আত্মবিশ্বাস না চাপ, এই মুহূর্তে কে এগিয়ে?
ধ্রুব : আত্মবিশ্বাস নিয়ে ছবিটা তৈরি করে ফেলেছি আর চাপ ফিল করছি না কারণ ঘুম থেকে ওঠা থেকে ফের গভীর রাতে ঘুমোতে যাওয়া অবধি যে ব্যস্ততায় এখন দিনগুলো কাটছে তাতে কাজ ছাড়া আর কিছুই মাথায় থাকছে না। এই মুহূর্তে আমি কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা, ১০ অক্টোবর কন্যা সম্প্রদান না হওয়া অবধি অন্য কিছু ভাবতেও চাই না। আর ভাবছি না বলেই হয়তো চাপও বুঝতে পারছি না।
কী মনে হচ্ছে, ‘মরা জাতির রক্তে বিস্ফোরণ’ ঘটবে?
ধ্রুব : দেখুন প্রায় দু’বছরের বন্দি জীবন কাটিয়ে মনে মনে বিস্ফোরণের অপেক্ষায় আমরা সবাই। তবে তা বাঁধনহারা হলে বিপদ। নির্দিষ্ট বিধি-নিষেধের গণ্ডির মধ্যে থেকেই যদি মন সাময়িক একটা মুক্তির স্বাদ পায় আর তার মাধ্যম যদি হয় সিনেমা, আমার কাছে তার চেয়ে ভাল কিছু আর হতে পারে না। আর এর সঙ্গে দুর্গাপুজোর মতো ক্যাটালিস্ট। সব মিলিয়ে আমরা যে আসলে সামাজিক জীব তা রি-রিয়ালাইজ করার জন্য উপযুক্ত। সিনেমা হলে ছবি মুক্তি এই উপলব্ধিকেই আরেকটু এগিয়ে দেবে। ‘গোলন্দাজ’ এটা পারলেই নিশ্চিতভাবে সেটা হবে এক মনোরম বিস্ফোরণ।
গোলন্দাজ তৈরির নেপথ্য ভাবনা ও রূপায়ণের জার্নিটা বলুন।
ধ্রুব : আমার কাছে এটা একেবারেই প্রসেস অফ কনটিনিউয়েশন। প্রবাসে ২১ বছর কাটিয়ে কলকাতায় ফেরা একটাই মাইন্ড সেট নিয়ে, বাংলা সিনেমা করব। আসলে বাইরে থেকে দুটো জিনিস ফিল করছিলাম, এক, বাঙালিদের গর্বের জায়গাটা কেমন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। আর দুই, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের নিজেদের রুট সম্বন্ধে তেমন কোনও ধারণাই তৈরি হচ্ছে না। তারা জানতেই পারছে না নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, হেরিটেজের কী প্রগাঢ় বিস্তার। সেই গভীরতার কথা সঠিকভাবে জানতে পারে না বলেই তারা নিজেদের কৃষ্টি ভুলে অন্যদের অনুকরণ করে। সোনাদাকে দিয়ে এই জার্নিটা আমি শুরু করেছিলাম। আসলে তো সোনাদা আমিই। আমার আর সোনাদার এই একাত্ম জার্নির উদ্দেশ্যই হল বাঙালিয়ানা উদযাপন ও বিশ্বের মানচিত্রে আমাদের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনা। ‘গোলন্দাজ’ আমার এই ভাবনারই তৃতীয় ধাপ। আমার সৌভাগ্য শ্রীকান্তদা ও মণিদাকে সঙ্গে পেয়ে যাওয়া। ওঁরা দুজনেই অনেক বাঙালির চেয়েও বেশি বাঙালি। ‘গোলন্দাজ’ নিয়ে আমার ভাবনাটা শুনে প্রথম দিনেই বলেছিলেন, এইটাই তো আমরা মিস করছিলাম এতদিন! নিজেদের এই ম্যাজিকটা। এইভাবেই ‘গোলন্দাজ’ এগোল। আরও দু’জনের কথাও এ প্রসঙ্গে বলতেই হবে, আমার সাংবাদিক বন্ধু দুলাল দে ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। দুলাল প্রচুর সাহায্য করেছে আমার রিসার্চ ওয়ার্কে আর অনির্বাণ সংলাপে।
এ তো ছবি শুরুর দিকে এগোনো। কিন্তু নগেন্দ্রপ্রসাদকে নিয়ে ছবি করার ভাবনাটা নিশ্চয়ই তারও আগে থেকে?
ধ্রুব : অবশ্যই। আমি অনেক ছোটবেলায় পড়েছিলাম নগেন্দ্রপ্রসাদের কথা। যত বড় হয়েছি মনে হয়েছে এ এক অনবদ্য সাবজেক্ট। মারাত্মক বর্ণময় একটা জীবন শুধু নয় আমাদের ইতিহাস, আমাদের কৃষ্টির সঙ্গে ওতপ্রোত জড়ানো একজন মানুষ। ভারতীয় ফুটবলের জনক শুধু নয়, ব্রিটিশদের সঙ্গে খেলে প্রথমবার ভারতীয়দের জয় ছিনিয়ে আনার অদম্য জেদ। শুধু এও নয়, ময়দানে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার আদায় করা থেকে খালি পায়ে ফুটবল খেলে শুধু মনের জোরে ব্রিটিশদের সঙ্গে টক্কর দেওয়া সবই এই মানুষটির দ্বারা সংঘটিত। সেই সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র থেকে ঈশ্বরচন্দ্র, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, ঋষি অরবিন্দ, বিবেকানন্দ প্রত্যেকের সরাসরি প্রভাব তাঁর জীবনে। কাজেই রাজনৈতিকই বলুন আর সামাজিকই বলুন, তিনি একজন যুগপুরুষ সব দিক থেকেই। অথচ এই মানুষটার কথা বাঙালি সেভাবে জানেই না। এমনকী ময়দানের ফুটবল জগতের বেশিরভাগও জানেন না নগেন্দ্রনাথের কথা। তাই সুযোগ পেতেই বহুদিন আগের সেই স্বপ্নে শান দিতে দেরি করিনি। কিন্তু ট্রেলার লঞ্চ হওয়ার পর থেকেই এই মানুষটির সম্পর্কে জানার আগ্রহ কী পরিমাণ তা শুধু গুগল সার্চের হিস্ট্রি দেখলেই বোঝা যাবে। আইএফএ থেকে এও বলা হচ্ছে, ময়দানে ওঁর মূর্তি বসানো হবে। সব মিলিয়ে দেখুন আমি কিন্তু ঠিক রাস্তাতেই এগোচ্ছি, যে কারণে আমার সিনেমা বানাতে আসা!
দেবকে এই ছবিতে নেওয়া কেন? ওঁর নাম বা জনপ্রিয়তা বাড়তি মাইলেজ দেবে সেজন্যই কি?
ধ্রুব : দেব না হলে এই ছবি আমি করতামই না! আপনারা যদি নগেন্দ্রনাথের বয়সকালের ছবি দ্যাখেন বুঝতে পারবেন দেব ও নগেন্দ্রনাথ কত প্রোটোটাইপ। তাছাড়াও যে শারীরিক সৌষ্ঠব ও চারিত্রিক বর্ণনা পাওয়া যায় তাতেও প্রচুর …