ধোনির শহরে ফিরছে ক্রিকেট , ম্যাচে মজে সূর্য রোহিত

Must read

রাঁচি, ১৮ নভেম্বর : রাঁচির মুল শহর থেকে ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রায় ১৩-১৪ কিলোমিটার। জায়গাটার নাম বিরসা নগর। লোকে চেনে ধুরুয়া বলে। একটু ফাঁকা জনপদ। তার মধ্যে হাজার পঞ্চাশেক আসনবিশিষ্ট অত্যাধুনিক ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট স্টেডিয়াম।

কোভিড পরবর্তীকালে আবার ক্রিকেটের বড় আসর ছোট্ট শহরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল গোটা দুয়েক কারণে শুক্রবারের ম্যাচ নিয়ে বেশ আগ্রহ তোইরি হয়েছে জনমানসে। এক তো এই যে, করোনায় ঘরবন্দি মানুষের সামনে মুক্ত বাতাসের মতো ফিরেছে ক্রিকেট। তার উপর আবার জয়পুরে প্রথম ম্যাচে ভারত নিউজিল্যান্ডকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দেওয়ায় খুব খুশি হয়েছেন স্থানীয়রা। এই জয়কে বিশ্বকাপে হারের জবাব হিসাবে দেখছেন অনেকে।
বুধবারের ম্যাচে ১৭তম ওভারে সুর্যকুমার যাদব যখন আউট হয়ে গেলেন, ভারত কিন্তু কিছুটা চাপে পড়েছিল। ম্যাচের পর রোহিত সেটা স্বীকার করেছেন। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ঋষভ ম্যাচ বের করে নিয়ে যান। মার্টিন গাপ্টিল আর মার্ক চ্যাপম্যান যেভাবে ইনিংস শুরু করেছিলেন, তাতে রক্তচাপ বাড়ছিল ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। ৪২ বলে ৭০ রান করা গাপ্টিলকে শুক্রবারের ম্যাচেও তাড়াতাড়ি ফেরানো লক্ষ্য থাকবে ভারতীয় বোলারদের।

আরও পড়ুন : লড়ে শেষ আটে গেলেন সিন্ধুরা

লাল মাটির এই উইকেটে টি-২০ ম্যাচে অ্যাভারেজ স্কোর ১৫২। তবে রাতের দিকে শিশির সমস্যায় ফেলতে পারে দুটো দলকেই। সুতরাং বিশ্বকাপের মতোই টস একটা ফ্যাক্টর হতে যাচ্ছে।
রোহিত জয়পুরের ম্যাচে রান পেয়েছেন। কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের স্লোয়ার বাউন্সারে ঠেকে গিয়েছেন ৪৮ রানে। হিটম্যান ঠিক যখন আরও বড় ইনিংস খেলার দিকে এগোচ্ছেন, তখনই বোল্ট এই ধাক্কা দিয়েছেন। তবে তিনে নামা সুর্যকুমার বাকি কাজটা সেরে দেন। এই প্রথম পুরো সময়ের অধিনায়ক হিসাবে খেলছেন রোহিত। সঙ্গে নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ভারতীয় ক্রিকেটের হট সিটে বসা দ্য ওয়ালের কানের পাশের চুলে এবার আরও পাক ধরতে পারে, কিন্তু রোহিত-রাহুল জুটির মহরত কিন্তু জমে গিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে শ্রীলঙ্কায় দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে গিয়ে একদিনের সিরিজ জিতে এসেছেন দ্রাবিড়। শুক্রবার রাঁচিতে জিতলে এই সিরিজও তাঁর হাতে চলে আসবে। এই সিরিজের শেষ ম্যাচ রবিবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে।
মহেন্দ্র সিং ধোনির অবসরের পর রাঁচির চোখ এখন ঝাড়খণ্ড ক্রিকেটার ইশান কিশানের দিকে। ইশান অবশ্য পাটনার ছেলে। খেলেন ঝাড়খণ্ডের হয়ে। প্রথম ম্যাচে তাঁর দলে জায়গা হয়নি। এই ম্যাচেো রোহিত উইনিং কম্বিনেশন ভাঙবেন বলে মনে হয় না। তবু ‘হামারা ইশান’ বলে লোকজন মাঠে আসবেনই। শুধু প্রশ্ন, গ্যালারির কতটা ভরবে শুক্রবারের ম্যাচে।

