প্রতিবেদন : প্রয়াত সুভাষ ভৌমিকের আত্মজীবনী ‘গোল’ নিয়ে খোদ সাংবাদিক মহলেই যেভাবে গোলমাল বেধেছে, তাতে এই প্রশ্নটাই সবচেয়ে বেশি উঠে আসছে।
সুভাষ ভৌমিক (Subhas Bhowmick) মারা গেলেন ২২ জানুয়ারি। আর ১ ফেব্রুয়ারি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের স্মরণসভার মঞ্চেই দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশিত হয়ে গেল ‘গোল’ এর কভার। তাতেই মূল যে গোলটা বেধেছে, তা হল, স্মরণসভার মঞ্চে প্রয়াত সুভাষের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের থেকেও বইয়ের পাবলিসিটি নিয়েই কি বেশি ব্যস্ত ছিলেন ‘গোল’-এর দায়িত্বপ্রাপ্তরা! সমস্যাটা শুরু হল এখান থেকেই। কারণ, ‘গোল’-এর সহলেখক সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় আর পরিচালক, সম্পাদক গৌতম ভট্টাচার্যর সঙ্গে কোচ হিসেবে সুভাষের কর্মজীবনের কোনও সম্পর্কই ছিল না। আর এখানেই সংবাদ প্রতিদিনের প্রাক্তন স্পোর্টস এডিটর, একদা সুভাষ ‘ঘনিষ্ঠ’ অরুণ সেনগুপ্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গোল’-এর একাধিক তথ্যগত ভুল উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছেন, “কাদের হাতে জীবনী লেখার ভার তুলে দিয়েছেন সুভাষ?”
ব্যস, এই ইস্যু ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংবাদিককুল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে দ্বিধাবিভক্ত না বলে সাংবাদিকরা একপক্ষ হয়ে উঠেছেন বলাই যায়। কারণ বইয়ের সহলেখক অরুণ সেনগুপ্তর তুলে ধরা ভুলগুলির পাল্টা যুক্তি দিয়ে ফুটবল সাংবাদিকদের আক্রমণ করে লেখেন, আসলে সুভাষের (Subhas Bhowmick) বইয়ে অন্য সাংবাদিকদের নামোল্লেখ নেই বলেই ফুটবল সাংবাদিকদের গাত্রদাহ হয়েছে। আর তারপরেই একাধিক ফুটবল সাংবাদিক সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েন সহলেখকের উপর। নিজের ভুলগুলি ঢাকার জন্য সুপ্রিয় এরপর উইকিপিডিয়ার উল্লেখ করে বলেন, ৭০-এর এশিয়াডে ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন পিকে। এবং সেই সময় আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৭০ মিনিটে হত। তাই ৩৬ মিনিটে সুভাষের গোলটা দ্বিতীয়ার্ধে হয়।
এই হাস্যকর যুক্তি দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে পড়েন। কোনও সহলেখক যদি সুনীল গাভাসকরের আত্মজীবনী লেখার সময়, উইকিপিডিয়ায় ভুল এডিটে দেখেন, ৮৩’র বিশ্বকাপে অধিনায়ক ছিলেন রজার বিনি, তাহলে তিনি কি বিনির নামই লিখে দেবেন? একজন সাংবাদিক, যিনি একজন সফল প্রাক্তন ফুটবলারের আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে ৭০-এর ভারতীয় দলের কোচের নামের জন্য উইকিপিডিয়ার উপর ভরসা করছেন, অথবা একজন ফুটবলারের আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে সামান্য জানেন না যে, ’৭০-এ কলকাতা লিগ ৭০ মিনিটের খেলা হলেও আন্তর্জাতিক ফুটবলটা ৯০ মিনিটের হত, তাঁদের কি আদৌ কোনও ফুটবলারের আত্মজীবনী লেখার যোগ্যতা আছে? যেখানে বইয়ের সম্পাদকের নাম গৌতম ভট্টাচার্য!
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, অরুণ সেনগুপ্তর জায়গায় সংবাদ প্রতিদিনের স্পোর্টস ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন গৌতম। অনেকে মনে করছেন সমস্যাটা এখান থেকেই। তাই হয়তো প্রয়াত সুভাষের বইয়ে সাংবাদিকদের অধ্যায়ে অরুণ সেনগুপ্তকে সুভাষ বর্ণিত ‘মধ্য মেধার সাংবাদিক’ বলে উল্লেখ থাকলেও, তা খুশি মনে মেনে নিয়েছেন গৌতম। তবে সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে, সভাপতি থাকার সময় ১২-১৫ লক্ষ টাকা ক্লাবের জন্য তুলে দিয়েছেন উল্লেখ করে ‘কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক’ ক্লাব থেকে পদত্যাগ করেছেন গৌতম। যা নিয়ে অনেক সদস্য বলছেন, টাকা তুলে আনতে না পারাটাও হয়তো তাহলে সাংবাদিকদের এক ধরনের অযোগ্যতা!