শিল্পী সিংহরায়, ফিলাডেলফিয়া
‘ঘরোয়া বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’ নামে আমাদের একটি সংগঠন রয়েছে ফিলাডেলফিয়ায়।অতিমারির জন্য গত বছর থেকে সবাই ঘর বন্দি। ১৮ মাস কমিউনিটিতে কেউ কারও মুখ দেখিনি। আর এই দুর্গাপুজো আমাদের কাছে ‘মহাযজ্ঞ’। তবে এই করোনাকালে কীভাবে ব্যবস্থা করা যাবে তা নিয়ে একটা চিন্তা ছিল। কিন্তু যখন স্কুল পাওয়া গেল, বুঝলাম পুজো হচ্ছে। তবে দু দিনের জায়গায় এবার একদিন।
অবশেসে মহাযজ্ঞের জায়গা পাওয়া গেল ঠিকই, কিন্তু এক দিন। সাধারণত ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী শনিবার হয়। আর সন্ধিপুজো, নবমী, কুমারী পুজো, দশমী পুজো হয় রোববার।
প্রতি পুজোর শেষে অঞ্জলি, ভোগ খাওয়া. সন্ধিপুজো ১০৮ প্রদীপ (টি লাইট ক্যান্ডলে) জ্বালানো- কিছুই বাদ পড়ে না। নিয়ম মেনে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ‘মা’ এর পুজো যথাসম্ভব নিখুঁত ভাবেই করার চেষ্টা করা হয়।
আরও পড়ুন-১০০ নারকেলের নাড়ুতে পাক দিয়ে এই রাজ্যে সূচনা দুর্গোৎসবের
কী আর করা যাবে, একদিনেই সবটা শেষ করতে হল। আমাদের পুজো শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। একদিনেই বোধন থেকে বিসর্জন। শুক্রবার কমিটির লোকজন ছুটোছুটি স্কুল বাড়িটা সুন্দর করে সাজিয়ে কলকাতার একটা ছোট্ট প্যান্ডেল বানিয়ে ফেলেছে। কেউ কাজ করে IT তে, কেউ একাউন্ট-এ, কেউ বিজ্ঞানী-গবেষক, তো কেউ ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিতে বা কেউ ডাক্তার। কমিটি মেম্বার রা হাতে হাত লাগিয়ে মণ্ডপ গড়া থেকে ঠাকুর আনা, স্কুল সাজানো শুরু করে দেন শুক্রবার থেকেই।
ওদিকে চলে ভোগ রান্না। কেউ পুজোর খিচুড়ি তো কেউ পাঁচ ভাজা। কেউ চাটনি তো কেউ নৈবিদ্যর সন্দেশ বানাতে ব্যস্ত। কেউ গাঁথে যাচ্ছে ঠাকুরের মালা। আমার ভাগে পড়েছিল পুজোর ভোগের চাটনির দায়িত্ব।
আরও পড়ুন-পঞ্চমীতে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বলে রাখি, দেশের মতো আমরা প্রতিমা বিসর্জন দিই না। আমাদের মা দুর্গা মৃন্ময়ী মা নন, ফাইবার দিয়ে গড়া। তাই প্রতিবছর পুজোর শেষে, আবার বাক্স বন্দি করে রেখে আসা হয় কোনো এক পাবলিক স্টোরেজে। বা কোনো ভারতীয় মন্দিরে।
সারা সপ্তাহ ধরে অফিসের ফর্মাল প্যান্ট-শার্টে হাঁপিয়ে ওঠে বাঙালি। তাই পুজো মানে ষোলোআনা বাঙালিয়ানা। ধুতি-পাঞ্জাবিতে সেজে ওঠেন ছেলেরা। আর যত্ন করে তুলে রাখা শাঁখা, পলা , সিঁদুর আর গয়নার বাক্স বারকরে সেগুলো শাড়ির সাথে পরে সেজে ওঠেন মেয়েরা।
আরও পড়ুন-দলবদলু রাজীব প্রসঙ্গে চারমূর্তি “KDSA”-কে তুলোধনা তথাগতর
খাওয়াদাওয়া বাদ দিয়ে বাঙালি কি আর বাঙালি? তাই সকালের চা জলখাবার থেকে শুরু করে , দুপুরের নিরামিষী ভোগ প্রসাদ , বিকেলের ঝালমুড়ি, চপ, বেগুনি আর রাতের জম্পেশ ভুরিভোজ। ভাত, ডাল, আলু ভাজা থেকে শুরু করে মাছ. মাংস, চিঙড়ি মাছের মালাইকারি, ধোকার ডালনা, শেষ পাতে চাটনি, পাঁপড়, রসগোল্লা কিছুই বাদ যায় না।
সবটাই হল। শুধু বাদ দিতে হল মণ্ডপে কালচারাল প্রোগ্রাম। সাধারণত কলকাতা বা মুম্বই-এর খ্যাতনামা কোনও শিল্পীকে নিয়ে আসা হয় সংগীতানুষ্ঠানের জন্য। কিন্তু এই অতিমারিতে ওটি সম্ভব হয়নি। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো হয়েছে ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সারাদিনের উৎসব শেষে বাড়ি ফিরে আবার এক বছরের প্রতীক্ষা। কিন্তু সেই অপেক্ষার জন্য অক্সিজেন পাওয়া গেল প্রবাসের একদিনের দুর্গাপুজোতেই।