অনির্বাণ কর্মকার, দুর্গাপুর: পিতৃপক্ষের অন্তিমক্ষণে একদিনের জন্য বাড়ি আসেন উমা। পুজো (Durgapur-Durga puja) নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাড়ি দেন কৈলাসে। আসানসোলে হিরাপুরের ধেনুয়া গ্রাম একদিনের এই দুর্গাপুজোয় মহালয়ার দিনই পুজো নেন মহামায়া। কুমারীরূপে পুজো করা হয় দেবীকে। একদিনের পুজো শেষে হয় নিরঞ্জন। এখানে দেবী দুই সখী জয়া-বিজয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন পার্বতী। এতে পার্বতীকে ছেড়ে থাকার বিরহ হয়ত কমে মহাদেবের, তবে মনঃকষ্ট ভোগেন গ্রামের মানুষ। সকলেই চেষ্টা করেন একদিনের পুজোয় চারটে দিনকে এক সঙ্গে উপভোগ করতে। তবে মাতৃপক্ষের সূচনাতেই দেবীর বিদায় কাঁদায় ধেনুয়া গ্রামের মানুষকে। গত ৪৬ বছর ধরে এভাবেই দুর্গাপুজো (Durgapur-Durga puja) হয়ে আসছে ধেনুয়ায়। ১৯৭৩ সালে পুজো শুরু করেন সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী। যদিও তিনি একদিনের এই পুজো করতেন মায়ের সিংহবাহিনী রূপেই। সে সময় কালীকৃষ্ণ সেবাশ্রমের উদ্যোগে পুজো শুরু হয়। যদিও শুরুর তিন বছর পর অজ্ঞাত কারণে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরে ৭৭ সালে অসম থেকে তেজানন্দ ব্রহ্মচারী এসে ফের মহামায়ার কুমারীরূপের আরাধনা শুরু করেন। তেজানন্দর চালু নিয়মেই আজও ধেনুয়া গ্রামের একদিনের দুর্গাপুজো চলছে। তবে ২০০৩ থেকে পুজোর পরিচালন ভার গৌরী কেদারনাথ মন্দির কমিটির। এই পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। যুগল মন্ত্র জানা কোনও পুরোহিত পুজো করেন। পশুবলি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শান্তিপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই হয় পুজো। জয়া-বিজয়ার সঙ্গে দুর্গামূর্তি সচরাচর দেখা যায় না বাংলায়। তবে এই ধরনের মূর্তির পুজো প্রচলিত আছে বাংলাদেশে। অনেকের ধারণা, অসমের বাসিন্দা তেজানন্দ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল বাংলাদেশের। সেই কারণেই এই বাংলার একটি গ্রামে অসুরমর্দিনী রূপে পুজো না করে কুমারী মহামায়ার মূর্তি পুজোর জন্য বেছে নেন তিনি। আগে ধেনুয়ার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ২১ জন কুমারী মেয়ে পুজোর আয়োজন করত। সেই নিয়মে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে পুরনো প্রথা মেনে একদিনের দুর্গাপুজো আজও অটুট।