প্রতিবেদন : গোবলয় থেকে মুছে গিয়ে কংগ্রেসের শক্তি শুধু দক্ষিণে! চার রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফলের যা ট্রেন্ড তাতে গোবলয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ‘হাত’। গোটা দেশে এখন দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকের পর তেলেঙ্গানায় সরকার গড়ার পথে কংগ্রেস। একদা দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের এমন বেহাল দশার জন্য দায়ী বেশকিছু কারণ।
আরও পড়ুন-ট্রেনের টিকিট বাতিলে গুনতে হবে দ্বিগুণ টাকা একাধিক নিয়ম বদল
রাজনৈতিক মহলের দাবি, অতিরিক্ত অহঙ্কার, রাজ্যে রাজ্যে ছোট দলগুলির উপর দাদাগিরি, একলা চলো নীতি এবং নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব। যার ফল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন রাহুল-খাড়গেরা। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় প্রতিটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে একই ছবি।
মধ্যপ্রদেশের ছবিটা যদি দেখা যায় তবে, ২৩০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র ছ’টি চেয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়া’র শরিক সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। কিন্তু কমল নাথদের গোঁয়ার্তুমিতে শেষ পর্যন্ত তা দিতে রাজি হননি রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খাড়গেরা। এরপর ৭১টি আসনে প্রার্থী দিয়ে (আরও ৯টি আসনে ছোট দলগুলিকে সমর্থন করে) অখিলেশ ঘোষণা করেছিলেন, কংগ্রেসের ‘বেইমানির’ জবাব দেবেন তিনি।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ভোটের ফল বলছে, উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া বুন্দেলখণ্ড-বাঘেলখণ্ডের পাশাপাশি বিন্ধ্য অঞ্চলেও কংগ্রেসের ভোট কেটেছেন সমাজবাদী প্রার্থীরা। শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, হিন্দি বলয়ের অন্য দুই রাজ্য ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে কংগ্রেসের ভরাডুবির ‘কারণ’ হিসাবেও উঠে আসছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা, দিশাহীন প্রচারের পাশাপাশি বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে উপেক্ষা করে ‘একলা চলো’র প্রবণতা। দেখা যাচ্ছে, কোনও রাজ্যেই ছোট আঞ্চলিক বিরোধী দলগুলিকে এক ছটাক জমিও ছাড়েনি কংগ্রেস। হাত শিবিরের এই ‘দাদাগিরি’ই কাল হয়ে উঠেছে ভোটবাক্সে। আম আদমি পার্টি, সিপিএম, সিপিআই এমনকী নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ তুলে আলাদাভাবে লড়ে হিন্দি বলয়ে।
ছত্তিশগড়েও দেখা গিয়েছে একই ছবি, জনজাতি এলাকায় সক্রিয় ‘গন্ডোয়ানা গণতন্ত্র পার্টি’ (জিজিপি)-র সঙ্গে অতীতের মতোই কংগ্রেসের আসন সমঝোতার সম্ভাবনা তৈরি হলেও তা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ফলে মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি একক শক্তিতে ছত্তিশগড়েও ভোটে লড়েছে জিজিপি। ফলে নিশ্চিত জয়ের রাজ্যে হারের মুখ দেখতে হয়েছে কংগ্রেসকে।
আরও পড়ুন-আজ থেকে ফের বসছে বিধানসভা
ছত্তিশগড়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রভাবশালী আদিবাসী নেতা অরবিন্দ নেতম কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল ‘হামার রাজ পার্টি’ গড়ে জনজাতি প্রভাবিত অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দেওয়ায় সুবিধা পেয়েছে বিজেপি। তা ছাড়া, মূলত আদিবাসী খ্রিস্টানদের সংগঠন সর্ব আদি দল এই প্রথমবার ভোটে লড়তে নামায় বস্তার অঞ্চলের সাতটি জেলায় বিপাকে পড়তে হয়েছে কংগ্রেসকে। রাজস্থানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দক্ষিণ রাজস্থানের দুঙ্গারপুর, বঁসওয়াড়া, উদয়পুরের মতো জনজাতি প্রভাবিত জেলাগুলিতে সক্রিয় বিটিপি এবং ওই দল ভেঙে তৈরি হওয়া ‘ভারতীয় আদিবাসী পার্টি’ (বিএপি) এবার কংগ্রেসের কাছে গোটা কয়েক আসন চেয়েও প্রত্যাখ্যাত হয়। তাই বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিয়ে অশোক গেহলটের ‘যাত্রাভঙ্গ’ করেছে তারা। মায়াবতীর বিএসপি এবং চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণের আজাদ সমাজ পার্টিও তিন রাজ্যে কংগ্রেসের দলিত ভোটে সিঁধ কেটেছে বলে প্রাথমিক ফলাফলে অনুমান করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের হারের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব।
আরও পড়ুন-‘ইগো ছেড়ে বাস্তবতাকে বুঝতে শিখতে হবে’,কংগ্রেসকে তোপ দেবাংশুর
রাজস্থানে শচীন পাইলট বনাম অশোক গেহলট। ছত্তিশগড়ে টি এস সিংদেও বনাম ভূপেশ বাঘেল। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ বনাম দিগ্বিজয় সিং। উত্তর ভারতের যে তিন রাজ্যে ভোট হয়েছে, তিন রাজ্যেই কোন্দলে জর্জরিত কংগ্রেস। রাজস্থানে পাঁচ বছর পরপর সরকার বদলের রীতি পালটে ফেলার একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল কংগ্রেসের সামনে। কিন্তু পাইলট-গেহলটের দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত হাত শিবিরের জন্য আত্মঘাতী হয়ে গেল। গেহলটকে মুখ করায় সেভাবে প্রচারই করলেন না পাইলট। ফলে গুর্জর ভোটে ভাগ বসাল বিজেপি। আবার ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী টি এস সিংদেওয়ের লড়াই সর্বজনবিদিত। তাঁরা দু’জনেই লড়েছেন, তবে একে অপরের হাত ধরে নয়। একে অপরের বিরুদ্ধে। মধ্যপ্রদেশেও শেষবেলায় কমল নাথ এবং দিগ্বিজয়ের মতো বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল।