২০১৪ সালে ভোটে জিততে নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি চাকরি। তা পূরণ হওয়া তো দূর অস্ত্, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে শিক্ষিত বেকারের হার দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৯- এ লোকসভা নির্বাচনের মূল ইস্যু ছিল পুলওয়ামা হামলা। তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের বক্তব্যে। আর এবার কর্মসংস্থান আর দেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির সবটাই ব্যাক সিটে। চব্বিশের নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে মোদির হাতিয়ার ধর্ম। সব কিছু ছেড়ে তিনি ধর্মের নামে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার রাজনীতিতে নেমেছেন। বাংলায় এসেও রামমন্দির কার্ড খেলেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ৫০০ বছরের রামমন্দিরের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মোদির আমলেই।
রামকে পুজো করা নিয়ে কিছু বলার নেই। কারণ, আমরা সবাই রামকে পুজো করি। রাম পুরুষোত্তম, সে কথাটা আমরা সবাই জানি এবং মানি। আসলে, সমস্যাটা এটা নয়। সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ধর্মের নামে ভোটকে প্রভাবিত করা নিয়ে আমাদের যাবতীয় আপত্তি। আপনারা ধর্মের টোপটা মানুষকে খাওয়াতে চাইছেন, কারণ আপনারা দাঙ্গা বাধাতে চান। আর সেখানেই আমাদের আপত্তি। বিজেপি দাঙ্গা লাগিয়ে ভোটে জিততে চাইছে। সেই কারণেই অন্নপূর্ণা পুজো, রামনবমীর পর উত্তরবঙ্গের জন্য ১৯ এপ্রিল ভোটের দিন ঠিক করা হয়েছে।
বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ রাখা নিয়ে মোদি রাজ্য প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলছেন। সরব হচ্ছেন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে। ভাল কথা। কিন্তু গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে, সেখানে তো টাকা বন্ধ হয়নি। চালুনি হয়ে ছুঁচের ছিদ্র খুঁজতে বেরিয়েছেন মোদি?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেইছেন যে, দু’একটা ভুলত্রুটি ছিল, যাঁরা করেছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর সেই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করেছেন, মোদি যদি এতটাই আত্মবিশ্বাসী হন, তাহলে কোন রাজ্যে কত দুর্নীতি হয়েছে, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। কই, সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের হিম্মৎ তো দেখাতে পারছেন না মোদি কিংবা শাহ, অবলকান্ত মজুমদার কিংবা অশুভ ইন্দু লোডশেডিং অধিকারী!
কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে তো কাজে লাগাচ্ছেনই। বিচারব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করতে চাইছেন। এবারের ভোটে গণতন্ত্রকে খুন করতে চাইছেন। আপনার লজ্জা করে না মোদিজি?
