দুর্যোগ-বাঘ-কুমির, লড়াইয়ের নাম সুন্দরবন

গতিশীল প্রশাসনকে সঙ্গী করে সুন্দরবনের ধ্বংস আটকাতে পদক্ষেপ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। লিখছেন মণীশ কীর্তনীয়া। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।

Must read

ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করেই টিকে আছে সুন্দরবন। আয়লা থেকে আমফান। একের পর এক ঝড় আছড়ে পড়েছে বাদাবনে। তছনছ করে দিয়েছে দ্বীপের পর দ্বীপ। প্রকৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার রাশ আছে প্রশাসনেরই হাতে। আর সেখানেই ফারাকটা চোখে পড়ছে। আয়লার সময়ে যা হয়নি, আমফানে তা ঘটেছে। গতিশীল প্রশাসনকে সঙ্গী করে সুন্দরবনের ধ্বংস আটকাতে পদক্ষেপ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। লিখছেন মণীশ কীর্তনীয়া। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।

আরও পড়ুন-আসন বদল চার বিধায়কের

আয়লা থেকে আমফানের আস্ফালন। সময়কাল অনেকটাই। মাতলা-ঠাকুরানি-রায়মঙ্গল-মণির খাত দিয়ে বয়ে গিয়েছে গ্যালন গ্যালন জল। বছর বছর ভোট এসেছে। বামেরা কায়দা করে, লোভ দেখিয়ে, ভুল বুঝিয়ে গোসাবা-পাথরপ্রতিমা-জি প্লট-বসিরহাট-সন্দেশখালিসহ গোটা সুন্দরবনের মানুষের ভোট ভরেছে তাদের ঝুলি। ভয়-ভক্তিতে অসহায় মানুষগুলো দিয়েছে সমর্থন। পরিবর্তে পায়নি কিছুই। দীর্ঘ ৩৪ বছর বাংলায় একচ্ছত্র রাজত্ব করার পরেও সুন্দরবনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বামফ্রন্ট সরকার কোনওদিন ভাবেইনি। বাদাবনের মানুষগুলোকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার কথা কস্মিনকালেও মনে আসেনি তাদের। ঝড়জলের সঙ্গে আপস করে দিন গুজরানে অভ্যস্ত প্রান্তিক মানুষগুলো রাতবিরেতে মীন ধরতে গিয়ে দক্ষিণরায়ের পেটে চালান হয়েছে। বছরের পর বছর। পেটের জ্বালা মেটাতে, পরিবারের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে তাঁরা প্রাণ হাতে করে চলে যান জঙ্গলের গহিনে।

আরও পড়ুন-কিসান সম্মাননিধির টাকা পাননি ১০ লক্ষ কৃষিজীবী, বাংলার কৃষকদের কেন্দ্রের বঞ্চনা

কাঠ কাটতে, মধুর চাক ভাঙতে। কেউ ফেরেন, কেউ ফেরেন না। বনবিবির থানে পুজো দিয়ে নদীর জোয়ার ভেঙে নৌকো বেয়ে জঙ্গলের গা-ঘেঁষে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অগুনতি খাঁড়িতে কাঁকড়া আর মাছ ধরতে যান তাঁরা। বাঘ-কুমিরের মুখে পড়ে বেঘোরে মরেন। নিয়ম একটা আছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে যে সবার ক্ষতিপূরণ জোটে, তা-ও নয়। অধিকাংশেরই বরাতে জোটে না। কারণ, বনদফতরের অনুমতি ছাড়াই তাঁরা জঙ্গলের গভীরে চলে যান। পেটের টানে। বিপদ বাড়ে। গ্রামে-গ্রামে জন্ম নেন বাঘবিধবা। সব জেনেশুনেও কেন এই মৃত্যুর সঙ্গে লুকোচুরি! কারণ, এই মানুষগুলোর বিকল্প কোনও উপার্জনের পথ খোলা নেই। বাবা-মা-বউ-ছেলেমেয়ে মিলিয়ে এতগুলো পেট চলবে কী করে! অগত্যা ঘরের বউ-ঝিয়েরাও নৌকো নিয়ে নেমে পড়েন মীন ধরতে। কতবার যে বাঘের মুখ থেকে তাঁরা অসম সাহসে নিজেদের স্বামীকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন, সে-সব অবিশ্বাস্য সত্যকাহিনিরও শেষ নেই। লড়াইয়ের অন্য নামই হয়ে উঠেছে, সুন্দরবন। (চলবে)

Latest article