এদিকে ম্যাচ জিতে সূর্যকুমার বললেন বিরাটের কাছে কৃতজ্ঞ। জয়পুরে তিনে ব্যাট করে সূর্যকুমার যাদব ৪০ বলে ৬২ রানের ইনিংস দলের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। ম্যাচের সেরা হন মুম্বইয়ের ডানহাতি। ট্রফি হাতে সূর্যর মুখে বিরাট কোহলির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা।
বিশ্বকাপে নামিবিয়া ম্যাচে বিরাট নিজের তিন নম্বর জায়গা সূর্যকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। যাতে তিনি বেশি সময় ব্যাট করার সুযোগ পান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সূর্যর অভিষেক টি-২০ সিরিজেও ঘটেছিল একই ঘটনা। কৃতজ্ঞ সূর্যকুমার তাই বলছেন, ‘‘আমি যাতে বেশিক্ষণ ব্যাট করার সুযোগ পাই, তার জন্য নামিবিয়া ম্যাচে আমাকে তিন নম্বর জায়গা ছেড়ে দিয়েছিল বিরাট। এটা ওর উদারতার পরিচয়। ম্যাচের আগে ও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি বেশি গেম টাইম পেতে চাই কিনা। আমি নিজেও বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে ছাপ রাখতে চেয়েছিলাম। তাই ওর প্রস্তাব লুফে নিই।’’ আরও যোগ করেছেন, ‘‘আমার অভিষেক টি-২০ সিরিজেও একই ভাবে বিরাট আমাকে তিন নম্বর জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজে চারে ব্যাট করেছিল।’’ বুধবার ছিল সূর্যকুমারের স্ত্রী জন্মদিন। এমন দিনে দেশকে ম্যাচ জেতাতে পেরে খুশি সূর্য নিজেও। মজার বিষয়, ম্যাচে সূর্যর সহজ ক্যাচ মিস করেছিলেন কিউয়ি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট, যিনি আবার আইপিএলের সূর্যকুমারের সতীর্থ। সূর্য তাই রসিকতা করে বলছেন, ‘‘ওটা বোল্টের তরফ থেকে আমার স্ত্রীকে জন্মদিনের উপহার।’’

আরও পড়ুন : Cm on howrah traffic : কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটের সমস্যার সমাধানের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

আবার রোহিত শর্মা আউট হওয়া বল নিয়ে বললেন, ‘স্লো বাউন্সারে তাঁর সমস্যা আছে। এটা ট্রেন্ট বোল্ট জানতেন। আর এটাই কাজে লাগিয়ে তাঁর উইকেট তুলে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ড স্পিডস্টার। জয়পুরে প্রথম টি২০ ম্যাচের পর বললেন রোহিত শর্মা। এই ফরম্যাটে ভারতের নতুন অধিনায়ক দারুণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি যখন পঞ্চাশের কাছে, তখন তাঁকে স্লোয়ার বাউন্সারে ঠকিয়ে দেন বোল্ট। রোহিত বলেন, “একসঙ্গে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে খেলার সময় আমিই বোল্টকে এভাবে ঠকানোর কথা বলেছিলাম। কে জানত যে সেই অস্ত্র আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলার সুবাদে আমরা পরস্পরের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে জানি। তবে যাই হোক, জয়পুরে প্রথম ম্যাচে আমাদের মধ্যে ভাল লড়াই হয়েছে এটা বলতে পারি।”
রোহিত আরও বলেন, “বোল্ট যখন মিড উইকেট ফিল্ডারকে আরও পিছনে করে দিল আর ফাইন লেগকে কাছে নিয়ে এল, আমি আন্দাজ করেছিলাম যে একটা বাউন্সার আসছে। কিন্তু চেষ্টা করেও বল ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে পাঠাতে পারিনি।” তিনি মেনে নিয়েছেন, ভাল শুরু করেও চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। রোহিত ৪৮ রান করে যান। ১৭তম ওভারে সূর্যকুমার যাদব ৬২ রান করে ফিরে যাওয়ার পর ড্রেসিংরুমে চাপ তৈরি হয়েছিল। তবে ভারত শেষমেশ প্রথম ম্যাচ পাঁচ উইকেটে জিতে সিরিজ শুরু করেছে।
রোহিত বলেছেন, পুরো সময়ের অধিনায়ক হিসেবে এই জয় তাঁকে ও তাঁর দলকে অনেক শিখিয়ে গেল। এই জয় তাঁকে ও নতুন কোচ দ্রাবিড়কেও অনেক স্বস্তি দিল বলে জানান তিনি।

 

Latest article