আপনার সঙ্গী এখন গিরগিটি গাঙ্গুলি। আগে ছিলেন বিচারক। এখন গেরুয়া প্রার্থী। বিচারপতি থাকাকালীন রাজ্য সরকারকে হেনস্থা করতেই নিয়োগ মামলায় তিনি পক্ষপাতিত্ব করেছেন। আসলে বিচারব্যবস্থাকেও ম্যানেজ করার কোনও কসুর করছে না গেরুয়া শিবির। এরই জলজ্যান্ত উদাহরণ হল গিরগিটি গাঙ্গুলির মতো প্রাক্তন বিচারপতিকে বিজেপির প্রার্থী করা। গিরগিটিবাবু আদালতে চাকরি খেয়েছেন। এবার জনতার আদালতে আপনার চাকরি খোয়াবেন। আমাদের প্রার্থী তো আপনাকে ছুটিয়ে মারছে। আমাদের জন্য নেত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার পাঁচ লক্ষ পদে চাকরি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু চাকরি দিতে গেলেই বিরোধীরা মামলা করে আটকে দেয়। সেই আবর্তেই নিয়োগ সংক্রান্ত নানা মামলায় বিচারপতি থাকাকালীন রাজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন গিরগিটি গাঙ্গুলি। তিনি বিজেপিতে যোগদান করায়, সেই সমস্ত রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনকী ইচ্ছাকৃত ভাবে চাকরি আটকানোর অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণিত। এহেন গিরগিটি গাঙ্গুলির সম্পর্কে সাধারণ ভোটারদের মনোভাব আপনাকে জানিয়ে রাখি। আপনি তো প্রায় বিধাতা পুরুষ কিন্তু এই খবরটা বোধ হয় এখনও জানেন না। ভোটের রেজাল্ট বের হলে টের পাবেন। এক সময় তাঁকে ভগবানের চোখে দেখা চাকরিপ্রার্থীদের অনেকে মোটেই খুশি নন ভোট প্রার্থী গিরগিটি বাবুকে দেখে। আর বিচারপতি অভিজিতের নির্দেশে যাঁরা চাকরি খুইয়েছিলেন, তাঁরাও ক্ষুব্ধ। দু’তরফেই অনেকে বলছেন, ‘নো ভোট টু অভিজিৎ’।
কোচবিহারে আপনাদের প্রার্থী একজন গুন্ডা। তৃণমূল কংগ্রেসের আপদ এখন ভারতীয় জঞ্জাল পার্টির সম্পদ। তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ। তিনি এখন কেন্দ্রের হোম মিনিস্টারের দ্বিতীয়, তৃতীয় পর্যায়ে পড়েন। মোদি অন্যকে দুর্নীতিবাজ বলেন। কেউ যদি এলাকায় বদমায়েশি করে, ওই আপনাদের প্রার্থীর মতো গুন্ডারা, তাদের গ্রেপ্তার করে দেখান। আমরা ওঁকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কেন তাড়িয়ে দিয়েছিলাম? মনে করিয়ে দেব? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেইছেন, ‘আমি তো আমাদের কর্মী আরাবুলকে গ্রেফতার করতে পারি, শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারি, তাহলে আপনারা কোন আক্কেলে একজন গুন্ডাকে মন্ত্রী রাখেন?’ এই প্রশ্নের জবাব কিন্তু মোদিজিকে দিতেই হবে।
মোদিজি! আপনার দলের রাজ্য সভাপতি শ্রীঅবলাকান্তের কথা দিয়ে আজ ইতি টানব। লা জবাব লোক উনি। বাংলার ভাল চান না। তাই দিল্লিতে গিয়ে বাংলার ১০০ দিনের টাকা এবং বাড়ির টাকা বন্ধ করে এসেছেন। অথচ উত্তরবঙ্গের ঝড়ে দুর্গত মানুষদের পাশে দেখা যায়নি তাঁকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক অভিধায় চিহ্নিত করেছেন তাঁকে। ‘বাংলার গদ্দার, বাংলার কুলাঙ্গার!’ কুসান্ত আর গদ্দার কুলের পোদ্দার শুধু বলেছে, বাংলাকে ১০০ দিনের টাকা দেওয়া যাবে না। বাংলার বাড়ি দেওয়া যাবে না। রাস্তা দেওয়া যাবে না। কিন্তু কোনও দিন সারি-সারনা ধর্ম নিয়ে কথা বলেছেন দিল্লিতে গিয়ে?
এই হল মোদি বাহিনী। ওরা বাংলার ভাল চায় না। ওদের হারাতেই হবে।
২০২৪-এ তাই ভারতীয় গণতন্ত্রকে বাঁচাতে, বঙ্গ-স্বার্থ রক্ষা করতে ভোট দিন শুধু জোড়া ফুলে। নো ভোট টু বিজেপি।
মোদি জমানায় নিহতের নাম গণতন্ত্র
ভারতের গর্ব আর রাজ্যের স্বার্থকে হত্যা করল ওরা বাংলার গদ্দার, বাংলার কুলাঙ্গার কুসান্ত আর গদ্দার কুলের পোদ্দার। ওরা শুধু বলেছে, বাংলাকে ১০০ দিনের টাকা দেওয়া যাবে না। বাংলার বাড়ি দেওয়া যাবে না। রাস্তা দেওয়া যাবে না। কিন্তু কোনও দিন সারি-সারনা ধর্ম নিয়ে কথা বলেছেন দিল্লিতে গিয়ে? জানতে চাইলেন অনির্বাণ ধর