প্রতিবেদন : উন্নয়নের কোনও সীমারেখা হয় না। পৃথিবীর উন্নয়ন না করে দেশের উন্নয়ন হয় না। আমরা তাই উন্নয়নে মানবিক মুখ নিয়ে উন্নয়ন করি। সেটাই সরকারের ভাবনা এবং লক্ষ্য। সোমবার বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে জি-২০ সম্মেলনকে এভাবেই সম্বোধন করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে জি-২০ ফিনান্সিয়াল ওয়ার্কিং গ্রুপের তিনদিনের বৈঠক। এবারের জি-২০ সম্মেলনের মূল ভাবনা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম।’ অর্থাৎ গোটা বিশ্ব একটাই পরিবার। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেই সুর বেঁধে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশ-বিদেশের অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, রাজ্যে এই জি-২০ বৈঠকের আয়োজন করতে পেরে তিনি আনন্দিত।
আর্থিক অগ্রগতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিজিটাল লেনদেনের দরজা আরও ভালভাবে মানুষের সামনে খুলে দেওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এক আলোচনাচক্রের মধ্যে দিয়ে এদিনের বৈঠক শুরু হয়। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) বলেন, আপনাদের দেশ, আমাদের দেশ বলে আমি বিভেদ করি না। গোটা বিশ্বই আমার মাতৃভূমি। আপনারা যখন এখানে এসেছেন, তখন এই বাংলা আপনারও। নারী ক্ষমতায়ন ও সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে সামনের সারিতে এগিয়ে আনতে তাঁর সরকারের কাজগুলিও তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনারা যাকে ফিনান্সিয়াল ইনক্লুসন বলছেন, সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ ইতিমধ্যে কয়েক কদম ফেলেছে। যেমন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। এর মাধ্যমে সমস্ত মহিলা, বিশেষ তফসিলি জাতি ও উপজাতি মহিলাদের ডাইরেক্ট ট্রান্সফারের মাধ্যমে মাসে ভাতা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, এ ধরনের সামাজিক সুরক্ষার গুচ্ছ প্রকল্প রয়েছে বাংলায়। সরকার পৌঁছে গিয়েছে মানুষের দরজায়।
আরও পড়ুন-উচ্চমাধ্যমিকে হোম সেন্টার এবার আর নয়
বাম আমলের অচলায়তন ভেঙে বাংলা কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেকথা তুলে ধরেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ৩৪ বছর বাংলায় বাম শাসন ছিল। তারপর রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে, ক্ষমতায় আসেন। এবং এসে দেখতে পান উন্নয়ন বলে কোনও বস্তু তখন নেই। সেই জায়গা থেকে এতদূর পৌঁছনো সহজ ছিল না। কোভিডের সময়েও পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলায় দারিদ্র কমেছে। তিনি নিজের সরকারের মানবিক কাজের কথা তুলে ধরে বলেন, এরাজ্যে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ মহিলাদের উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ই-গভর্ন্যান্স ও ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তিনি তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে কর্মসংস্থান বেড়েছে, দারিদ্র কমেছে। রাজ্যে ১২ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। করোনাকালে রাজ্যের জিডিপি বেড়েছে ৪ গুণ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সমগ্র দেশের মধ্যে এক নম্বরে বাংলা। তিনি ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, এই প্রকল্পের জন্য রাজ্যকে সেরার পুরস্কার দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দুয়ারে সরকার কেন্দ্রের পুরস্কার পেয়েছে। রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনার দিকটিও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন।
এই আলোচনার অঙ্গ হিসেবে এদিন দুটি আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হয়। ১২ জন আর্থিক বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক স্তরের বক্তা আলোচনায় অংশ নেন। এর পাশাপাশি উদ্ভাবনী আর্থিক পণ্য নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠক শেষে অতিথিদের নিয়ে গঙ্গাবক্ষে ক্রুজে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল।