এদেশে-ওদেশে সর্বত্র মানুষের জোয়ার ফিরেছে। আর তাই দেখে নতুন করে মনে বলও পাওয়া গেছে। কারণ পয়লা বৈশাখই বোধহয় একমাত্র উত্সব যা এপার-ওপার দুই বাংলাতেই সমান আনন্দে-উত্সাহে পালন করা হয়। কাঁটাতারের এপারে যারা সংখ্যালঘু ওপারে তারা ক্ষমতাবান হওয়া সত্ত্বেও। পয়লা বৈশাখ হচ্ছে এমন উত্সব যাতে কোথাও কোনও ধর্মীয় কাঁটা বেঁধানো নেই। তাই আজকের দিনে, যখন দুই বাংলাতেই ক্রমশ বাড়ছে মৌলবাদীদের আস্ফালন, ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে মুক্তচিন্তার পরিসর তখন এমন একটা উত্সব খুব জরুরি। সাধারণের উত্সব, সব বর্ণের উত্সব, সব সম্প্রদায়ের উত্সব, কাছে আসার শুভেচ্ছা দেওয়া-নেওয়ার উত্সব। আগামী বছর হাতে-হাত মিলিয়ে চলার অঙ্গীকারের উত্সব। অতিমারি আমাদের ভয় দেখিয়ে অনেক কিছু নষ্ট করে দিলেও বড় আশার কথা যে এই একটা জায়গায় আমরা জিতে গেছি। বিশ্বজোড়া আতঙ্কও আমাদের কাছে আসার আনন্দটুকু এখনও নষ্ট করতে পারেনি। আর কাছে আসতে পারলে, ভালবাসতে পারলে বাকি সব লড়াই-ই তো অনেক সহজ হয়ে যায়, তাই না?