সৌমালি বন্দ্যোপাধ্যায়: ৪২৭ বছর ধরে এখানে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023) হয় তন্ত্রমতে। আমতার গাজিপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর এটাই বৈশিষ্ট্য। ১০ পুরুষ ধরে চলছে সেই ট্র্যাডিশন। পুকুরে ঘট ভেসে ওঠা নিয়ে এখানকার মানুষের মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত বিশ্বাস। এখনও এই বাড়ির পুজোয় ছাগ বলি হয়। সপ্তমীতে ১টি, সন্ধিপুজোয় ২টি ও নবমীতে ৩টি মিলিয়ে মোট ৬টি ছাগবলি হয় পশ্চিম গাজিপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয়।
জমিদার গুপীরমন চট্টোপাধ্যায় আমতার গাজিপুরে এই পুজোর (Durga Puja 2023) সূচনা করেন। তারপর ১০ পুরুষ ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে একই নিয়ম ও রীতিতে হয়ে চলেছে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির এই পুজো। একচালার সনাতনী মূর্তি। প্রতিবারই নতুন কাঠামোয় প্রতিমা তৈরি হয়। আমতারই থলিয়া গ্রামের কুমোর পরিবারের সদস্যরা বংশানুক্রমিকভাবে প্রতিমা তৈরি করছেন। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গা দালানেই হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। ঢাকি, কামার এবং পুরোহিতও বংশানুক্রমিকভাবে চলছে। মায়ের ভোগ রান্না করেন পরিবারের স্ত্রীরা। বাড়ির মেয়েরা ভোগ রান্না করতে পারেন না। পঞ্জিকার সময় ধরে গ্রামেরই একটি পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়। সেই পুকুরে জন্মাষ্টমী থেকে মহালয়ার মাঝে পুজোর একটি ঘট ভেসে ওঠে। এবছর কৌশিকী অমাবস্যার দিন সেই ঘট ভেসে উঠেছিল। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দু-তিন দিন পরে সেই ঘট নিজে থেকেই মিলিয়ে যায়। ওই ঘট কোনও বছর ভাসতে না দেখা গেলে সেই বছর পরিবারে কোনও অমঙ্গল ঘটে বলে বাড়ির লোকেদের বিশ্বাস।
পরিবারের অন্যতম সদস্য সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলে বর্ধমনের বাকনপাড়া গ্রামে আমাদের পরিবারের পুজো শুরু হয়েছিল। তারপর আমাদের পূর্বপুরুষরা উদয়নারায়ণপুরের দেবীপুরে চলে আসেন। সেখানে পুজো হত। এরপর জমিদারির কারণে আমতার পশ্চিম গাজিপুরে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। সেখানে ৪২৭ বছর আগে গুপীরমন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুরু হওয়া পুজো আজও একইভাবে হয়ে চলেছে। গুপীরমন চট্টোপাধ্যায়ের আগে পুজোর তথ্য সম্বলিত ইতিহাসের পুঁথি অবশ্য ১৯৭৮ সালের বন্যায় ভেসে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- ভূমিকম্প বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মৃত্যু ছাড়ালো ৪০০০!